শিরোনাম
'ই-ব্যাংকিংকে দেশে গুরুত্বপূর্ণ করতে কাজ করে যেতে চাই''
প্রকাশ : ০৬ মে ২০১৮, ১৯:২৩
'ই-ব্যাংকিংকে দেশে গুরুত্বপূর্ণ করতে কাজ করে যেতে চাই''
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে, লন্ডন থেকে এমবিএ (মানব সম্পদ উন্নয়ন) এবং এমএসসি (আর্থিক ব্যবস্থাপনা) করে একটি সরকারি ব্যাংকে উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন মুস্তাফিজ মুনীর।


এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। এর আগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, আশা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে।


কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে, বিটিভিতে। টেকভ্যালি কম্পিউটরসে পাঁচ বছর লন্ডন থেকে ফিরে এসে কাজ শুরু করেন ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স লিমিটেডে, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডে।


বাংলাদেশে তিনিই প্রথম, যিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ই-ব্যাংকিং সেবা নিয়ে পিএইচডি করছেন। তাঁর ব্যক্তিজীবন বাংলাদেশে ই-ব্যাংকিঙয়ের ভবিষ্যতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন বিবার্তার সঙ্গে।


বিবার্তা : আপনার ছেলেবেলার কথা একটু শুনতে চাই।


মুস্তাফিজ মুনীর : আমি আসলে থানা, উপজেলা, জেলা শহরে কাটিয়েছি আমার ছোটবেলা। আমার শৈশব, আহা, কি দারুন ছিল! সারাদিন হৈ হৈ করে মাগরিবের আজান দিলে পড়তে বসা। বাবা অনেক রাগী ছিলেন। বাবার ভয়ে তটস্থ থাকতে হতো আমাদের। বাবা বিচারক হওয়ায় সমাজে মেলামেশা কম ছিল। তবে আমি মানতে চাইতাম না। বন্ধুদের নিয়ে অনেক মজা করতাম। আমরা তিন ভাইবোন মারামারি করতাম একজন কানাডা প্রবাসী চিত্রশিল্পী আমার ছোট, আর বড় বোন আইনজীবী। দেশে থাকেন আমার বড়। দিনাজপুরের কথা আমার বন্ধুদের কথা আমি কোনোদিন ভুলব না।


বিবার্তা : কলেজজীবন?


মুস্তাফিজ মুনীর : এটা অনেক অল্প সময়। দিনাজপুর থেকে ঢাকায় এসেছি মাত্র, ঢাকা চিনতে চিনতে কিভাবে কেটে গেল বুঝতে পারিনি। বন্ধুবান্ধব তেমন গড়ে উঠেছিল না। তবে কলেজ জীবনের একমাত্র বন্ধু চোখের ডাক্তার নাফিজ এখনও আমার সাথে আছে।



বিবার্তা : বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা- শুনেছি আপনি নাকি নাটকপাগল ছিলেন ?


মুস্তাফিজ মুনীর :নাটকপাগল ছিলাম কিনা বলা মুশকিল।


আমরা সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকে ছাত্র/ছাত্রী ছিলাম। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কালচারাল কিছু চোখে পড়ত না, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আর ৪/৫টা বিভাগের নবীন বরণ। আমরা ৪/৫ বন্ধু (এদের অনেকই এখন প্রবাসী) মিলে “শিকড়” করলাম, এর নাম, শ্লোগান, লেগো আমার করা ছিল। এভাবেই সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিকভাবে সংস্কতি চর্চা শুরু হয়। শুনেছি “শিকড়”-এর বয়েস এখন ২২ বছর। আমি কুষ্টিয়া শিশু একাডেমীতে ছবি আঁকা শিখতাম। এভাবেই শুরু, এর পরে দিনাজপুরে পত্রিকায় লেখা দিলাম - কবিতা। এখনো লিখি তবে একাডেমিক লেখা, সাহিত্য না।আমি কিন্তু থিয়েটার স্কুল থেকে নাটকের উপরে কোর্স করেছি। নান্দিক নাট্যদল সিলেটে কাজ করেছি। ২টি টিভি নাটকে অভিনয়ও করেছি।


বিবার্তা : শুনেছি আপনার কাছে সুনীলের লেখা চিঠি আছে।


মুস্তাফিজ মুনীর : আমি লেখার চেষ্টা করতাম, এর পূর্বশর্ত হল পড়া। তাই সাহিত্য নিয়ে একসময় অনেক পড়েছি। আমি সুনীলভক্ত ছিলাম। “ছবির দেশে কবিতার দেশে” পড়ে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। ব্যস লিখে ফেললাম একটা চিঠি। আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি চিঠির উত্তর দিলেন।


বিবার্তা : আমাদের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর নাকি আপনার কবিতার বইয়ে মুখবন্ধ লিখেছিলেন?


