শিরোনাম
বেসিস মেম্বারদের রেটিং সিস্টেম চালু করতে চাই: সৈয়দ আলমাস কবীর
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:০০
বেসিস মেম্বারদের রেটিং সিস্টেম চালু করতে চাই: সৈয়দ আলমাস কবীর
মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

বেসিসে ১২০০-এর অধিক মেম্বার কোম্পানি রয়েছে। এসব মেম্বার কোম্পানির জনবল, অভিজ্ঞতা, কাজের মান ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে রেটিংয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। যেমন থ্রি স্টার, ফোর স্টার বা ফাইভ স্টার। এতে করে কোনো মেম্বার যখন প্রোজেক্ট পান, তখন যেন এ মেম্বারদের রেটিং দেখে ক্লায়েন্টরা কোম্পানির মান সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন এবং যথাযথ মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। সেই সাথে বেসিস থেকে সার্টিফিকেশন সিস্টেমও চালু করতে চাই। কম্পিউটার প্রফেশনালরা বেসিস বা বিআইটিএম-এর অধীনে স্ট্যান্ডার্ডাইজড পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দেবেন।


বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।


তিনি মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, শোকেস মালেয়শিয়া ২০১৯-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আমেরিকান অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।


সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে বিবার্তার সঙ্গে মুখোমুখি হন তিনি। দীর্ঘ আলাপের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা : বাংলাদেশের আইটি সেক্টরের বর্তমান অবস্থা কেমন?


সৈয়দ আলমাস কবীর : আইটি সেক্টর বলতে এর মধ্যে সফটওয়্যার, আইটি এনাবেল্ড সার্ভিসেস, ই-কমার্স সবকিছু মিলেই ধরা হয়। এ ইন্ডাস্ট্রির বিরাট একটা সম্ভাবনা আছে। আমাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রি গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিকে ওভারটেক করার সম্ভাবনা ধারণ করে। গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি থেকে এখন প্রায় ৩০-৩২ মিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করে থাকি আমরা। আইটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে এর থেকে বেশি এক্সপোর্ট করা যেতে পারে। আমরা ইতোমধ্যেই আইটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করছি। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এটাকে আস্তে আস্তে পাঁচ বিলিয়নে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।


আপনি জেনে থাকবেন যে, সরকার সারা দেশে ২৮টি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ইতোমধ্যেই ৫৩টি আইটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। জনতা টাওয়ারে ১৮টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ভালো একটা রেভিনিউ ইনকাম করতে পারছি। বাকিগুলো আস্তে অস্তে কার্যক্রম শুরু করলে সেগুলোতে আরও বড় বড় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করলে আমাদের টার্গেটের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবো।


বিবার্তা : এ সেক্টর এগিয়ে যাওয়ার পেছনে কী কী সমস্যা রয়েছে?


সৈয়দ আলমাস কবীর : বাংলাদেশ সফটওয়্যার সেক্টরকে এগিয়ে নিতে যেসব সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে প্রথমেই আসে দক্ষ জনবলের অভাব। আমাদের দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ দরকার, তা এখনো তৈরি হয়নি। তা আমাদের তৈরি করতে হবে খুব দ্রুত। এরপর বলব, অবকাঠামোগত সমস্যা। এটা বলতে আমি বোঝাতে চাই, সারা দেশে সুলভমূল্যে ভালো মানের ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।


অরেকটি সমস্যা হলো, আমাদের কোম্পানিগুলোর ইমেজকে আরও বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ব্র্যান্ডিংটা ভালো করে করতে হবে। বিদেশে তো বটেই, লোকাল যারা ইউজার বা ক্রেতা আছেন, তাদের মধ্যেও কিছুটা অনাস্থা বিরাজ করছে। ব্র্যান্ডিং বলতে শুধু চাকচিক্য নয়। ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে যে স্টেপ নেয়া প্রয়োজন, সেটা করা দরকার। আমি তাদের বলবো কোনো কোম্পানি যদি সফটওয়্যার কেনে তাহলে যেন বিদেশি সফটওয়্যার না কিনে দেশীয় সফটওয়্যারই কেনে। তারা অনেক সময় ভয় পায় আসলে কি দেশীয় সফটওয়্যার চলবে? আমি কি পরে আফটার সেল সাপোর্ট পাব? এই যে অনাস্থা এটা একটা বড় সমস্যা।


