শিরোনাম
টোটাল শিক্ষাটাকে জাতীয়করণ করা হোক: কল্যাণ ট্রাস্ট সচিব
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:২৯
টোটাল শিক্ষাটাকে জাতীয়করণ করা হোক: কল্যাণ ট্রাস্ট সচিব
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

একজন শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট-অবসর বোর্ডে যে কনট্রিবিউশন করেন, পরবর্তীতে তা থেকে ১৮ থেকে ১৯ গুণ বেশি পান। কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের, শিক্ষকদের কনট্রিবিউশন ছাড়া আলাদা কোনো ওয়ে ছিল না, ইনকাম ছিল না। তারপরে আবার যখন ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হলো, তখন শিক্ষকদের পাওনাও ডাবল হয়ে গেল। ফলে একটি পর্যায়ে এসে কল্যাণ ট্রাস্টে সংকট দেখা দেয়। তখন আমরা শিক্ষকদের টাকা দেয়ার সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলি। এরপর বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় আমরা আবার সক্ষমতায় ফিরে আসি। আমরা শিক্ষকদের কল্যাণে অনলাইনসহ বেশকিছু কার্যক্রম শুরু করেছি। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি চাই, টোটাল শিক্ষাটাকে জাতীয়করণ করা হোক। তাহলে শিক্ষার মধ্যে আর বৈষম্য থাকবে না।



কল্যাণ ট্রাস্ট সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু


সম্প্রতি ব্যানবেইসের কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু এসব কথা বলেন। অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের বিষয়সহ কল্যাণ ট্রাস্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তার দীর্ঘ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ বিবার্তার পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা: কল্যাণ ট্রাস্টে সংকট কেন দেখা দিলো?


শাহজাহান আলম সাজু: ১৯৯০ সালে গঠন করা হয় কল্যাণ ট্রাস্ট। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে এই ট্রাস্ট বন্ধ করে দেয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটা বন্ধ থাকে। যার ফলে এই ৬ বছরে শিক্ষকদের থেকে কোনো চাঁদা আদায় করা হয়নি। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এছাড়া ট্রাস্টের আয়ের আরেকটা উৎস ছিল ছাত্রদের কাছ থেকে ৫ টাকা চাঁদা আদায়। ২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এটাও বন্ধ করে দেয়। এতে ১৭ বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা। এরপর আবার ২০১৫ সালে নতুন পে-স্কেল হয়েছে। এ স্কেলে সবার বেতন ডাবল হয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টের আইন অনুযায়ী, একজন শিক্ষককে সর্বশেষ পে-স্কেল অনুযায়ী দিতে হয়। এসব কারণে কল্যাণ ট্রাস্টে সংকট দেখা দিয়েছে।


বিবার্তা : এ সংকটের পর আপনারা কি সিদ্ধান্ত নিলেন?


শাহজাহান আলম সাজু: এ সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশের বেশকিছু সংগঠনের দ্বারা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হলো। এ বোর্ডে সংকট নিরসনে চাঁদাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা বললাম, এ টাকা কেন শুধু শিক্ষকরা দিবে? সরকারকেও দিতে হবে। যার ফলে এক বছর এটা স্থগিত ছিল। এরপরে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠকে বসি। সেই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য ছিল, আপনারা যে আগে ২ শতাংশ, ৪ শতাংশ নিতেন, তখন একজন প্রিন্সিপাল অবসরে কত টাকা পেতেন? আমরা বললাম ২২-২৩ লাখ টাকা। তখন আমাদের জিজ্ঞেস করা হলো, নতুন স্কেলে কত টাকা পান। আমরা বললাম ৪৫-৪৬ লাখ টাকা।


তখন মন্ত্রণালয় বলল, আগে ৬ শতাংশ দিয়ে ২২-২৩ লাখ টাকা পেতেন, এখন যদি নতুন স্কেলের কারণে ৪৫-৪৬ লাখ টাকা পান, তাহলে তো ১২ শতাংশ চাঁদা হওয়া দরকার। তখন আমরা বললাম, শিক্ষকদের চলতে কষ্ট হয়, মানবিক দিক থেকে দেখতে হবে। এটাকে অন্যভাবে মিলালে হবে না। তখন অর্থ মন্ত্রণালয় শর্ত সাপেক্ষ আমাদের বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে এ সংকট সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কল্যাণ ও অবসর বোর্ডে গত তিন অর্থ বছরে বরাদ্দ দিয়েছেন ১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।



আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মো. শাহজাহান আলম সাজু


বিবার্তা : আগে শিক্ষকদের বেতন থেকে ২ শতাংশ কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য কাটা হলেও এখন ৪ শতাংশ কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটা কেন অবৈধ হবে না, সে বিষয়ে হাইকোর্ট রুলও জারি করেছে। এ বিষয়ে কি বলবেন ?


