শিরোনাম
‘নির্যাতিত , ত্যাগী, দক্ষ সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রত্যাশা করি’
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০৮
‘নির্যাতিত , ত্যাগী, দক্ষ সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রত্যাশা করি’
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

আমাদের মাদারীপুর জেলা এমনিতে নৌকা বা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এ জেলার প্রত্যেকটা বাড়িতে রাজনৈতিক সচেতনতা আছে। তাছাড়া আমার আব্বা সেই স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। আমার আব্বা যখন মারা যায়, তার ৪ দিন আগে আমি তাকে টেস্ট করলাম যে, আব্বার সেন্স টা আছে কিনা? তখনও তিনি বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসে আমাকে নিয়ে গেলেন। পরিবারে আমি সবসময় আব্বার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতীক্ষা সংগ্রামের কথা শুনতাম। আব্বাও আমাকে সবসময় বলতেন বঙ্গবন্ধু আদর্শকে লালন করতে. ধারণ করতে। আর বলতেন, নিজের জীবন বিপন্ন হলেও যাতে আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হয়। আব্বার এ কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলাম। যার ফলে ১/১১ তে নির্মম অত্যাচারের পরেও প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোষ করিনি।


সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ১/১১ সময়ের নির্যাতিত ছাত্রনেতা ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল।


স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তার দীর্ঘ আলাপের বিশেষ অংশটুকু বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে খায়রুল হাসান জুয়েল


বিবার্তা : ছাত্ররাজনীতির শুরুটা কীভাবে?


খায়রুল হাসান জুয়েল: আমি আমাদের বাসার সামনে ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তাম। এ স্কুলে বঙ্গবন্ধু পড়াশুনা করেছেন। স্কুলে আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি, তখন আমার রেজাল্ট খুব ভালো ছিল। আমাদের জেলা ছাত্রলীগের নেতারা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আমাকে হাতেখড়ি দেন। আমাদের ঐখানে নাজিম উদ্দিন কলেজ, স্কুল, পৌরসভা ও বাজার রয়েছে। এই এলাকাটার নাম হচ্ছে কলেজ রোড। আমি ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হই। এর মাধ্যমে আমি প্রথম ছাত্রলীগের পদ পাই। এরপর থেকে আমি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। এর আগে ছোটবেলা থেকে ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে গেছি। এরপরে আমি এসএসসি পাস করি। তখন সেখানকার ছাত্রনেতাদের আমার ব্যাপারে প্রত্যাশা ছিল, ছেলেটা তো মেধাবী ও ভালো রেজাল্ট করে। ও ছাত্রলীগ করলে ছাত্রলীগের মান বাড়বে। এই সুযোগটা তারা আমাকে করে দিয়েছেন। তারপরে আমি আবুল হোসেন কলেজে ভর্তি হই। আমার এ কলেজর খুব সুনাম ছিল। সবসময় স্ট্যান্ড করত। এরপরে আমি কলেজ জীবন শেষ করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৭-৯৮ সেশনে জিওলজি বিভাগে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরে আমি ফজলুল হক মুসলিম হলে উঠলে সেসময় ছাত্রলীগের একটা সম্মেলন পাই।


যখন বাহাদুর ভাই, অজয় দা ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট -সেক্রেটারি ছিলেন। তখন আমাদের হল ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। আমি যেহেতু খেলাধুলা করতাম। খেলাধুলার প্রতি আলাদা আকর্ষণ থাকার কারণে হলের ক্রীড়া সম্পাদক পদটার প্রতি আমার আলাদা জোক ছিল। হলের নেতারা আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি ক্রীড়া সম্পাদক হওয়ার কথা বলেছিলাম। আর ক্রীড়া সম্পাদকও হয়েছিলাম। তখন হলের রাজনীতিতে আমি বেশ সক্রিয়। তখন হলের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি থাকলেও হলকে গুছিয়ে মিছিল-মিটিং করাসহ যাবতীয় কাজ আমিই করতাম। ঐ সুবাদে আমাকে আমাদের ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট সাজ্জাদ ভাই, কেন্দ্রীয় সভাপতি বাহাদুর ভাই খুব আদর করতেন। তারা তখন আমার ব্যাপারে বলতেন যে, ছেলেটা খুব পরিশ্রম করে। সেসময় থেকে রাজনীতিতে উৎসাহ -অনুপ্রেরণা পাই। আমাদেরকে বিশেষ করে সাজ্জাদ ভাই খুব অনুপ্রেরণা দিতেন।


বিবার্তা : সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে আপনাদের অবস্থান কেমন ছিল?


