শিরোনাম
‘ছাত্রলীগকে তাদের রাজনীতি করতে দেয়া উচিত’
প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৯, ১৪:০৪
‘ছাত্রলীগকে তাদের রাজনীতি করতে দেয়া উচিত’
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পবিত্র মাটি গোপালগঞ্জ জেলা। আর এ জেলার গোপালগঞ্জ থানার করপাড়া গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম ও আওয়ামী পরিবারে ১৯৬০ সালের ২৩ জুলাই আমি জন্মগ্রহণ করি। আমার পিতা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের যে অভ্যুদয় হয়েছিল তার সাথে আমার পিতা ও পরিবার জড়িত ছিল। কমিটমেন্টের দিক থেকে আমি জয় বাংলার লোক। ছোটবেলা থেকে আমি বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে বড় হয়েছি। আমার বিকাশটা এভাবে হয়েছে। তৃণমূল থেকে আমি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ছাত্ররাজনীতি করেছি। এরপর মাঠকর্মী থেকে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আজকের এ অবস্থানে এসেছি।’


সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নিজ কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার।


ছাত্ররাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তার দীর্ঘ আলাপের বিশেষ অংশটুকু বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা : ছাত্ররাজনীতির শুরুটা কীভাবে?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার: প্রাইমারি স্কুল থেকে আমি জয় বাংলার স্লোগান দিয়ে বড় হয়েছি। স্কুলে সিনিয়রদের সঙ্গে স্লোগান দিয়েছি। এমনকি স্লোগান দিতে দিতে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে গিয়েছি। এভাবেই আমার ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ জীবনেও আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ১৯৭৯-৮০ সেশনে ভর্তি হয়ে জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িয়ে পড়ি। সেখান থেকে পদ-পদবি। ভর্তির এক বছর পরে আমি ১৯৮১-৮২ সেশনে হল সংসদের সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং ১৯৮৩-৮৪ সেশনে ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। ১৯৮২ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে আমার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম মিছিল বের হয়। আমি ১৯৮৯-৯০ সেশনে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হই। এভাবেই ছাত্ররাজনীতিতে আসা।



বিবার্তা: আপনি পূর্বের ও বর্তমান ছাত্ররাজনীতির মাঝে কী পার্থক্য দেখেন?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার: প্রাথমিক পার্থক্য হচ্ছে আমাদের বিরুপ পরিস্থিতিতে রাজনীতি করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়টা হলো, আমাদের সময় আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে ছাত্রদলসহ জাতীয় পার্টির মতো বিভিন্ন দলের সাথে। তখন আমাদের অবস্থা খুব নাজুক ছিল। তখন আমাদের এক কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিতে হয়েছে। এরপরেও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড যাতে করা যায় সে ধরণের উদ্যোগ তখন আমাদের ছিল। আর এ কারণে তখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল জহুরুল হক হলসহ দক্ষিণ পাড়া। আর এখনতো আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায়। যার ফলে আমাদের ছাত্রলীগ অনুকূল পরিবেশে রাজনীতি করছে। তাদের তেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না।


বিবার্তা : ছাত্রনেতাদের দলের নীতি আদর্শের প্রতি কমিটমেন্টের বিষয়টাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : আমাদের সময় ছাত্রনেতাদের পয়সার দিকে তেমন ঝোঁক ছিল না। কিন্তু এখনকার ছাত্রনেতাদের মাঝে অনেকাংশে সেটা দেখা যাচ্ছে। এখনকার ছাত্রনেতাদের মাঝে কমার্শিয়াল চিন্তা-ভাবনা চলে আসছে। ত্যাগের বিষয়টা না থেকে ভোগের বিষয়টা চলে আসছে। আর এটা সব পার্টিতে দেখা যাচ্ছে। কমিটমেন্টের জায়গাটা একেবারে কম। দলের নীতি আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট কোনো দলে তেমন নেই। এটা অ্যালার্মিং পজিশন। তারপরেও আমরা আশাবাদী মানুষ। আমরা চাইবো এটা থেকে বেরিয়ে আসবে ছাত্র রাজনীতি। মানুষের কল্যাণে, ছাত্রদের কল্যাণে, জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ার জন্য ছাত্ররাজনীতির সুদিন ফিরে আসবে।


বিবার্তা : ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সংগঠনের মধ্যে কিছুটা সমস্যা চলছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন ?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : এটা এক ধরণের সিদ্ধান্তহীনতা। যেখানে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ কমিটিতে দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন, সেখানে এক বছর পর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়া এক বিরাট প্রশ্ন। আরেকটা বিষয়, যেখানে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে পালন করতে হয় সেখানে ছাত্রলীগের, স্বেচ্ছাসেবকলীগের, যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও যদি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয়, তাহলে আমরা যারা নেতা হলাম, তারা ব্যর্থ নয় কি?