মুস্তাফিজ মুনীর : উনি দিয়েছিলেন, এ ছাড়াও আরো একটা বইয়ে জাফর ইকবাল স্যার লিখেছিলেন, এগুলো এখন ইতিহাস।


বিবার্তা : এখন কি করছেন এ বিষয়ে?


মুস্তাফিজ মুনীর : আমার আসলে অনেক স্বপ্ন ছিল। আমরা মুসলিম নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসার কারণে আমাকে আমার অনেক ইচ্ছে বলি দিতে হয়। আমি যতদূর মনে পড়ে ২০০০ বা তার একটু আগে এ জগত ছেড়ে দেই। ভারত সরকারের আইসিসিআর স্কলারশীপ নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রামাটিক্সে পড়ার সুযোগ পেয়েও পারিবারিক চাপে আমি সব ছেড়ে দেই। অর্থনীতি নিয়ে দেশে পড়া শেষ করে লন্ডনে চলে যাই। মাঝে জব করি কিছুটা সময় ।


যাহোক এখন আবার কাজ করছি। আমার কনসেপ্ট নিয়ে, আমার অর্থায়নে আমি আমার বন্ধু পাভেল একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি, জুন/জুলাই মাসে রিলিজ দেব, সব ঠিক থাকলে। গত বছর নায়করাজ রাজ্জাক মারা গেলে উনাকে নিয়ে একটা লেখা দিয়েছি জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট (নিমকো) তাদের জার্নালে প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে।


বিবার্তা : লন্ডনে গিয়ে কিছু করেছেন, শিল্প সাহিত্য নিয়ে?


মুস্তাফিজ মুনীর : ওখানে গিয়ে বাংলা টিভির জন্য একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বানালাম। এর পরে সিতার ফিউশন নামের একটা সংগঠনের সাথে কাজ করলাম । এর পরে যা হয় বিভিন্ন কারনে বাংলাদেশীদের সাথে এধরনের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখলাম। একটু বলি, দেশে থাকতে আমি বিটিভিতে ম হামিদের সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। উনি বাবার বন্ধু ছিলেন, তাই আমার কাজটা পেতে সহজ হয়।



বিবার্তা : বাংলাদেশে ই-ব্যাংকিং বিষয়ে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে যাচ্ছেন। কেমন লাগছে?


মুস্তাফিজ মুনীর : ভালো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববদ্যিালয়ের অর্থনীতি বিভাগ আমাকে এ গবেষণার অনুমতি দেয়। আসন্ন সিন্ডিকেট সভায় এটি অনুমোদন হবে আশা করি।


বিবার্তা : কেন এমন বিষয়কে গবেষণার জন্য বেছে নিলেন?


মুস্তাফিজ মুনীর : লন্ডনে গিয়ে ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টে এমএসসি করি ইউনিভার্সিটি অব ইষ্ট লন্ডন থেকে এবং সেসময় এ বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হই। আমাকে মনির (শাবিপ্রবির ছোট ভাই, বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী) ধারণা দেয়। এছাড়াও আমি ইউরোপের অনেক দেশে ঘুরেছি তাদের ব্যাংকিং সিস্টেম দেখে, তাদের সেবার মান দেখে এ বিষয়টি নিয়ে পড়ালেখা করি এবং পরে পিএইচডি করার সিদ্ধান্ত নিই।


বিবার্তা : ব্যাংকে কাজ করে সময় কিভাবে পেলেন?


মুস্তাফিজ মুনীর : ইচ্ছে থাকলে উপায় এমনিতেই বের হয়। তবে আমার কলিগরা আমাকে অনেক অনেক সহযোগিতার হাত না বাড়ালে এবং আমার কিছু বন্ধু/ছোট ভাই যারা আমাকে সাহায্য না করলে হয়ত সম্ভব হতো না। আমার পরিবারের সবাই, আমার শিক্ষকদের উপদেশ আমাকে সময় কিভাবে বের করতে হয় জানিয়েছেন ।


বিবার্তা : বাংলাদেশে ই-ব্যাংকিং-এর সুবিধা এবং অসুবিধা/ঝুঁকি কি?