খায়রুল হাসান জুয়েল: ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচন হলো। দুই -তিন বছর ধরে হলে থাকলেও ষড়যন্ত্রের ওই নির্বাচনের পরে প্রচণ্ড বাজে সময় গেল আমাদের। আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সিনিয়র কোনো কেন্দ্রীয় নেতাই আসতেন না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা রানিং শিক্ষার্থী তারাই ওই কঠিন সময়ে মধুর ক্যান্টিনে যেতাম। সে তাগিদ থেকে আমরা একদিন বললাম যে, আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মিছিল করব ক্যাম্পাসে। তখন সে মিছিলের জন্য লোক পাওয়া গেল মাত্র ১৩ জন আর এ ১৩ জন লোক নিয়ে আমরা ২০০১ এ বিরোধী দলে যাওয়ার পরে প্রথম মিছিল করলাম। আমাদের সে মিছিলে ধাওয়া করল, আমাদের মারল এবং টিএসসিতে এসে হামলা করল ছাত্রদল। তখন একটা মামলা হলো। ওই সময় একটা আইন ছিল জননিরাপত্তা আইন। আর এ জননিরাপত্তা আইনে আমাদের কেন্দ্রীয় ৪ জন নেতাসহ আমাকে এ মামলার আসামি করেছিল। জুনিয়রদের মধ্যে একমাত্র আমি সে মামলার আসামি ছিলাম।



কারাগারে থাকাকালীন সময়ে খায়রুল হাসান জুয়েলের প্রতি তার বাবার চিঠি


এ মামলার পরে আমরা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করলাম। আর বললাম, আপা আমাদের তো এভাবে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। মাননীয় নেত্রী তখন আইনজীবীদের ডেকে আমাদের মামলাটা দেখে দিতে বললেন। তখন আমাদের মামলার জামিন দেয়া হলো। এরপরে প্রত্যেকটা দিনই আমাদের জন্য আতঙ্কের দিন হলেও ক্যাম্পাস ছেড়ে যাই নি। একটা পর্যায়ে আমাদের হল থেকে বের করে দিল। এক বছর আমরা হলের বাহিরে ছিলাম। একদিন আমি হঠাৎ করে মধুর ক্যান্টিনে গেলাম তখন সেখানে শুনি যে, আমার রুম ভাঙচুর চলছে। আমার রুমের কম্পিউটারসহ যা যা ছিল সব ভেঙে তচনছ করে দিয়েছে ছাত্রদলের ছেলেরা। আমাকে হলের এক স্টাফ ফোন করে জানালো যে, ভাই আপনি হলে আসিয়েন না। হলে আসলে সমস্যা হতে পারে। এরপরেও আমি হলে গিয়েছি। হলে যাওয়ার পরে ওরা আমাকে শুধু গায়ে হাত দেয়া ছাড়া সব রকম লাঞ্ছনা করেছিল।


এভাবে এক বছর আমরা হলের বাহিরে ছিলাম। বাহিরে থেকে ক্যাম্পাসে এসে সারাদিন রাজনীতি করতাম। এরপর সন্ধ্যায় যে যার মতো বাসায় চলে যেতাম।


বিবার্তা : আপনার ছাত্ররাজনীতির কোনো বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে বলুন।


খায়রুল হাসান জুয়েল: আমরা ক্যাম্পাস জীবনের শুরুতে হলের রাজনীতি করতাম। আর যখন আমাদের হল সম্মেলনের তারিখ হলো। ঠিক তখন আমাদের তেজগাঁও কলেজের জিএস সিদ্ধার্থকে মেরে ফেলা হলো। সারাদেশেও অত্যাচার-নিযাতন চলছিল। সিদ্ধার্থর মৃত্যুর পর দল থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এখন আর কাউন্সিল হবে না। এ ঘোষণার পর আজকের আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব, আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর সাহেবসহ সাবেক নেতারা তখন পার্টি অফিসে ছিলেন। আমাদের তখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি ছিলেন পপি আপা- শিখর ভাই। আমাদের তখন বলা হলো যে, হল সম্মেলনের ডেট হলেও সম্মেলন এখন করা যাবে না। কারণ সারা বাংলাদেশে আমাদের পরিস্থিতি খারাপ। কাদের ভাই দেখালো তাকেও মেসেজ দিচ্ছে আর থ্রেডের উপর রাখছে। হল সম্মেলন স্থগিত করার ঘোষণায় আমি প্রতিবাদ করে বললাম, এ সিদ্ধান্ত ঠিক না। আমি যেহেতু তখন ছোট মানুষ ছিলাম তখন তারা বললেন, তুমি কেন কথা বলতেছ?