আমি তাদের বলব, দেশের অনেক সফটওয়্যার ইতোমধ্যেই বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে, অথচ দেশের কোম্পানিগুলো তা ক্রয় করছে না। এখন আমাদের করণীয় হলো, যে সফটওয়্যারগুলো বিদেশে সুনাম কুড়ায়, সে তথ্যগুলো দেশীয় গণমাধ্যেমে প্রচার করতে হবে। পজেটিভ সংবাদগুলো প্রচার করতে হবে। সফলতার গল্পগুলো সবাইকে জানাতে হবে। জানালেই সবাই কিন্তু আশস্ত হবে এবং আস্থা জন্মাবে।


উপরের বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে কাজ করলে আমার বিশ্বাস আমাদের টার্গেটকৃত গ্রোথ দ্রুত আসবে।



সৈয়দ আলমাস কবীর। ছবি: ফেসবুক থেকে


বিবার্তা : বলছিলেন আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব। এ সমস্যা সমাধানে বেসিসের পক্ষ থেকে কোনো কার্যক্রম করছেন কিনা?


সৈয়দ আলমাস কবীর : আমাদের বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম) নামে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে একটা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট-পিএইচপি, প্রাকটিক্যাল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ সমাসাময়িক বিভিন্ন আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ পর্যন্ত এখানে প্রায় ৩৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। এ বছরেও আমাদের আরো পাঁচ হাজারেরও ওপরে তরুণ-তরুণীকে ট্রেনিং দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শুধু বেসিসের ট্রেনিংই যথেষ্ট নয়। এখানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।


আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে প্রতি বছর কম্পিউটার সায়েন্সের যে গ্রাজুয়েট বের হয় তারা শিক্ষিত, কিন্তু দক্ষ নয়। তাই তাদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইউজিসির সাথে আমরা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছি। ছাত্র-ছাত্রীরা যখন গ্রাজুয়েট করে, তখন তাদের দক্ষতা বাড়াতে আলাদা করে একটা ট্রেনিং দিতে হয়। তিন বা ছয় মাসের ট্রেনিং করে দক্ষতা নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে হয়। এই তিন-ছয় মাসের ট্রেনিংয়ের সময়টা যদি আমরা শিক্ষার ৪ বছরের সিলেবাসে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে তারা শিক্ষা শেষ করেই চাকরিতে যোগ দিতে পারবে। ফলে তাদের সময়টাও বেঁচে যাবে। আবার দেশের দক্ষ জনশক্তির যে অপচয় সেটাও রোধ হবে। এজন্য আমরা ইউনিভার্সিটিগুলোর সাথে কথা বলেছি, নতুন নতুন যেসব টেকনোলজি আসছে সেগুলো যেন সিলেবাসের সাথে যোগ করা হয়। আর অফিসে জব করার জন্য যে দক্ষতা দরকার হয়, সেগুলো যাতে হাতে কলমে শেখার ব্যবস্থা করা হয়।


বিবার্তা : আপনার মেয়াদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?


