অটিজম থেকে কি মুক্তি নেই? জানুন উপায়
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৬
অটিজম থেকে কি মুক্তি নেই? জানুন উপায়
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যার নাম অটিজ়ম। ২ এপ্রিল ‘বিশ্ব অটিজ়ম দিবস’। সংবাদমাধ্যম হোক কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান— নানা জায়গাতেই এই দিনটি পালন করা হয়। সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্রে আয়োজিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মসূচি।


একটা সময় ছিল যখন প্রাথমিক ভাবে বাচ্চার চোখ বা কানের পরীক্ষার কথা বললেই অনেক অভিভাবক তা মানতে পারতেন না। সন্তানের মধ্যে কোনও প্রতিবন্ধকতা আছে, তা মেনে নেওয়া তো পরের কথা। বাচ্চার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ দেখেও অনেকেই মনে করতেন, বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। চারদিকে অটিজ়ম নিয়ে এত প্রচারের ফলে কি ছবিটা আদৌ বদলেছে?


অনেক অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবা শুধু এটুকু জানেন, তাদের সন্তান অন্য আর দশটা শিশুর মতো নয়। তাদের আচরণ সবার থেকে আলাদা ও অস্বাভাবিক। অন্যদিকে স্কুলের শ্রেণীতে, খেলার মাঠেও এরা স্বাভাবিক নয়।


ফলে মা-বাবা ও শিক্ষক উভয়েরই অনুমান এই শিশুর মধ্যে কোনো সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া অটিজমের বেশকিছু বিষয় এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এসব শিশুকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও অসচেতনতার অভাব নেই।


অটিজম সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকলেও উপযুক্ত তথ্য, বই-পুস্তক, গবেষণা এবং তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই বলে সেটিও সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এক্ষেত্রে মা-বাবাসহ জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে সে কাজটি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে বিশ্বাস।


অটিজম কী?
একটি জটিল নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। অটিজম ব্যাপারটা নিয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। আর এই কারণেই অনেক বাবা মা তাঁদের শিশু অটিস্টিক জানলে মনের দুঃখে ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার শুরুতে ধরা পড়লে এবং দ্রুত বাচ্চাটিকে যথাযথ চিকিৎসা দিলে তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা মোটেও অসম্ভব নয়। বরং দেখা গিয়েছে, এদের বুদ্ধি অনেক বেশি। প্রচলিত পড়াশোনার পাশাপাশি এদের কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকে।


অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড খ্যাত ল্যুই ক্যারল, চার্লস ডারউইন, শিশু সাহিত্যিক হ্যান্স অ্যান্ডারসন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, মোৎসার্ট, আর হাল আমলের বিল গেটস, স্টিভ জোবস-সহ অনেক সফল মানুষই অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নিয়েও খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছেন। এমনকি আমাদের আশেপাশেই অনেকে আছেন যারা এই ডিসঅর্ডার নিয়েও দিব্য স্বাভাবিক।


অথচ সচেতনতার অভাবে এই নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার চিনতেই পারেন না অভিভাবকরা। তাই এ রোগ সম্পর্কে আরও বেশি করে প্রচার দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং জরুরি, একেবারে শৈশবেই এ রোগকে চিহ্নিত করা। ২ এপ্রিল Autism Awareness Day। এই দিনটি সকলকে সচেতন হওয়ার ডাক দেয়। আমরা যারা ‘living with Autism’, তারা কিছুটা হলেও এই স্পেকট্রাম সম্পর্কে জানি, কিন্তু অনেক মানুষ এখনও এ বিষয়ে জানেন না। তাঁদের জানানোর জন্যই এই রঙের পোশাক পরে ছবি ইত্যাদি দিয়ে প্রচার।


উপসর্গ
১। অতি-ঘনিষ্ঠ ছাড়া মেলামেশা নয়
২। বয়সের নিরিখে অনেক দেরিতে কথা বলতে শেখা
৩। চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না-পারা
৪। একই কথা বা কাজ বার বার আওড়ে চলা বা করা
৫। কারও শরীরী ভাষা, ইশারা, ইঙ্গিত, মুখের ভঙ্গির মানে না-বোঝা
৬। একঘেয়ে রুটিনে আসক্তি। রগচটা ব্যবহার। রোজনামচা বা পরিবেশের সামান্য পরিবর্তনেই রাগ
৭। বহির্জগৎ সম্পর্কে উদাসীনতা, যন্ত্রণা ও উত্তাপকে গ্রাহ্য না-করা, নির্দিষ্ট শব্দ ও গন্ধ সম্পর্কে অতিসংবেদনশীলতাও এই রোগের উপসর্গ।


অটিজম থেকে কি মুক্তি নেই?


অবশ্যই আছে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, মোৎজার্ট, বিল গেটসের মতো মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয় যাঁরা অটিজমের বাধা টপকেও সফল। তবে প্রয়োজন চিকিৎসার।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। শিশুর জন্মের প্রথম দুই-তিন বছরের মধ্যেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। অটিজম শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দরকার। কারণ, বিশেষ যত্নেই কেবল তাদের মানসিক বৃদ্ধি হয়।


শিশুদের জন্য অভিভাবকেরা যা করতে পারেন:   


** চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া
** কোন বয়সে কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় তা শেখানো
** রুটিন করে দেওয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে সাহায্য করা
** ঘরের ও নিজের ছোট ছোট কাজগুলো করতে শিখিয়ে দেওয়া 
** না সূচক কথা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা
** শিশুদের সামনে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা না বলা
** অ্যানার্জি বার্ন হয় এমন কাজ করানো সেক্ষেত্রে রেগুলার এক্সারসাইজ করানো
** সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক কাজ করানো
** সহজ ও ছোট শব্দ ব্যবহার করে কথা বলা


শিশুর যে কাজগুলোতে আগ্রহ থাকে, সেগুলো করতে সাহায্য করা। যেমন ছবি আঁকতে পছন্দ করে অনেক অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু।  
তবে মনে রাখা জরুরি প্রতিটা শিশু আলাদা হয়। তারাও আমাদেরই সন্তান, তাদেরকে অন্য সন্তানদের মতোই ভালোবাসা ও গুরুত্ব দিন, যত্ন নিন।  


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com