তখন আমি তাদের উদ্দেশে বললাম, আজকে আপনারা যারা ওখানে আছেন তাদের চেয়ে বেশি সাফার করতেছি আমরা। কারণ আমরা রাস্তায় থাকতেছি, মাঠে থাকতেছি এবং প্রথম মামলাটা আমি খেয়েছি। আপনারা কেউ খান নাই। তখন কাদের ভাই বললেন, তুমি কি আমাদের কথাটা মানতে চাচ্ছ না ? তখন আমি বললাম যে, কাদের ভাই আপনাদের প্রতি আমার ১০০% শ্রদ্ধাবোধ আছে। কিন্তু আমরা যদি এখন ঘরে ঢুকে যাই, তাহলে তো ওরা আমাদের ছাড়বে না। সম্মেলন করার মাধ্যমে আমরা কিছু কর্মী বের করতে পারবো। আমার এ কথাটা কাদের ভাইয়ের পছন্দ হয়েছে। তখন কাদের ভাই সিট থেকে উঠে আমাকে নিয়ে পাশের মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসে গেল ওখানে বসে আমাকে বুঝালেন তিনি।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদের সাথে নিজ হলে খায়রুল হাসান জুয়েল


পরে তিনি আমাকে বললেন , নেত্রী তো দেশের বাহিরে। নেত্রী যদি পারমিশন দেয় তাহলে আমি সম্মেলন করব। তোমাকে জানিয়ে দেবো। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর কাদের ভাই নেত্রীর সাথে আলাপ করলেন। আলাপে তিনি আমার সম্মেলন চাওয়ার কথাটা নেত্রীকে বললে নেত্রী তাকে বলেছিলেন ‘ও’ তো ঠিকই বলেছে। তোমরা যদি এখন থেকে সম্মেলন বাদ দিয়ে দাও তাহলে তো ঘরে বসাই দিলা। ওই ছেলেটা ছোট মানুষ হলেও যেটা বলেছে, সেটা ঠিক আছে। কারণ এখন শতভাগ এফোর্ট দিতে হবে। রাজপথ ছাড়া যাবে না। ছাড়লে আরো অনেক মানুষ মেরে ফেলবে। আর এ আলাপের পর রাতে কাদের ভাই আমাকে মেসেজ পাঠালো সেখানে তিনি লিখেছেন, তুমি জিতেছ । তখন আমি বললাম, তাহলে আমাদের সম্মেলনের ডেট দিয়ে দেন। তখন তিনি বললেন সিদ্ধার্থ হত্যার ঘটনায় আমরা এক সপ্তাহ শোক পালন করব। আমি বললাম, এক সপ্তাহ নয় আপনি প্রয়োজনে ১৫ দিন শোক দিন পালন করেন তবে সম্মেলন দিতে হবে।


এরপরে আমরা হল সম্মেলন করলাম। হল সম্মেলনে আমি ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হলাম। এটার মাধ্যমে আমার একটা পরিচয় হলো।


বিবার্তা: বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আপনি হল ছাত্রলীগের নেতা হয়েছেন। সেটার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন।


খায়রুল হাসান জুয়েল : হলের নেতা হওয়ার পর ক্যাম্পাসে প্রতিদিন আমরা আতঙ্কে থাকতাম। ক্যাম্পাসে গেলে ছাত্রদল মারে, পুলিশ মারে। আমরাও হরতাল ধর্মঘট দেই । এরপরে আমরা ভাইস চ্যান্সেলরকে খুব প্রেশার দিলাম যে, আমরা যারা বৈধ ছাত্র তারা যেন হলে থাকতে পারি। এরপর আমরা যার যার হলে আবার উঠে গেলাম। হলে উঠার পর আবার হলে রাজনীতি শুরু করি। হলকে গুছিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ফ্যাকাল্টিকে ছাত্রলীগের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করেছিলাম।