সৈয়দ আলমাস কবীর : মেয়াদকে সংক্ষেপে মূল্যায়ন করতে হলে আমি বলব, যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন আমার মনে হয়েছে, বেসিস মেম্বারদের জন্য একটা গ্রোথ ইকোসিস্টেম ডেভেলপ করাটা সময়ের দাবি। কেননা, আমাদের আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই ছোট বা নতুন কোম্পানি। আমরা যদি বেসিসের পক্ষ থেকে এই ছোট বা নতুন কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাপোর্ট দিতে পারি, তাহলে আমার মনে হয়, তারা এ ব্যবসার সাপোর্ট সিস্টেম নিয়ে তাদের ব্যবসাকে প্রসারিত করতে পারবে।


এখন বেসিস মেম্বাররা বিনা জামানতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোন পাচ্ছেন। আমরা বিনামূল্যে তাদের লিগ্যাল পরামর্শ ও সাপোর্ট দিচ্ছি। ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে ডিজিটাল মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট বিল্ডিং, ট্যাক্স, ভ্যাট, এসব বিষয়ে নিয়মিত সেমিনার-কর্মশালা করছি। এটা আমরা বলছি 'গ্রোথ ইকোসিস্টেম'। আমার সময়টাতে এ জায়গাটাতে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি।


আরেকটা বিষয় হলো- এক্সস্পোর্টের ওপরে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেন্টিভ উদ্যোগ। এটার কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। অল্পকিছু দিনের মধ্যে এর কাজ শেষ হয়ে যাবে। বেসিসের মেম্বারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটি করা হয়। ওই কমিটির সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সরকারের সাথে দুটা বড় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটা হলো ই-কমার্স পলিসি ও আইসিটি পলিসি। এদুটা কাজে বেসিসের মেম্বারদের অনেক অবদান রয়েছে। আমরা গতানুগতিক ইভেন্ট করার বাইরে গিয়ে মেম্বারদের ব্যবসার উন্নতির জন্য যে জায়গাগুলোতে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেছি সেগুলোতে কাজ করেছি।


বিবার্তা : এমন কোনো পরিকল্পনা নিয়েছেন কি, যা এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেননি?


সৈয়দ আলমাস কবীর : বেসিস মেম্বারদের জন্য আরো দুটি বিশেষ কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটি হলো, বেসিস-এ ১২০০-এর অধিক মেম্বার কোম্পানি রয়েছে। এসব মেম্বার কোম্পানির জনবল, অভিজ্ঞতা, কাজের মান, ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে রেটিংয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। যেমন থ্রি স্টার, ফোর স্টার বা ফাইভ স্টার। এতে করে কোনো মেম্বার যখন কোনো প্রোজেক্ট পায়, তখন যেন এই মেম্বারদের রেটিং দেখে ক্লায়েন্টরা কোম্পানির মান সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা করতে পারেন এবং যথাযথ মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। সেই সাথে বেসিস থেকে সার্টিফিকেশন সিস্টেমও চালু করতে চাই। কম্পিউটার প্রফেশনালরা বেসিস বা বিআইটিএম-এর অধীনে স্ট্যান্ডার্ডাইজড পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দেবেন।


সৈয়দ আলমাস কবীরের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বিবার্তা স্টাফ রিপোর্টার উজ্জ্বল এ গমেজ


বিবার্তা : নতুনদের উদ্দেশে কিছু বলুন।


সৈয়দ আলমাস কবীর : বর্তমানে সরকার আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নও করছে। এ সেক্টরে নতুনদের জন্য এটা তো অবশ্যই ভালো খবর। তবে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, শুধু বিজনেস আইডিয়া থাকলেই চলবে না। এ আইডিয়াকে বাস্তবায়িত করার জন্য একটা বিজনেস প্ল্যান তৈরি করতে হবে। টাকা আছে, নেমে গেলেন ব্যবসায়। পরে কী হবে তা আপনার জানা নেই, তাহলে তো অবস্থা বিপদজনক হয়ে পড়বে। আমাদের তরুণরা এখন এ ভুলটাই বেশি করছেন। তাই তরুণদের বলতে চাই, আগে সুষ্ঠু বিজনেস প্লান করে তারপর ব্যবসায় নামুন। এ বিষয়ে যদি মনে করেন বেসিসের কোন সহযোগিতা প্রয়োজন, তাহলে আসুন।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com