বিবার্তা : ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা তাদের দাবি আদায়ে প্রথমবার অবস্থান করলে আপনি আওয়ামী হাইকমান্ডের নির্দেশে সেখানে আসলে তারা আপনার অনুরোধে আন্দোলন স্থগিত করে। কিন্তু এরপর বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দেয়াসহ বেশকিছু দাবিতে তারা ফের অবস্থান করে। যা এখনো চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তারা সেদিন আমাকে পদবঞ্চিতদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমারও সেদিন কনফিডেন্স ছিল আমার সন্তানতুল্য ছেলেমেয়েরা আমার কথা রাখবে। কিন্তু সেদিন আমি সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে কথা বলতে বলেছি। তাদের দুজনকে তখন এটাও বলেছি যে, তোমাদের ঘর তোমরা সামলাও। আমি ছাত্রলীগের কেউ না। আমি সেদিন শুধু দিক নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আর আন্দোলনকারীরাও সেদিন আমার কথা রেখে কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের উচিত ছিল আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির ফয়সালা করে দেয়া। কিন্তু তারা সেটি করতে পারেননি। যার ফলে পদবঞ্চিতরা ফের আন্দোলনে নেমেছে।



বিবার্তা : ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন. . .


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : আমি খুব সাধারণভাবে বলতে চাই, ছাত্রলীগকে তাদের রাজনীতি করতে দেয়া উচিত। আমরা যারা অতীতে ছাত্রলীগে ছিলাম কিন্তু এখন নেই তারা যদি ছাত্রলীগকে নিয়ে যদি বেশি মাথা ঘামায় এটা ঠিক না। আমরা তাদের পরামর্শ দিতে পারি কিন্তু হস্তক্ষেপ করতে পারি না।


বিবার্তা : ছাত্রলীগের বর্তমান পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সমস্যা সমাধানে আপনার পরামর্শ কী?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিতে হবে। আর আন্দোলনকারীদেরও এটা মাথায় রাখতে হবে, তারা যেহেতেু ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন, সেহেতু তাদের প্রথম অভিভাবক ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে হবে। এরপরেও বিষয়টির সমাধান না হলে সংগঠনের সাংগঠনিক প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন।


বিবার্তা : সারাদেশে প্রায়ই বিভিন্ন নেতিবাচক ইস্যুতে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে পড়ে। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে বিশাল কর্মযজ্ঞ সেটা যাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে পারেননি। তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথে উপর্যুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ ধরণের অপতৎপরতা কমে আসতে পারে বলে আমি মনে করি।


বিবার্তা : সমালোচনা রয়েছে বর্তমান ছাত্ররাজনীতি ছাত্রবান্ধব না। ছাত্রসংগঠনগুলো রাজনৈতিক দলের লেজুরভিত্তি হয়ে কাজ করে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : দেখুন, অতীতে ছাত্ররাজনীতির কারণে বড় বড় সব যৌক্তিক আন্দোলন সফল হয়েছে। এখনকার ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও আবার ছাত্রদের ছাড়া কোনো কিছু হবে না। এক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের অবশ্যই ছাত্রবান্ধব হওয়া উচিত। কেননা, ছাত্রদের কল্যাণই ছাত্ররাজনীতির উদ্দেশ্য।


বিবার্তা : আপনি ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সেই ডাকসু নির্বাচন চলতি বছরের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হলো। কিন্তু এ নির্বাচন নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এ নির্বাচনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : এবারের ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা বেশ তৎপর ছিল। তারা চেয়েছিল এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারলে আর এ নির্বাচন হবে না। কিন্তু সব বাঁধা উপেক্ষা করে এ নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে আর ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে প্রশাসনিক দুর্বলতা, ছাত্রসংগঠনগুলোর আন্তরিকতার অভাবসহ কিছু ত্রুটি ছিল। আগামীতে এ ত্রুটিগুলো দূর করতে ঢাবি প্রশাসন এবং সরকারকে নজর দেয়া উচিত।



বিবার্তা : ২০০৮ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের এ অর্জনকে আপনি কিভাবে দেখেন?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : দেখুন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা পথ পাড়ি দিয়ে সব সূচকে অগ্রগতি, সাফল্য আর উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মানিত স্থানে নিয়ে গেছেন। তার ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এদেশ যেভাবে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সারাবিশ্ব অবাক হয়ে তা দেখছে। তারা আজ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞের কারণে আওয়ামী লীগের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।


বিবার্তা : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার : মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশের জন্ম হয়েছে, সেই দেশে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১, ২০৪১ ও ২১০০ দেখতে চাই। আর দেখতে চাই, উন্নত বিশ্বের কাতারে জঙ্গিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।


বিবার্তা: বিবার্তার পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ


মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার :আপনাকেও ধন্যবাদ


বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/জাকিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com