ওই সময়ে আমাদের ওখানে ছাত্রদলও ছিল। তারপরেও আমরা রিস্ক নিয়ে সামান্য প্রোগ্রাম হলে আবদুর রাজ্জাক সাহেবকে গেস্ট করে আনতাম। উনি আমাদের ফজলুল হক মুসলিম হলের সাবেক জিএস ছিলেন। তিনিও আমাদের ডাকে খুব সাড়া দিতেন। এমনকি একটা সময় আমরা এমন একটা রিস্ক নিলাম আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ সাহেবকে আগস্টের একটা আলোচনা ও ইফতারে গেস্ট করার জন্য আমি প্রস্তাব রাখলাম। তখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় এটা খুব রিস্ক ছিল। তারপরেও উনাকে বললে উনি আসবেন বলে আমাদের জানালেন। রাজ্জাক ভাই বললেন আমি ‍নিয়ে যাবো। তোমরা আয়োজন কর। তিনি হলে আসলেন। আসার পর তিনি তার রুম দেখলেন, প্রোগ্রাম করলেন। তখনও আমাদের হলে ছাত্রদলের ছেলেরা খুব স্ট্রং ছিল। আমাদের অবস্থাও এমন ছিল যে, আমাদের কিছু বলতে পারবে না। আমাদের লোকজন তাদের চেয়ে কম ছিল না। হয়তো তারা প্রশাসনিক সাপোর্টটা বেশি পাচ্ছে। এদিকে সাহস করে আমরা হল ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট -সেক্রেটারি যেহেতু হলে থাকি সেহেতু আওয়ামী প্রেমীরা আমাদের ছায়ার তলে চলে আসছে। আমরা তখন অনেক বড় মিছিল করি। তখন আমাদের অবস্থান এমন ছিল যে, কার্জন হলের মিছিল না গেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় মিছিল হতো না। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আমি ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ওইসময়ে প্রত্যেক দিন আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকতাম। রাতের বেলায় দেখা গেছে ২ টার সময়ে ছাত্রদলের ছেলেরা আসছে। তখন মনে হতো, এখন মারতে আসলো কিনা? ওরা খুব বাজে ব্যবহার করতো। তারপরেও কোনোদিন হল ছেড়ে যাইনি। তখন ছাত্রদলের নেতারা বলত, আমরা যদি তোদের রুমে অস্ত্র দিয়া রেড করাই, তখন কি করবি? আমি তখন বলতাম দিয়েন অসুবিধা কি? দিলে আর কী করবো? সবসময় এ ধরণের থ্রেডের মধ্যে রাখত তারা।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে খায়রুল হাসান জুয়েল


বিবার্তা: হল রাজনীতিতে তিক্ত অভিজ্ঞতার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিও করলেন। সে ব্যাপারে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?


খায়রুল হাসান জুয়েল: হল রাজনীতিতে নানা অত্যাচার সহ্য করেও রাজনীতি ছাড়েনি। এরপর করেছি কেন্দ্রীয় রাজনীতি। একসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হলো। এ সম্মেলনে বয়সের কারণে আমাদের সিনিয়ররা ছাত্রলীগ থেকে বাদ পড়ে গেল। তখন আমাদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি -সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কথা। তখন তো সবাই দুঃসময়ের-ই বলা চলে। তার মধ্যে আমরা যারা বেশি ত্যাগী, ইমেজধারী তারাই ভালো ক্যান্ডিডেট ছিলাম। হয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের ছাত্রলীগের এক অশুভ চক্রের বাধায় আমি সভাপতি -সাধারণ সম্পাদক হতে পারলামনা। আমি তখন হলাম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০০৬ সালে এ পদ পেয়ে সারা বাংলাদেশে আমরা রাজনীতি করেছি।


এরপরে ২০০৭ এর শুরুর দিকে যে লগী বৈঠার আন্দোলন শুরু হলো ঐদিন আমরা সবাই ক্যাম্পাসের ডাচের সামনে দাঁড়ানো। আমরা একটা মিছিল নিয়ে ২৩ নাম্বার গুলিস্থান পার্টি অফিসের দিকে যাবো। ওখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি হঠাৎ দেখি কলাভবনের গেইট থেকে ছাত্রদলের ছেলেরা গুলি করতে করতে আসছে। আমরা তখন কিছু বুঝে ওঠার আগে ওরা বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করে টিএসসি পর্যন্ত চলে আসছে। তখন আমার একটা মোটরসাইকেল ছিল। ওদের গুলি বর্ষণে দিক না পেয়ে আমার মোটর বাইকটি রেখে আমরা টিএসসির ভিতরে চলে গেলাম। ওরা আমাদের চোখের সামনে আমার মোটর সাইকেলটি জ্বালিয়ে দিল। পরে টিএসসির পেছন দিক দিয়ে আমরা পরমাণু শক্তি কমিশন হয়ে বেরিয়ে যাই। এরই মধ্যে তারা আমাদের যারে পাইছে তারে মেরেছে। ওখান থেকে আমরা পার্টি অফিসে চলে গেলাম। সেখানেও লগী বৈঠার আন্দোলন চলতেছে। সেখানে শিবিরের ছেলেরা বৃষ্টির মতো ইট মারতেছে, গুলি করতেছে।


