ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত শহিদ মিনার
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৪২
ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত শহিদ মিনার
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ এ গানটি শুনলে মনে পড়ে যায় ভাষা শহিদদের কথা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন ভাষা শহিদরা। তাদের রক্তের বিনিময়ে এসেছে মাতৃভাষা বাংলা। তাই ভাষা শহিদদের স্মৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহিপ্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার।


প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আসলে এ শহিদ মিনারে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে। এবারও এসে গেছে ভাষা শহিদদের রক্তে রঞ্জিত মহান দিবসটি। সোমবার রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে শুরু অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইতোমধ্যে এ দিবসকে ঘিরে শহিদ মিনারের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার।



সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। ভাষা শহিদদের স্মৃতিতে নির্মিত এ শহিদ মিনার এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে। পুরো শহিদ মিনার এলাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। মিনারের মূল বেদীসহ বিভিন্নস্থানে আঁকা হয়েছে আলপনা। শহিদ মিনারের পেছনে শহিদদের রক্তের স্মৃতি বহন করা লাল বৃত্তও বসানো হয়েছে। মিনারের আশপাশের দেয়ালে বর্ণমালার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা শহিদদের কথা। এসব দেয়ালে ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক বিভিন্ন মনীষীদের বাণীও রয়েছে।


সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা গেছে, এ দিবসকে কেন্দ্র করে শহিদ মিনার এলাকাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ এলাকায় টহলরত রয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তাদের কন্ট্রোল রুম। মিনারের আশপাশে জরুরি প্রয়োজনের জন্য রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি।



আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাহিরে এ এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসিসি, রোভারসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবেন বলে জানা যায়। মিনার এলাকায় প্রবেশের সময় আগতদের তল্লাশি করা হচ্ছে। জনসাধারণের চলাচলের স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় রুট ম্যাপ স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তায় বাড়তি নজরদারিতে র‌্যাবের সাথে রাখা হয়েছে ডগ স্কোয়াড।



শহিদ মিনার এলাকায় প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এক পুলিশ সদস্যের। মুক্তার হোসেন নামের এ পুলিশ সদস্য বিবার্তাকে বলেন, একুশের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ এদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।



ঢাবি সূত্রে জানা যায়, এদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদীতে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি,  মন্ত্রীবর্গ, ডেপুটি স্পিকার ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।



এরপর পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন তিন বাহিনীর প্রধান, ভাষা সৈনিকবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সম্মানিত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিনবৃন্দ ও হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ। এরপর সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের জন্য শহিদ মিনার উন্মুক্ত থাকবে।


কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বিবার্তাকে বলেন, কোভিডের পর এবার আমরা পুরোপুরি উন্মুক্তভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি। এবার অমর একুশে উদযাপনে আমি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছি। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ টি কমিটি গঠন করেছি। প্রত্যেকটি কমিটির আলাদা আলাদা দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কারো শৃঙ্খলার দায়িত্ব, কারো পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব, আবার কারো আলোকশয্যাসহ নানা দায়িত্ব নানাভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। 


তিনি বলেন,আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আর ইতোমধ্যে আমরা মন্ত্রণালয়েও মিটিং করেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে। রাত ১২ টা ১ মিনিটে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। আমরা তাদের রিসিভ করবো। এরপর পর্যায়ক্রমে স্পীকার, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আমাদের শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একুশের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও প্রতিবাদের মতো সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আমরা আশা করবো সুন্দরভাবে যেন অমর একুশে উদযাপন হয় এবং সেই বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। 


শহিদ মিনারের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বিবার্তাকে বলেন, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর উদযাপিত হবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ২০ তারিখটি আমাদের সকল প্রস্তুতির শেষ পর্ব। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি হয়ে গেছে। তবে শেষ পর্যায়ের কাজগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। আশা করছি অন্যান্য বছরের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের কানুন -প্রীতিকে অক্ষুণ্ণ রেখে দিবসটি উদযাপন করতে পারবো। রাত ১২ টা ১ মিনিটে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতির ভেতর দিয়ে এই অনুষ্ঠানটি শুরু হবে। আমরা এই ব্যাপারে আশাবাদী। 


তিনি বলেন, প্রথম পর্বটি শেষ হওয়ার পরে আমাদের যে আরেকটি পর্ব থাকে, সেটি শুরু করবো। সেক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা আশা করছি। এবার অমর একুশে উদযাপন নিয়ে আমাদের ভাবনা হচ্ছে, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার সাথে দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা।



এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- ২০২৩ উদযাপনের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেছেন।


১৯ ফেব্রুয়ারি, রবিবার অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই সহযোগিতা চান।


উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদীমূল প্রস্তুত করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং যথাসময়েই তা সম্পন্ন হবে। এবছর প্রতিটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। সুষ্ঠুভাবে দিবসটি উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য উপাচার্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com