ক্ষতিকর চিন্তাগুলিকে ইতিবাচক করার উপায়
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪৯
ক্ষতিকর চিন্তাগুলিকে ইতিবাচক করার উপায়
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সংসার, কর্মজীবন, সম্পর্কের ঘেরাটোপে থেকে মনে উদ্বেগ আসাটা খুবই স্বাভাবিক। দুশ্চিন্তার মেঘ কখন যে মনের স্বতঃস্ফূর্ততাকে ভেঙে তছনছ করে দেয়, তা টেরই পাওয়া যায় না। জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট মুহূর্তকে গভীর ভাবে বোঝা, জানা বা দেখার ইচ্ছাটাই চলে যায় এক সময়। তখন খারাপ চিন্তাগুলিই মনের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে নেয় ধীরে ধীরে।


নেতিবাচক চিন্তা কিন্তু একদিনে আসে না। তিলে তিলে এর বীজ রোপিত হয় মনের অন্তরালে। একদিন তারাই ডালপালা মেলে চরম উৎকণ্ঠা ও অবসাদের কারণ হয়ে ওঠে। কী ভাবে খারাপ চিন্তাগুলিকে ইতিবাচক ভাবনায় বদলে দেওয়া যাবে, তার সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকায় মনে মনে গুমড়ে থাকেন অনেকেই। মুখে হাসির ছোঁয়াটুকু রেখে ভাবেন, তাঁরা ভাল আছেন। অন্তত দুনিয়া তো দেখছে তাঁর হাসিমুখ। আসলে তা কিন্তু নয়। ওটা মুখোশ মাত্র


নেতিবাচক চিন্তাকে যদি দূরে রাখতে হয়, তা হলে আগে জানতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনার পথ নেতিবাচক হয়ে ওঠে কেন?


মনোসমাজকর্মীদের মতে, “মানুষের চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক ত্রুটি থেকে যায়। মনের মধ্যে বিভিন্ন রকম বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণা থাকে যা নেতিবাচক চিন্তা করতে বাধ্য করায়। এই ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয় অনেক কারণে। কে কেমন পরিবেশে বড় হচ্ছে, আত্মীয়-পরিজন বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ কেমন, তার উপরেও অনেকটাই নির্ভর করে মানসিক গঠন। তাই যিনি যা ভাবছেন ও বিশ্বাস করছেন, তা সঠিক না ভুল, সেটি আগে শুধরে দেওয়া দরকার।”


কীভাবে?


ছোট থেকেই ছেলেদের বোঝানো হয়, তাঁদের কাঁদতে নেই। এই ভাবনা থেকেই অনেক ছেলে তাঁদের মানসিক চাপ, অবসাদ ও নেতিবাচক চিন্তার কারণগুলিকে সামনে আনেন না। আবার এমনও দেখা গিয়েছে, এখনকার সময়ে দাঁড়িয়েও অনেক ছেলেই মনে করেন যে, ছেলেদের রান্না করতে নেই বা বাড়ির কাজ করতে নেই। এই ধরনের ভাবনা তাঁদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। সঙ্গীর সঙ্গে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয় যা থেকে মনে খারাপ চিন্তার উদ্রেক করে। কাজেই কিছু ভুল শেখা, জানা বা ভুল দেখা— নেতিবাচক চিন্তার অন্যতম কারণ।


ভ্রান্ত ধারণা কিন্তু আবেগ, অনুভূতিকেও প্রভাবিত করে। যেমন, কেউ হয়তো ভাবছেন পেশার জায়গায় বা সংসারে কেউ তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন অথবা আড়ালে তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। এই ভাবনার হয়তো বাস্তবে কোনও ভিত্তিই নেই, অথচ তিনি এই ভাবনাকেই দিন দিন পুষে রাখছেন এবং বিষণ্ণ ও হতাশ হয়ে পড়ছেন। অন্যের প্রতি আচরণ ও ব্যবহারেও তার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলি খারাপ হয়ে যাচ্ছে।


এই যে ত্রুটিযুক্ত চিন্তা, নিজের মনেই ভ্রান্ত ধারণা পুষে রাখার অভ্যাসকে তাড়াতে গেলে বিশেষ থেরাপির মধ্যে দিয়ে যেতেই হয়। তাতে এই ভুল চিন্তার ধরন ভাঙানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁর কোন কোন চিন্তা ও বিশ্বাসে ত্রুটি রয়েছে, তা চিহ্নিত করে তবেই তাঁকে ইতিবাচক ভাবনার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।"


নিজেরাও চেষ্টা করলে এই নেতিবাচক ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তার জন্য সবসময় ভাবতে হবে ভালমন্দ, হাসিকান্না, ওঠাপড়া নিয়েই জীবন। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগও সেই জীবনের অঙ্গ। অনুভূতিরও ভাল বা খারাপ আছে। তাই অতীতে যদি কোনও খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বা বর্তমানে মানসিক দিক থেকে কোনও আঘাত আসে, তা কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হবে না। খারাপ অনুভূতি থেকে জোর করে পালানোর চেষ্টা না করে জীবনে যা আসছে, আসতে দিন।