বিবার্তা: ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আপনি নির্যাতনসহ এক বছর কারাবরণ করেছিলেন। সে সম্পর্কে বলুন।


খায়রুল হাসান জুয়েল: একদিন হঠাৎ করে ওয়ান ইলেভেন। মাননীয় নেত্রী তখন সুধা সধনে থাকতেন। ওখানে আমরা ছাত্রলীগের নেতারা নেত্রীর সাথে দেখা করলাম। নেত্রী বললেন যে, কি হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না ? তোমরা সাবধানে থেক। আমরা নেত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।


আমাকে ঢাবির দোয়েল চত্বর নামিয়ে দেয় আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা। তখন আমি আমার হলে দিকে চলে গেলাম। হঠাৎ হলের সামনে থেকে দেখি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িটা আর্মি ঘিরে ফেলেছে। তখন আমার সাথে ছিল সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি লাভলু মোল্লা শিশির আমি তখন শিশিরকে বললাম চল। একসাথে যাই কি হয় না হয় দেখি। সে বলল, তুই যাইস না। আর্মি কিন্তু মারে। আমি বললাম একসাথে আমরা আসলাম না গেলে খারাপ দেখা যায় না। আমরা তো এ ক্যাম্পাসের ছাত্র। আমরা তো কোনো অন্যায় করি নাই চল যাই। এরপরে আমরা গেলাম। আমরা গিয়ে দাঁড়াতে আর্মির লোকেরা বলল আপনারা? ওখান থেকে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের একজন বলল, ওরে নামিয়ে দিছি আমরা। ওর হল এটা। তখন তারা বললেন যে, অসুবিধা নাই। আমরা তো এদেশের নাগরিক। এটা বলে ওরা ফোনে কার সাথে যেন আলাপ করেছিল। এরপর আমাদের নিয়ে গেল জিগনেশিয়ামের মধ্যে। আমার তখনও কনফিডেন্স ছিল যে, আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থী। জিগনেশিয়ামে ঢুকতেই ওরা আমাদের চোখ, হাত, পা বেঁধে ফেলল তখন আমার কাছে খুব আতঙ্ক মনে হলো। ওরা তখন বলেছিল যে, প্রথমে ডান পায়ে মারবা. তারপর বাম পায়ে মারবা। অতঃপর সব স্বীকার করলে ছেড়ে দিবা।


আমি বুঝি নাই তারা এসব কেন বলতেছিল? এরপর জিগনেশিয়ানের রাস্তা থেকে মাঠের গ্যালারি পর্যন্ত গেলাম, এরপর এমনভাবে আমাদের মারলো মনে হচ্ছে যেন আমরা কত বড় অন্যায় করে আসছি। টানা এক থেকে দেড় ঘণ্টা আমাদের অনবরত মারলো। কি কারণে মারতেছে তাও জানি না। একটু পর তারা আমাদের বলে যে, তোরা তো শেখ হাসিনার বাসা থেকে আসছিস। তিনি তোদেরকে কি বলে দিয়েছে? তিনি কাদেরকে মারতে তোদের নির্দেশ দিয়েছে? আর কার প্রতি কি কি ডিরেকশন দিয়েছে? তোদের দিয়ে তো তিনি সবকিছুই করান। তখন আমি বললাম যে, আমাদের সাথে তো নেত্রীর এধরণের কোনো কথা হয়নি।


