শীতের শুরু থেকে সর্দি-জ্বরে ভুগতে শুরু করেছেন অনেকেই। সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হয়। বহিঃ নাসারন্ধ্র ও অন্তঃ নাসারন্ধ্র যখন কোনও কারণে প্রদাহের শিকার হয়, তখন এখানকার কোষগুলি ফুলে ওঠে। ফলে নাসিকাপথে বায়ু চলাচল কঠিন হয়ে ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় নাক যেন বন্ধ হয়ে আছে। পাশাপাশি, জীবাণুর সংক্রমণের ফলে অনেক সময়ে শ্বাসনালীতে জমে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা। এগুলি নাসারন্ধ্রের ভিতরে জমা হলে বেড়ে যায় সমস্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নাক বন্ধ হওয়া আসলে শরীরের প্রদাহের সঙ্গে জড়িত। অনুনাসিক গহ্বরের একটি আস্তরণ যখন অতিরিক্ত প্রদাহের মাধ্যমে নাসারন্ধ্রতে সমস্যা সৃষ্টি করে। তখনই বায়ু চলাচলের প্যাসেজগুলো সরু হয়ে গিয়ে বায়ুপ্রবাহকে সংকুচিত করে। ফলে নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এমন ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন নাকবন্ধ থাকতে পারে। কোনো গন্ধ পাওয়া যায় না। এতে নাকের ভেতরের জ্বলীয়ভাব ক্রমশ স্ফীত হতে থাকে, ফলে সর্দি ও কফ যুক্ত কাশির সৃষ্টি হতে পারে।
আবার, কোভিডের উপসর্গ আর সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গের মিল এতটাই যে, এক বেলা নাক বন্ধ থাকলেই তৈরি হচ্ছে দুশ্চিন্তা। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, কেবল কোভিড নয়, বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর আক্রমণে একই অবস্থা হতে পারে নাকের। তাই প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা। শীতকালে এই সমস্যা আরও বাড়ে।
নাক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ আছে, যেমন-
১. ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাল ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণ
২. সাধারণ সর্দি
৩. সাইনোসাইটিস
৪. অ্যালার্জি
৫. হাঁপানি
৬. নাকের পলিপ ইত্যাদি।
যে নিয়ম মেনে চললে চটজলদি খুলবে বন্ধ নাক
১) রসুন: এক কাপ জলে দু’-তিন কোয়া রসুন ফুটিয়ে নিন। এর সঙ্গে মেশান আধ চামচ হলুদ গুঁড়ো। এই জল খেলে নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
২) অ্যাপল সাইডার ভিনিগার: এক কাপ গরম জলে দু’টেবিল চামচ ভিনিগার ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেলে মিউকাস পরিষ্কার হবে। দিনে দুই থেকে তিন বার খান। সর্দি সম্পূর্ণ কমে যাবে।
৩) ভাপ নেওয়া: ফুটন্ত জলের মধ্যে জোয়ান গুঁড়ো মিশিয়ে সেই জলের শ্বাস নিন। এতে বন্ধ নাক খুলে যাবে, মাথাও হালকা লাগবে।
৪) নুন জল: দু’কাপ গরম জলে এক চা চামচ নুন মিশিয়ে নিন। এই জল নাক দিয়ে টানতে থাকুন। নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৫) গোলমরিচ: বন্ধ নাক খুলতে গোলমরিচ বেশ উপকারী। হাতের তালুতে অল্প একটু গোলমরিচ গুঁড়ো নিয়ে সামান্য সর্ষের তেল দিন। আঙুলে লাগিয়ে নাকের কাছে ধরুন। হাঁচি হবে। সেই সঙ্গেই নাক একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
সতর্কতা
১। রাতে বা ভোরে বের হলে কান-মাথা-গলা ঢেকে বের হওয়া উচিত। শীত কমাতে পায়ে মোজা পরা ভালো।
২। শীতে ধুলা থেকে অ্যালার্জি বাড়ে। তাই রাস্তায় বের হলে মাস্ক পরা ভালো।
৩। অ্যালার্জি থাকলে এর নির্দিষ্ট কারণ জেনে নিতে হবে; যাতে সতর্ক হয়ে সেই উপাদান এড়িয়ে চলা যায়।
৪। ধূমায়িত ও দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।
৫। ঘুমানোর সময় মাথা উঁচু রাখতে হবে; যাতে সাইনাস নিজে থেকেই পরিষ্কার হতে পারে।
৬। দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা পানি না ঘাঁটা উচিত।
৭। মশার কয়েলের ধোঁয়াসহ যেকোনো ধরনের ধোঁয়া ও স্প্রে থেকে দূরে থাকুন।
এছাড়াও করণীয়
সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা হলো, ভাপ নিয়ে নাক পরিষ্কার করা। দিনে অন্তত দুবার গরম পানির ভেপার (বাষ্প) নিতে হবে। গরম পানিতে মেনথলের দানা মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে ভেপার বা ইনহেলেশন নাক দিয়ে টেনে নিন। এতে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস নাক থেকে সহজেই দূর হবে।
এ অসুখে সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন–জাতীয় ওষুধ খুব কার্যকর ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে বাজারে চলতি নাকের ড্রপে সাময়িক আরাম মিললেও দীর্ঘদিন ব্যবহারে ঘ্রাণশক্তি কমে যেতে পারে।
সমস্যা বাড়লে নাক-কান-গলা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]