মুস্তাফিজ মুনীর : সুবিধাগুলো হলো, আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে না, লাইনে দাঁড়াতে হবে না, একুরেটলি আপনি সব ট্রানজেকশন করতে পারবেন, খরচ কম হবে, আবার খুব দ্রুত কাজ সম্পন্ন নির্ভূলভাবে করা যায় ইত্যাদি। সব আসলে এত অল্প পরিসরে বলা মুশকিল।


একটা ঝুঁকির কথা বলি, বাংলাদেশে ই-ব্যাংকিংএর সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবার নাম এটিএম। এটিএমের মাধ্যমে বুথ থেকে টাকা তুলতে গেলে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়তে হয়। সার্ভার অনেক সময় ডাউন থাকে, এটিএম থেকে টাকা তোলা যায় না । কার্ড হারিয়ে যায় এটিএম-এর ভিতরে। পরে এটা ব্যাংক থেকে তুলতে একজন গ্রাহকই জানেন তাকে কি ভোগান্তি ভোগ করতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গতিও ই-ব্যাংকিং ভালোভাবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্তরায়। অনেক সময় বিল দেয়া যায় না। কেননা কয়েকটি বিভাগে ইন্টারনেটের গতি কিছুটা ভালো হলেও জেলা শহরে এর অবস্থা খুব খারাপ। এজন্য ই-ব্যাংকিং সিস্টেমের আওতায় দেশকে আনতে হলে ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে হবে। বিদ্যুত ব্যবস্থারও উন্নতি দরকার। অনেক গ্রাহক ই-ব্যাংকিং সম্পর্কে জানেন না অনেক কিছুই। মানসিকতা ও সচেতনতাও অনেকাংশে অন্তরায়।


আমাদের দেশে ২০১০ সালে ই-ব্যাংকিং সুবিধা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশে এর ক্ষেত্রটি এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। লিগ্যাল রিস্ক, অপারেশনাল রিস্ক, অবকাঠামোগত ঝুঁকি, এছাড়াও আরো কিছু ঝুঁকি আছে। অনেক ঝুঁকির ভিতরেও মোবাইল ব্যাংকিং বহুল ব্যবহৃত ই-ব্যাংকিং এর একটি সেবা ।


বিবার্তা : বাংলাদেশে ই-ব্যাংকিংয়ের অবস্থান কেমন?


মুস্তাফিজ মুনীর : বাংলাদেশে প্রচলিত ই-ব্যাংকিংয়ের সেবার মান অনেক নিচে। আমি গবেষণা করার জন্য বেশ কয়েকটি শহরে গিয়ে দেখেছি অনেকেই জানেই না ই-ব্যাংকিং কি? সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবার উচিত এটাকে নার্সিং করা। আমাদের দেশে ব্যাংকের সেবার মান বৃদ্ধির চাইতে মুনাফা বৃদ্ধির দিকে মনযোগ বেশি। আইটি খাতে আমাদের দেশে বাজেটও কম থাকে। তবে ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে তাদের বাজেট আরেকটু বাড়ালে এবং অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন করলে এক্ষেত্রে অনেক ভালো করা সম্ভব।


বিবার্তা : ই-ব্যাংকিং সিস্টেমকে দেশে আরও কার্যকরী করতে কি করতে হবে?


মুস্তাফিজ মুনীর : আমাদের ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে মানসিকভাবে আরো আধুনিক হতে হবে। পলিসিগত দিক দিয়ে এবং অবকাঠামোগত যেসব দুর্বলতা আছে তা ঠিক করতে হবে। এছাড়া আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ ব্যাংকমুখী হতে চায় না। তাদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে। বিশেষ করে মহিলারা। প্রচার করতে হবে। কার্যকর সেবা দিতে হবে। “ইথিক্স ইন ই-ব্যাংকিং” এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের সামাজিকভাবে এটাকে সচেতন করতে না পারলে প্রযুক্তি আমাদেরকে শান্তি দিলেও স্বস্তি দিতে পারবে না বলে আমি মনে করি। দিন দিন আমাদের ঝুঁকি বাড়ছে বৈ কমছে না।


বিবার্তা : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?


মুস্তাফিজ মুনীর : আমার বেশ কয়েকটি লেখা দেশে-বিদেশে গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এক সময় দেশের পত্রিকাতে লেখালেখি করেছি। সামনে আরো কিছু কাজ করার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আরো পড়াশুনা করতে চাই। ডেটা প্রোটেকশন নিয়ে ভাবছি কিছু করা যায় কিনা, পেরে উঠব কিনা জানি না। সেবার মান নিয়ে কাজ করতে চাই। ‘ই-ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালে। সেটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর উপযোগী করে নতুন একটি বই তৈরির কাজ করছি। কেউ গবেষণার পরামর্শ নিতে চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। গ্রাহককে সচেতন করার জন্য বা সেবার মান বাড়ানোর জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। এ বিষয়টিকে দেশে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য কাজ করে যাবো।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com