আমার এ উত্তর শুনে আবার মারতে শুরু করলো। তখন তারা মারার সাথে সাথে আরেকটা জঘন্য কাজ করেছিল। সে সময় প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তারা আমাদের গায়ে পানি ঢেলে দিল। ভেজা শরীরে এরপরেও মার বন্ধ করেনি। আমাদের পুরো শরীর দাগ হয়ে গেল। রাত আড়াই থেকে তিনটার দিকে ওদের কে যেন এসে বলল এখানে জুয়েল কার নাম। আমি বললাম আমার নাম। তখন তিনি বললেন তোমাদের যে ধরলো তোমরা পরিচয় দিলা না। তোমরা তো ছাত্রলীগের নেতা। তখন আমি বললাম যে, আপনারা তো পরিচয় পাওয়ার পরেই মারছেন। তখন উনি বললেন আহারে ভাই! মিসটেক হয়ে গেছে তোমাদের জন্য কি করতে পারি? তখন আমি বললাম, আমার হাতের বাঁধন একটু খুলে দেন। আমি মাটিতে একটু বসতে চাই। তখন তিনি কাকে যেন বললেন ওর হাতের বাঁধন টা খুলে হালকা করে দাও যেন মাটিতে বসতে পারে।



আওয়ামী লীগ সভপাতির সাথে খায়রুল হাসান জুয়েল


ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে তখন শীতে কাঁপতেছি। আমার হাতের নখ তুলে ফেলল। রক্ত ঝড়তে থাকলো হাত থেকে । তারপরেও মার কিন্তু দেয়া বন্ধ করে নাই। কি অন্যায়ে এসব নির্যাতনের শিকার হচ্ছি তাও জানি না। তারপরে তারা বলল, ইউনিভার্সিটিতে আসলে তোরা আমাদের সালাম দেস না। আমি তখন এ কথাটা না ‍বুঝে তাদের ভাই বলে সম্বোধন করলাম। ভাই বলার পর তারা বলল, ভাই বললি কেন? তখন আমি স্যার বললাম। এটা বলার আবার মারল। কেন স্যার বললি? কি বলবো বুঝতেছিলাম না। এরপরে আবার প্রচণ্ড মার শুরু হলো।


আমার হাতের বাঁধন হালকা থাকায় আমি তখন চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টার করলাম। আর হালকাভাবে দেখলামও। দেখলাম আমার সামনে দুই-তিনজন লোক রাইফেল তাক করিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে একজন আমার হাতের রশি ধরা। আমি তখন ভরসা নিয়ে সৈনিককে জিজ্ঞেস করলাম, যে লোকটা এসে আমার নাম জিজ্ঞেস করে আমাদের খবর নিল, উনি কোথায়? সৈনিক লোকটা তখন হাসতে হাসতে বলে যে, বেটা! ‍বুঝলি নাতো ! যে তোরে বাঁধন খুলে দিতে বলছে , উনি তোরে মেরে গেল। একথা শুনে আর কারো উপর যেন ভরসা করতে পারছিলাম না।


এরপরে তারা আমাকে ও রোটন ভাইকে আলাদা করে গ্যালারির ঐদিকে নিয়ে গেল। তখন ওরা বললো যে, আমরা যে বিষয়ে বলবো তোমরা সে বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিবি। আর যদি না দাও তাহলে তোমাদের ক্রসফায়ার দেব। তখন ওরা আমাদের নেত্রীর নামে অযেীক্তিক কথা বলতে থাকলো। তখন ওদের কথা শুনে বুঝলাম ওদের টার্গেট আমরা না, টার্গেট ছিল আমাদের নেত্রী। আমি বললাম, মাইরা ফেলেন। তারপরেও আমরা কোনো পেপারসে সাইন করতে পারবো না, স্বীকারোক্তিও দিব না। একটা পর্যায়ে মনে হলো, এতো টর্চারের চেয়ে মরে যাওয়া মনে হয় ভালো হবে। এরপর আবার মার শুরু হলো পায়ের গোড়ালিতে, মাথার উপরে। আরো কিছু বাজে আচরণ আমাদের সাথে করলো, যেটা আসলে বলা সম্ভব না। আমরাও দৃঢ়চেতা ছিলাম । জীবন চলে যাবে। তারপরেও নেত্রীর প্রশ্নে আপোষ করবো না। আমরা বললাম , সবাই দেশটাকে যেরকম ভালোবাসে নেত্রী তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসে। তখন তারা বলল, শেখ হাসিনা কি চায় এদেশে ?