দুঃখের স্মৃতি মনে আসবে, আবার চলেও যাবে। বরং বর্তমানে যাঁরা পাশে আছেন তাঁদের সঙ্গে ছোট ছোট মুহূর্ত কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। তা হলেই ভাল অনুভূতি নতুন করে তৈরি হবে। খারাপ স্মৃতিগুলি ফিকে হয়ে আসবে। সবসময় মনে রাখতে হবে একটাই আপ্তবাক্য—জীবন আসলে একটি বহতা নদীর মতো। সেখানে ভাল-খারাপ কোনওটাই স্থায়ী নয়, কখনও। আজ যদি খারাপ সময় যায়, সে চলে যাবে। তেমনই ভাল সময়ও বরাবর টিকবে না।


অতিরিক্ত প্রত্যাশাও নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দেয়। কাছের মানুষের থেকে আশা সবসময়েই প্রত্যাশিত। কিন্তু যা প্রত্যাশা করছেন সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত ভাবা দরকার। আর প্রত্যাশার পিছনে ছুটতে গিয়ে শুধু মনে নয়, ধকল শরীরেও হয়; যা পরবর্তী সময়ে হতাশার কারণ হয়ে ওঠে।


প্রতি দিন সকালে প্রাণায়ম, ধ্যান করা শরীরের জন্য যতটা ভাল, ততটা মনের জন্যও। ধ্যান করা সহজ নয়। চোখ বন্ধ করলেই হাজার চিন্তা এসে ভিড় করবে। তবু চেষ্টা করতে হবে, প্রথমে ৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে থাকার। এ ভাবে ধীরে ধীরে সেই সময় বাড়িয়ে ১০ মিনিট করতে হবে। চেষ্টা করলেই একটা সময় আসবে যখন দেখবেন, মন শান্ত, ধীরস্থির হয়ে যাচ্ছে।


কে কী বলছে, সেই কথা কতটা সত্য ও যুক্তিযুক্ত তা বিচার করে নেওয়া জরুরি। অন্যের কথায় অন্ধভাবে পথ চললে লাভের থেকে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আপনি কখনওই অন্যের সব চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না। তাই নেতিবাচক কথায় কান না দেওয়াই ভালো। নিজেকে ভালবাসতে শেখা দরকার। সংসার, পেশা সামলেও নিজের জন্য সময় রাখুন। সেই সময়টা শুধু আপনার জন্যই বরাদ্দ থাক। নিজের পছন্দের কাজ করুন।


সে জন্য ‘মাইন্ডফুল মেডিটেশন’ খুব দরকার। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এই প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক চিন্তা দূর করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খুবই প্রাচীন ও কার্যকরী এই পদ্ধতি। ‘মাইন্ডফুল মেডিটেশন’- চোখ বন্ধ করে ধ্যান নয়, চোখ খুলেই মনোঃসংযোগ করা। হাঁটতে চলতে, ঘরের কাজ করতে করতে, যে কোনও অবস্থায় ও পরিস্থিতিতেই করা যায়। ধরুন, চা খাচ্ছেন। সেই সময়ে অন্য চিন্তাভাবনা সরিয়ে দিন। কেবল চায়ে মনোযোগ দিন। ভাবুন তো, গরম চায়ের স্বাদ কী দারুণ, তার রং-গন্ধ-স্বাদ কতটা স্বস্তি দিচ্ছে আপনাকে। প্রাণ ভরে ঘ্রাণ নিন, চায়ের উষ্ণতা অনুভব করুন। চায়ের স্বাদ যদি পুরোপুরি অনুভব করতে পারেন, তা হলে চা পানের মানেটাই বদলে যায়।


মন পেন্ডুলামের মতো। অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে চলাচল করে। মন যখন অতীতের স্মৃতিতে যায়, তখন ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনায় দুঃখ পায়। আবার সুখের স্মৃতিতেও কষ্ট পায় কারণ সেই ঘটনার আর বাস্তবতা নেই। ভবিষ্যৎ ভাবনায় গেলে তখন আশঙ্কা বাড়ে। মনের স্থিতি হয় না। ফলে নেতিবাচক ভাবনার জন্ম হয়। অনেকেই এই বিষয়টিকে নিজেদের জীবনের সঙ্গে মেলাতে পারবেন। তাঁরাও হয়তো অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন। তাই খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর উপায়ই হল ‘মাইন্ডফুল মেডিটেশন’। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত থেকে রূপ-রস-গন্ধ আহরণ করা। এই অভ্যাস যদি নিজে থেকেই গড়ে তুলতে পারেন, তা হলে নেতিবাচক ভাবনা আপরার থেকে শত হস্ত দূরে থাকবে। জটিল সমস্যারও সহজ সমাধান বের করবেন নিজেই।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com