জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:২৮
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির অহংকার আর গৌরবে গাঁথা আজকের এই দিন।টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। তাই তো বাঙালি জাতি আজ ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের। আজ শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে গেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেদি। আজ যেন সকল ফুল ফুটেছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের শ্রদ্ধায় সিক্ত করতে।


২৬ মার্চ রবিবার ভোর ৫টা ৫৬ মিনিটে দিনের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান। এরপর দলে দলে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে প্রবেশ করতে থাকেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয় বীর শহীদরা। ধীরে ধীরে শ্রদ্ধার ফুলে ভরে যেতে থাকে শহীদ বেদি।


শ্রদ্ধা জানাতে আসা আকরাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা রাতেই শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের অপেক্ষায় ছিলাম। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রবেশ করেছি। ৩০ মিনিটের মধ্যেই শ্রদ্ধার ফুলে ভরে যায় বেদি। এ যেন শহীদদের প্রতি জাতির আজন্ম ভালোবাসা। বেদি ভরা শ্রদ্ধার ফুল দেখে হৃদয় যেন ভরে গেল। এ যেন জাতির চিরকৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।


সূর্যসন্তানদের টানে দেশের উত্তরের জেলা রংপুর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছেন আল-মামুন নামের যুবক। তিনি বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ছাড়াও দেশের সব স্থানে নানা আয়োজনে এই দিবস পালন করা হয়। আমি এত কাছ থেকে বীর শহীদদের কখনো শ্রদ্ধা জানাতে পারিনি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের দূর থেকে শ্রদ্ধা জানানো আমার কাছে কমতি মনে হচ্ছিল। তাই সরাসরি জাতীয় স্মৃতিসৌধে চলে এসেছি। আজকের দিনটি আমার জীবনের স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।



গার্মেন্টসকর্মী সাজেদা বলেন, আমরা সারা দিন কারখানায় কাজে থাকি। আজ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আমাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই কয়েকজন সহকর্মী মিলে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এসে দেখি ফুলে ভরা শহীদ বেদি। এত অল্প সময়ে শ্রদ্ধার ফুলে বেদি ভরে গেছে। আরও প্রায় লাখো মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন। আজ ফুলই ফুটেছে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।


বীর মুক্তিযোদ্ধা সফের আলী বলেন, আমি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। আমাদের যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তা সর্বোচ্চ। আজ আমার শহীদ ভাইদের যেভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে তা দেখে আমার মন আনন্দে ভরে গেছে। আমি বেঁচে আছি তাই উপলব্ধি করতে পারছি। যারা জীবন দিয়েছেন তাদের হয়ে আমি জাতির কাছে যেন সর্বোচ্চটা পেয়েছি। এই শ্রদ্ধা, এই মর্যাদায় আমি আবেগে আপ্লুত। আমি চাই শহীদদের আজকের দিনের মতো যেন প্রতিদিন জাতি স্মরণ করে। আমরা স্বাধীনতা উপহার দিয়েছি। এই স্বাধীনতা রক্ষা করা জাতি তথা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সকল শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আমার এটাই চাওয়া।


জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করার পর দলে দলে শ্রদ্ধার ফুল নিয়ে মানুষ সৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে। শ্রদ্ধার ফুলে ধীরে ধীরে বেদি ভরে যাচ্ছে। শ্রদ্ধা নিবেদনে সুবিধার্থে বেদি থেকে ফুল অপসারণ করা হচ্ছে।


এদিকে স্বাধীনতার এই ক্ষণে জাতীয় স্মৃতিসৌধের চারপাশে ছিল আনন্দঘন পরিবেশ। সকাল থেকেই ফেরিওয়ালা ও হকাররা তাদের স্থান দখল করে নিয়েছে। অনেকে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করছেন। কেউবা গালে পতাকা ও স্বাধীনতার প্রতীকী চিহ্ন এঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সৌধ প্রাঙ্গণে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com