আমি বললাম, এদেশটাকে ভালো করার জন্য, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য নেত্রী কাজ করেন। এটা শুনে ওরা বলল, না। উনার উদ্দেশ্য কি ? একথা বলে ওরা নেত্রীর নামে যা তা বলল। এরপর আবার শুরু হলো আমাদের উপর অত্যাচার। এ টর্চার এতোটা বর্বর ছিল যে, মনে হলো আর বাঁচবো না।


তারপরে হঠাৎ করে কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলল উনারা যা চায় দিয়ে দেন। আমরা আপনাদের ছাড়ার ব্যবস্থা করবো। তখন আমাদের নীরবতা দেখে তিনি বললেন, চিনেন নাই আমাকে। আমি তো অমুক পত্রিকার সাংবাদিক। কিছুক্ষণ পরে শাহবাগ থানার ওসি আসলেন। উনি বললেন, ভাই আসলে আমরা তো কিছুই করতে পারতেছিনা। আমরা আপনাদের নিয়ে যাবো। আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। এরপরে উনি গেলে আমাদের আবার মারলো। সারা শরীর রক্তাক্ত তখন। এরপরে তারা বলল, তোরা তো স্বীকার করবি না। ক্রসফায়ার নাকি পুলিশ কোনটা চয়েজ কর? আমি বললাম যে, পুলিশে দিয়ে দেন। পরে পুলিশের কাছে গেলে তোমাদের ভালো লাগে এ বলে আবার মাইর দিল। এরপর পুলিশ আমাদেরকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।



সাক্ষাৎকার গ্রহণ কালে খায়রুল হাসান জুয়েলের সাথে বিবার্তার স্টাফ রিপোর্টার মহিউদ্দিন রাসেল


তখন শাহবাগ থানায় আমাদের ছাত্রলীগের কর্মীরা কেউ গায়ের জ্যাকেট খুলে দিল, কেউ বাসা থেকে আমাদের জন্য গরম কাপড় এনে দিয়েছিল। তখন থানার একজন পুলিশ পকেট থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে আমাদের জন্য নাস্তা আনালেন। এরপরে আমাদের রক্তাক্ত শরীরের অবস্থা দেখে শাহবাগ থানা থেকে সরিয়ে রমনা থানায় নিয়ে গেল। তখন রমনা থানার পুরো এলাকা চলাচলের জন্য অফ করে দেয়া হলো । এরপরেও আমাদের আওয়ামী লীগের কয়েকজন সেখানে গেল। বিএমএ থেকে ডাক্তার গেল । তারা আমাদের ক্ষত-বিক্ষত স্থানে মলম দিল। আমরা সারাদিন সেখানে ছিলাম। তারপর সন্ধ্যার সময় কোনো মামলা খুঁজে না পেয়ে ডিটেনশন দিয়ে আমাদের জেলে পাঠিয়ে দিল। প্রথম তিনমাস করতে করতে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে একটা বছর আমাদের জেল খানায় কেটে গেল। নরমাল জেল আর ডিটেনশনের জেল আলাদা। জেলের মধ্যে জেল হলো ডিটেনশন। দেখা-সাক্ষাত করা যাবেনা , লোকজন আসতে পারবে না। এভাবে একবছর অন্ধকারে আমাদের কেটে গেল।


তারপর জেল থেকে বের হয়ে নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাদের সান্ত্বনা দিলেন। নেত্রী বললেন, তাকে আল্লাহ সুস্থ রাখলে আমাদের অবশ্যই রাজনীতি করার সুযোগ দিবেন। তারপর তো নেত্রী আমাকে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানালেন। আমাদের বিভাগ যখন ভাগ করা হলো, তখন আমাকে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হলো। এরপর রাজশাহী বিভাগে গিয়ে কমিটি করলাম , কর্মী সভা করলাম। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেখানে একটা শক্ত ঘাঁটি তৈরি করলাম। এর বাহিরে বিভিন্ন এলাকা গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জন্য কাজ করেছি।


বিবার্তা : স্বেচ্ছাসেবক লীগের নির্বাচন নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?


খায়রুল হাসান জুয়েল : আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিনবছর পর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সাড়ে সাত বছর পার হয়ে গেল। তারপরে এমন একটা পরিস্থিতিতে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছেন , সম্মেলন করতে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। একটা ভালো ,সুন্দর, কালারফুল সম্মেলন হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ সারা বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ সংগঠন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাও কোনো অভিযোগ নাই। পরিচ্ছন্ন সংগঠন হিসেবে এ সংগঠনের প্রতি নেত্রীর যে আস্থা সেটা ধরে রাখাই আমাদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। মাননীয় নেত্রী পরিচ্ছন্ন ,ত্যাগী , যাদের দুঃসময়ে ভূমিকা আছে , কমিটমেন্ট আছে, সাংগঠনিক দক্ষতা আছে ,তাদের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করছি।


বিবার্তা : এবারের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন সংগঠনের গতিশীলতার জন্য কেন জরুরী?