শাহজাহান আলম সাজু : কল্যাণ ট্রাস্টের আইন হচ্ছে, একজন শিক্ষক যে টাকা বেতন পাবেন, তার ২ শতাংশ টাকা তিনি কল্যাণ ট্রাস্টে কনট্রিবিউশন করবেন। আর এটা এখন ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এদিকে অবসর বোর্ডে রাখবেন ৪ শতাংশ। আইনে এটাও সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, যদি কেউ চাঁদা রাখতে অস্বীকার করেন, তাহলে তিনি কল্যাণ সুবিধা পাবেন না। এটা কিন্তু বাধ্যতামূলক না। কেউ না চাইলে চাঁদা রাখবেন না, তখন তিনি সুবিধাও পাবেন না। ২ শতাংশ অতিরিক্ত নেয়ার কারণ হচ্ছে, আমাদের টার্গেট ছিল ২ শতাংশ যদি অতিরিক্ত কার্যকর করা হয় তাহলে আমরা তিন মাসের মধ্যে আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে পারবো।


তাছাড়া আমরাও শুনেছি যে, ২ শতাংশ অতিরিক্ত নেয়ার বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। তবে আমরা এখনো কপি পাইনি। যদি আমরা রুলের কপি পাই; তাহলে আমাদের আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।


বিবার্তা : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমানে কল্যাণ ট্রাস্টে কী ধরনের সংকট রয়েছে?


শাহজাহান আলম সাজু: আমাদের নিজস্ব কোনো অফিস নাই। আমরা ব্যানবেইসের ছোট্ট একটা অফিসে আছি। এখানে আমাদের জনবল ৪৮ জন থাকার কথা। অথচ আছে মাত্র ১০-১২ জন। কল্যাণ টাস্টের মতো এতো বড় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো অফিস না থাকায় আমাদের কাজের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা চাই একটা নিজস্ব ভবন, একটা শিক্ষা ভবন। আমরা আরো চাই, সরকার আমাদের এ সংকট দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিক।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতে অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু


বিবার্তা : কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।


শাহজাহান আলম সাজু : ইতোমধ্যে আমরা অনলাইন সিস্টেম চালু করেছি। এখন একজন শিক্ষককে ঢাকায় এসে আবেদন করতে হয় না। অনলাইনে টাকা চলে যাচ্ছে। শিক্ষকরা তাদের চেকও হাতের মুঠোয় পাচ্ছেন। একশো ভাগ সততার সাথে আমরা এখন কাজটা করি। একটা সময় আবেদন নিয়ে আসলে এই ভুল, সেই ভুল নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে হতো। দেখা গেছে, একজন শিক্ষক পঞ্চগড় থেকে আবেদনের জন্য ঢাকায় আসলে তার ভোগান্তির শেষ ছিল না। এখন সেটা হচ্ছে না। একজন শিক্ষক অনলাইনের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আবেদন করতে পারছেন। তাই এখন ঘুষ চাইবে কে? ঘুষ দিবে কে? সেই সুযোগ আর থাকছে না।



চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন মো. শাহজাহান আলম সাজু


বিবার্তা : বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী ?


শাহজাহান আলম সাজু: আমরা চাই একজন শিক্ষক যেদিন অবসরে যাবেন, তার পনেরো দিন পর বা একমাসের মধ্যে তিনি টাকাটা পেয়ে যাবেন। এ টাকা নিয়ে সব শিক্ষকেরই একটা স্বপ্ন থাকে। কিন্তু আমাদের অর্থ সংকটের কারণে যখন টাকাটা দিতে দেরি হয়, তখন তারাও কষ্ট পান। এছাড়াও শেষ বয়সে একজন শিক্ষক অসুস্থতাসহ নানাবিধ কারণে অসহায়ত্ববোধ করেন। এ টাকা পেতে দেরি হওয়া তাদের আরো অসহায় করে দেয়।


অধিক স্বচ্ছতার সাথে সর্বোচ্চ সেবা কিভাবে দেয়া যায় সেই লক্ষে আমরা কাজ করছি। এ সেক্টরকে ইনকাম জেনারিটিং করে আয় বৃদ্ধি করতে চাই। শুধু সরকারের কাছ থেকে হাত পেতে আনতে হবে কেন? আমরা দেশের সবচেয়ে বড় শ্রেণি পেশার মানুষ। আমরা সমাজের সবচেয়ে সম্মানীয়। আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী বলেন, সচিব বলেন সবাইতো কারো না কারো ছাত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল্যাণ ট্রাস্টের সংকট দূরীকরণে হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটি সংকট দূরীকরণে কাজ করছে। আমাদের এটাও বুঝতে হবে রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। আমরা চাই, বৈষম্যই থাকবে না, টোটাল শিক্ষাটাকে জাতীয়করণ করা হোক।


বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com