শিরোনাম
পাবনার ঘিয়ের ভক্ত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২০, ১৫:১৯
পাবনার ঘিয়ের ভক্ত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শুধু রসনা বিলাস নয়, খাদ্য গ্রহণকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা বরাবরই ছিল, আছে বাঙালির চিন্তা ও রুচিতে। খাবারের পদবৈচিত্র্য তাই এ জনপদজুড়ে।দেশের বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, বিদেশেও পাবনার ঘিয়ের কদর রয়েছে। এ জন্য ঘি নিয়ে পাবনাবাসীর গর্বের শেষ নেই।


প্রাচীনকাল থেকে পাবনার ঘিয়ের কদর বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও এর কদর রয়েছ। এটি এতই বিখ্যাত যে, একটি বিখ্যাত প্রবাদও প্রচলিত আছে ‘পদ্মার ইলিশ আর পাবনার ঘি, জামাইয়ের পাতে দিলে আর লাগে কী?’


বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘি তৈরির মূল উপাদান হলো ননি। খাঁটি ননি সঠিক নিয়মে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট ঘি। পাবনার দুধ উৎপাদনকারী এলাকাগুলোতে রয়েছে প্রচুর ছানা তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় ছানা তৈরির পাশাপাশি ননিও তৈরি হয়। আবার অনেক খামারি নিজেদের খামারে উৎপাদিত দুধ কোনো কারণে বিক্রি করতে না পারলে তা থেকে ননি তৈরি করে থাকেন। এ ছাড়া এলাকার দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোও দুধের উদ্বৃত্ত ননি তুলে রাখে। ফলে পাবনার দুধ উৎপাদনকারী এলাকায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় পর্যাপ্ত ননি।


ঘি তৈরির কারিগরেরা সেই ননি সংগ্রহ করে জ্বাল দিয়ে তৈরি করেন ঘি। সাধারণত দুই কেজি ননি জ্বাল দিয়ে এক কেজি ঘি পাওয়া যায়।


ঘি নিয়ে পাবনাবাসীর গর্ব করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া ও পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় উৎপাদিত গরুর দুধের কারণে। এ উপজেলাগুলো এখন দেশের সেরা দুগ্ধ উৎপাদনকারী এলাকা। শুধু তা-ই নয়, এ এলাকার দুধ স্বাদে ও মানেও দেশসেরা বলে এলাকাবাসী মনে করেন। ঘি উৎপাদনে পাবনার প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠার পেছনে দুধের এমন সহজলভ্যতাই মূল কারণ বলে এলাকার ঘি উৎপাদনকারীরা মনে করেন।


দুগ্ধ ভাণ্ডার খ্যাত পাবনা অঞ্চলে খাঁটি দুধে তৈরি ঘি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন কানাডা, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, কুয়েতসহ বিশ্বের ১৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। ছানা ও ঘি বিদেশে রফতানি করে প্রতি বছর প্রায় ৩০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে ।


পাবনার ঘি কেন বিখ্যাত
ব্রিটিশ আমল থেকেই পাবনা ঘি এর জন্য বিখ্যাত । শুধু বাংলায় নয়, পুরো ভারতবর্ষেই এটি সমান জনপ্রিয় ছিলো। ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধী পাবনার ঘি এর ভক্ত ছিলো। বাংলার কংগ্রেস নেতারা তাঁর জন্য নিয়মিত এখানকার ঘি উপহার পাঠাতো বলে একটি কথা প্রচলিত আছে সেখানে। পাবনার ঘি ওই জনপদের শুধু ঐতিহ্য নয়, এটি এখন একটি শিল্প। শত বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে এখন বাণিজ্যিকভাবে ঘি সহ বিভিন্ন রকম মিষ্টি তৈরি হচ্ছে সেখানে।


ভেজাল ঘি চেনার উপায়
বিশুদ্ধ ঘি বা মাখনে ভেজাল হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ডালডা। এক চামচ ঘি বা মাখন গলিয়ে একটি স্বচ্ছ কাঁচের বয়াম বা বোতলে রাখুন। এতে একই পরিমাণ মিউরিঅ্যাটিক অ্যাসিড ও সামান্য চিনি মেশান। এরপর এর মুখ বন্ধ করে খুব জোরে জোরে ঝাঁকান। কিছুক্ষণ ঝাঁকানোর পর পাত্রটি স্থির অবস্থায় রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর এর নিচে যদি লাল রঙের আস্তরণ পড়ে, তাহলে বুঝবেন এতে ভেজাল মেশানো রয়েছে।


যদি ঘি নিয়ে আপনার সন্দেহ থাকে তাহলে পুরোটা ঘি একটি পাত্রে ঢেলে চুলায় জ্বাল দিন। প্রথমে চুলার আঁচ কমিয়ে জ্বাল দিন। তারপর আঁচ বাড়িয়ে দিন। মিনিট দুয়েক জ্বাল দিন। তারপর হালকা ঠাণ্ডা করে কাঁচের জারে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে যদি দেখেন পাত্রের নিচের দিকে সাদা জমাট বেঁধে থাকে এবং উপর দিকে তেল উঠে থাকে তার মানে বুঝতে হবে এটা ভেজাল। আর যদি জ্বাল দেয়ার পর কিছু আলাদা না হয়ে সবটাই মিশে থাকে তাহলে এটা খাঁটি।


খাঁটি ঘি চেনার উপায়
ঘি খাঁটি কিনা সেটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো প্যানে গরম করা। এক চামচ ঘিদিন গরম প্যানে। যদি ঘি তাৎক্ষণিকভাবে গলে যায় এবং গাঢ় বাদামি রঙে পরিণত হয়, তবে এটি খাঁটি ঘি। যদি ঘি গলতে সময় নেয় এবং হলদে হয়ে যায়, তবে বুঝবেন ঠকেছেন আপনি।


পাবনা ঘি এর প্রচারে ই-কমার্সের ভূমিকা
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে দেশে শুরু হয় ই-কমার্স ব্যবসা। প্রথম দিকে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন, মানুষকে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলা করে বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনলাইনে কেনাকাটা। তবে করোনাভাইরাস মহামারি ই-কমার্স খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ করোনাকালে ই-কমার্সে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে খুব সহজে একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা তার পণ্য সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারছেন।


লেখক : জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি, স্বত্বাধিকারি নুকি শপ


বিবার্তা/গমেজ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com