খায়রুল হাসান জুয়েল : এ সম্মেলনের কোনো বিকল্প নাই ।সম্মেলন মানে হচ্ছে একটা প্রজন্মের ব্ল্যাড সার্কুলেশন। নেত্রী যেভাবে চায় সেভাবে সংগঠনকে চালাতে হলে, নেত্রীর মুখ উজ্জ্বল করতে হলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। নতুন নেতৃত্ব ডায়ানামিক হলে সংগঠনটা এমনিতে ডায়ানামিক হয়ে যায়। লিডারশীপের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। সম্মেলনের মাধ্যমে একটা ভালো কমিটি ধারাবাহিকভাবে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা করছি।


বিবার্তা: আপনি শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পেলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে চান?


খায়রুল হাসান জুয়েল : আমাদের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের চেয়ে আমাদের চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণ আলাদা। সেবা, শান্তি, প্রগতি এ তিনটাই আমাদের মূলমন্ত্র। আর এগুলো মানবকল্যাণের সাথে সম্পৃক্ত। শান্তির অন্বেষায় , সেবা করে, প্রগতির পথে যাতে আমাদের সংগঠনটা ধাবিত হয় সে কাজটাই করবো। স্বেচ্ছাসেবক লীগ স্বেচ্ছায় সেবা দেয়। এটাতে কিন্তু আমাদের কোনো কিছু চাওয়া পাওয়া নাই। আমি নিজে সবসময় স্বেচ্ছায় সেবা দিয়ে থাকি। চলতি বছর ডেঙ্গুর সময়েও আমি আমাদের দলের আগেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করেছি। কোথাও আগুন লাগলে আমি ছুটে যাই। একটা মানুষও যদি উদ্ধার করা যায় তাতে নিজেকে ধন্য মনে হয়। একটু ত্রাণ, একটু মানুষের পাশে দাঁড়ানো এ কাজগুলো আমি বড়াবড়ই করি। মানবতা না থাকলে রাজনীতি করে কি হবে? এ কাজগুলো সংগঠনের ব্যানারে দেশব্যাপী করা গেলে সংগঠনের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। আমি মনে করি, এ সংগঠনটা হালুয়া -রুটির সংগঠন নয়, বরং মানবিক, সেবামূলক সংগঠন হিসেবে গড়তে চাই। যাতে নেত্রী খুশি হন, দেশের মানুষ খুশি হয়, সেটা আমার ভিশন। আমি সারা বাংলাদেশের ছাত্রলীগের কমিটি করেছি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি করেছি কোথাও থেকে একটা চকোলেট খাই নাই। তাই এ সংগঠনে নেতৃত্বে আসলে আমি কাউকে সংগঠনকে সেল করতে দিবো না। এটা নেত্রীর ভালোবাসার সংগঠন। এটার মুখ অবশ্যই উজ্জ্বল করতে হবে।


বিবার্তা: সম্মেলন থেকে কেমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন?


খায়রুল হাসান জুয়েল : দুঃসময়ে কারা নির্যাতিত ,ত্যাগী, সাংগঠনিক দক্ষতা আছে , কমিটমেন্ট আছে নেত্রীর প্রতি, এমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করি।


বিবার্তা : আপনাদের সম্মেলন প্রক্রিয়া কেমন?


খায়রুল হাসান জুয়েল : সম্মেলন একটা প্রক্রিয়া। এটার দুইটা সেশন আছে। প্রথম অধিবেশনে শুধু প্রোগ্রাম থাকে আর দ্বিতীয় অধিবেশনটা কাউন্সিলর, ডেলিগেটদের প্রোগ্রাম। এখানে অন্য কেউ উপস্থিত থাকেন না। এখানে যদি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব আলোচনার মাধ্যমে করা যায়, তাহলে আর ভোট হয় না। আর আলোচনার মাধ্যমে যদি না হয় তাহলে আমরা এটাকে ভোটে দেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তাতে আমাদের আলোচনার মাধ্যমে নেতৃ্ত্ব এসেছে। তারপরেও আমাদের নেত্রী এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটা আমরা সাদরে গ্রহণ করবো।


বিবার্তা/রাসেল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com