ছয় বছরে সবচেয়ে কম বিক্রির বইমেলা
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৭
ছয় বছরে সবচেয়ে কম বিক্রির বইমেলা
সানজিদা আক্তার
প্রিন্ট অ-অ+

গত ছয় বছরে সবচেয়ে কম বই বিক্রির রেকর্ড হলো ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায়। যদিও এবার গত বছরের তুলনায় বই প্রকাশিত হয়েছে বেশি।


করোনাপরবর্তী সময় প্রকাশকদের প্রত্যাশা ছিলো আকাশচুম্বী। তবে তারা কম বিক্রির শঙ্কাও উড়িয়ে দেননি। অনেক প্রকাশক এমন বিক্রিতে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ ঝেড়েছেন বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের প্রতি। কারণ ভাড়া কমানোর ব্যাপারে বাংলা একাডেমি কোন কর্ণপাত করেনি।


অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ সালে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ২০২২ সালে করোনা থাকাকালীন সময়েও মেলায় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ কোটির টাকার কম।


ঘোষণা মঞ্চের তথ্য অনুযায়ী মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৭৫০টি, যা গতবছর ছিল ৩৪১৬টি। এক্ষেত্রে অনেক প্রকাশক তাদের নতুন বইয়ের নাম না দেয়ায় কিছুটা এদিক সেদিক হতে পারে।


গত ২০২১ সালের বইমেলাটি করোনাকালীন সময় হওয়াতে প্রতিবেদনে ওই বছরের বইমেলাকে হিসেবের বাইরে রেখেই তুলনা করা হয়েছে।


বাংলা একাডেমির তথ্যানুসারে, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ৭০ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ৮০ কোটি টাকা, ২০২০ সালে ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল।


অন্যদিকে ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমি বই বিক্রি করেছে ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার মতো। যেখানে ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল। ২০২১ সালে মাত্র ৪৬ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। তবে ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল।


বইমেলার সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন,২০২২ সালের বইমেলায় একত্রিশ দিনে বাংলা একাডেমি বই বিক্রি করেছিল মোট ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকার। আর এইবার ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি বই বিক্রি করেছে ১ কোটি ২৪ লক্ষ টাকার। এদিকে ২০২২ সালের সমগ্র বইমেলায় সর্বমোট বই বিক্রি হয় ৫২ কোটি টাকার। কিন্তু এইবার ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।


চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় এবারের বইমেলায় কাটতি কম হবে বলে আগেই আশঙ্কা করছিল প্রকাশক, লেখক ও পাঠকসহ বইপ্রেমী সংশ্লিষ্ট মহল। দেশে গত এক যুগে যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেই হারে সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি- যদিও আয় বেড়েছে।


লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের মহামিলন ঘটে অমর একুশে বইমেলায়। গত দুই বছর করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যে অমর একুশে বইমেলা হয়েছে। ওই দুইবছর চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল প্রকাশকরা।


ডলার সংকট ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট পরিমাণে কাগজের কাঁচামাল কিনতে পারেনি। ফলে কাগজের দামও বেড়েছে। তাছাড়া প্রিন্টি, বাইন্ডিং ও প্যাকেজিং খরচও বেড়েছে। যার জন্য সব মিলিয়ে বইয়ের দামও বেড়েছে অন্য বছরের তুলনায়।


কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বইয়ের দাম ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। করোনা মহামারির কারণে ২০২১-২০২২ সালে অমর একুশে বইমেলায় আশানুরূপ বই বিক্রি হয়নি বলে জানান প্রকাশকরা। প্রকাশনা শিল্পের মালামালের ঊর্ধ্বগতি প্রকাশকদের আবার দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে টানা দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই।


খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মুদ্রণ খরচ অনেক বেড়েছে। সাধারণত ৮০ গ্রাম ডাবল ডিমাই অফসেট কাগজে বই ছাপা হয়। গত বছর এর দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা রিম, এ বছর তা ৩ হাজার ৭০০ টাকা। ১০০ গ্রাম কাগজের দাম ছিল ২৬০০ টাকা, বর্তমানে ৪৫০০ টাকা।


বইমেলায় সারা বছরের ২৫ শতাংশ বই বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। প্রত্যেক প্রকাশকই বইমেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। কারণ বইমেলায়ই সর্বাধিক বই প্রকাশিত হয়।


এবারের বইমেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুদের জন্য আলাদা করে স্পেস দিয়ে নান্দনিকভাবে শিশু চত্বর সাজানো হয়েছে।


বিবার্তা/সানজিদা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com