গরমে শসা খাবেন যে কারণে
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:২১
গরমে শসা খাবেন যে কারণে
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সূর্যের দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত। গরমে বাইরে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। সারাদিন পর সূর্য ডুবে গেলেও কমে না গরমের তীব্রতা। বাতাস যেন বাতাস নয়, আগুনের হলকা। এমন গরমে কোনো খাবার খেলেই ঠিকভাবে প্রশান্তি আসছে না যেন। আসলে খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে। এই গরমে তৈলাক্ত বা অতিরিক্ত মসলাদার খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না। এর বদলে খেতে হবে এমন খাবার, যা প্রশান্তি দেয়।


বিশেষজ্ঞরা বলেন, গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। যেসব খাবার পানির ঘাটতি মেটায় এবং শরীর শীতল রাখে, সেগুলো খেতে হবে। এ ধরনের খাবারের তালিকায় শুরুতেই থাকবে শসার নাম। শসায় থাকে পানি, ফাইবার, কার্ব, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন সি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, লিউটিন, জিয়াজ্যানথিন, ভিটামিন কে, বিটা ক্যারোটিন এবং প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি খেলে এনার্জির ঘাটতি পূরণ হয় সেইসঙ্গে পাওয়া যায় শীতল অনুভূতি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই গরমে শসা খাওয়ার উপকারিতা-


১.পানিশূন্যতা দূর করে
রোজায় পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া খুব স্বাভাবিক। তাই প্রতিদিনের ইফতারে পর্যাপ্ত শসা খাবেন। এটি শরীরে পানির ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করবে। এতে সারাদিনের ক্লান্তিভাব অনেকটাই কমে যাবে। শরীর হবে সতেজ ও চনমনে। দূর হবে ত্বকে সৃষ্ট অনেক সমস্যাও।


২.তাপ শোষণ করে
শরীরের ভেতর-বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করলে শসা খেতে পারেন। কারণ এই উত্তাপের কারণে শরীরে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এই জ্বালাভাব দূর করতে পারে শসা। এছাড়াও রোদের কারণে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।


৩.দূষিত পদার্থ দূর করে
শসায় থাকা পানি আমাদের শরীরের ভেতর থেকে দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে। ফলে দূর হয় অনেক রকম অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ভয়। আপনি যদি নিয়মিত শসা খেতে পারেন তবে কিডনিতে পাথর জন্মানোর ভয় থাকবে না। কারও কিডনিতে পাথর সৃষ্ট হলে সেটিও সহজে গলে যাবে।


৪. ভিটামিনের অভাব পূরণ করে
আমাদের শরীরের জন্য যতগুলো ভিটামিন প্রয়োজন তার বেশিরভাগই রয়েছে শসার মধ্যে। এতে থাকা এ, বি ও সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গাজর, সবুজ শাক ও শসার রস মিশিয়ে খেলে নানা ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।


৫. ওজন কমাতে কাজ করে
শসার অধিকাংশই পানি এবং এতে থাকা ক্যালোরির সংখ্যা কম। যে কারণে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে এই সবজি। স্যুপ, সালাদ ইত্যাদিতে শসা খেতে পারেন। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে হজম বেশ ভালো হয়। সেইসঙ্গে দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।


৬. দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
অনেকে রূপচর্চার অংশ হিসেবে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসান। এতে করে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা দূর হওয়ার পাশাপাশি বাড়ে দৃষ্টিশক্তিও। এতে প্রচুর চোখের প্রদাহ প্রতিরোধক উপাদান থাকে, যে কারণে চোখে ছানি পড়ে না।


৭. হাড় মজবুত করে
শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় বোনাস। পর্যাপ্ত খাদ্যতালিকাগত ভিটামিন কে পাওয়া আপনার হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমায় এবং সুস্থ হাড়ের ভর বাড়ায়। হাড়ের খনিজ ঘনত্ব কম হলে, এটি অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শসায় ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের সংমিশ্রণ হাড়ের অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। ভিটামিন কে আপনার শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে, যা শক্তিশালী হাড় তৈরি এবং বজায় রাখার জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি।


৮. অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে
এর মধ্যে থাকা জল স্বাভাবিক ভাবেই হজমে সাহায্য করে। এটি আপনার শরীরকে খাবার ভেঙে দিতে এবং পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে। শসাতে থাকা ফাইবার অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে জিনিসগুলিকে মসৃণভাবে চালাতে থাকে। যাতে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে পারেন। আচার বানানো শসা অন্ত্রের উপকারিতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিছু আচারের প্রোবায়োটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছেন। যখন গাঁজন করা হয়, তখন এগুলিতে ভাল ব্যাকটেরিয়া থাকে যা অন্ত্রে অস্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করা বন্ধ করে।


৯. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
বিশেষ করে যদি কেউ মোটা হয় তাহলে তা টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাড়ায়। শসায় ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি কম। এছাড়াও, শসাতে থাকা জল এবং ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে শসা খাওয়া খুব ভালো।


১০. ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে
শসাতে উচ্চ পরিমাণে Cucurbitacin B (CuB) থাকে। একটি প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভূত উদ্ভিদ যৌগ যা ক্যান্সার কোষে এর প্রভাবের জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করে। গবেষণার একটি সাম্প্রতিক পর্যালোচনা নিশ্চিত করে যে শসা কিউবি লিভার, স্তন, ফুসফুস এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর হতে পারে। এটি কিউবি ক্যান্সারের বৃদ্ধি বন্ধ করতে এবং সম্ভবত ক্যান্সার কোষগুলিকে ধ্বংস করতে সহায়তা করতে পারে। শসার খোসা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এগুলি ফাইবারের একটি ভাল উৎস, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে এবং কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।


১১. হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে
উচ্চ পরিমাণে সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপের দিকে পরিচালিত করে। পটাসিয়াম সোডিয়ামের প্রভাব কমিয়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে শসা। এতে পাওয়া উচ্চ পটাসিয়াম এবং কম সোডিয়াম একত্রিত করা আপনার রক্তচাপের জন্য ভালো। রক্তচাপ কমানো একমাত্র উপায় নয় যে শসা আপনার হৃদয়কে প্রভাবিত করে। শসার মধ্যে থাকা CuB এথেরোস্ক্লেরোসিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে হৃদয়কে রক্ষা করে। ধমনীর দেয়ালে যে চর্বি জমা হয় তা কমায়। আর ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ফাইবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। তাই শসা খাওয়া হার্টের জন্য খুবই জরুরি।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com