শিরোনাম
‘যারা আইসিটিতে দাঁড়াতে চায় তাদের সাহায্য করবো’
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০১৮, ২০:১৮
‘যারা আইসিটিতে দাঁড়াতে চায় তাদের সাহায্য করবো’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ফাউন্ডিং মেম্বার আমাদের প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা। সে সময়ে সফটওয়্যার খাতে কোনো সংগঠন ছিল না। বিসিএসই খুব অ্যাক্টিভ ছিল, কিন্তু তাদের কাজ ছিল শুধুমাত্র হার্ডওয়্যার নিয়ে। ফলে একটি সফটওয়্যার সংগঠন গঠন করা তখন সময়ের দাবি ছিল। করিম ভাইয়ের বুদ্ধিতেই শুরু হয় বেসিসের যাত্রা। এরপর সরকারের কাছ থেকে আমরা বেসিসের জন্য একটা ভবন নিই।


বিবার্তার সঙ্গে একান্ত আলাপে কথাগুলো বলেছেন বলেছেন বেসিস-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা রফিকুল ইসলাম।


বেসিস নির্বাহী কমিটির ২০১৮-২০ মেয়াদের নির্বাচনে টিমি বিজয় প্যানেলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের কার্যালয়ে বেসিস নির্বাচন নিয়ে বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে খোলামেলা আলাপ করেন মোস্তফা রফিকুল ইসলাম। একান্ত আলাপের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা : প্রোগ্রামিং ভালো লাগাটা কখন থেকে?


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : ছোটবেলায় জানতাম না কম্পিউটার কি, ভাবিও নাই কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশুনা করবো। তবে ছোট বেলা থেকেই আমি পড়াশুনায় ভালো ছিলাম। গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ আমার সহপাঠী ছিল। ওর সাথে আমার কম্পিটিশন ছিল, এখনও ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। দু'জন মিলে খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাও করতাম। এক সাথেই মেট্রিক দিলাম। মেট্রিক দেয়ার পর যা হয়, তিন মাস বন্ধ। সেই সময়ে বাবা একটি ক্লাসে ঢুকিয়ে দিলেন, কম্পিউটারের বেসিক ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার জন্য। এক মাসের কোর্স। যথারীতি পরীক্ষা হলো। সেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারও আমার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি পেলেন একশোতে ১০০ আর আমি ৯৯। সেই থেকে প্রোগ্রামিং ভালো লাগা শুরু। এরপর ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম। ইন্টারমেডিয়েট দিয়েই রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করিনি। এরপর আমেরিকাতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশুনা শুরু করলাম।



বিবার্তা : তথ্যপ্রযুক্তিতে পথচলা শুরুটা কীভাবে?


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : ঘটনাটি ১৯৯৩ সালের। সেই সময়ে আমি দেশের বাইরে থাকতাম। পড়াশুনা শেষে বেতন পেতাম ৭০ হাজার ডলার। তবে দেশ ও বাবা-মার টানে ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসে চলে আসি দেশে। কাজ শুরু করি বাবার কম্পানিতে; ৭০ হাজার টাকা বেতনে। এ নিয়ে তখন আমার কোনো আক্ষেপ ছিল না। দেশের বাইরে চাকরি করার চেয়ে দেশে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয়াকে নিজের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। দেশের টানে বিদেশ ছেড়ে এসে স্বপ্ন দেখি দেশের সফটওয়্যার কম্পানিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। সে থেকে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে পথ চলা শুরু।


বিবার্তা : তখন তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরের অবস্থা কেমন ছিল?


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : আমি যখন দেশে আসি তখন আমাদের আইসিটি খাতে অনেক বাধা ছিল। আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের অভাব ছিল। তখন আমাদের দেশে এই বিষয়ক তেমন কোনো পড়াশুনাই ছিল না। তবে আমরা ছেলে-মেয়েদের আইসিটির ওপর ট্রেনিং দিয়ে সফটওয়্যার খাতে আমাদের পদার্পণ।


বিবার্তা : এবার আসা যাক নির্বাচন প্রসঙ্গে। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কেন?


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : বেসিসের অনেক সদস্যকে আমি প্রায়ই হতাশ দেখতে পাই। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমার কম্পানি ২০০৮ সাল পর্যন্ত লসে ছিল। সেই সময়ে আমাকে ভাবতো হতো কীভাবে কম্পানিতে থাকা সহযোদ্ধাদের বেতন দেব? সেই সময়ে আমি বুঝেছিলাম টাকা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। যখন কেউ দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তার এই সাপোর্টটি প্রয়োজন। খুবই প্রয়োজন। এখন আমার মনে হয় টাকা পাওয়াটা অনেক কঠিন। দেশে এখন অনেক টাকা রয়েছে। তবে পলিসিগুলো এমনভাবে করা যে টাকা পেতে পেতে অনেকে খেই হারিয়ে ফেলে। বেসিস নির্বাচনে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্য, যারা আইসিটিতে দাঁড়াতে চায় তাদের দাঁড়াতে সাহায্য করা। আমাদের পলিসিগত সমস্যাগুলোকে সহজ করা। মোটা দাগে যদি বলি সেটি হচ্ছে, খুব স্বল্প সময়ে, স্বল্প শর্তে বা জিরো শর্তে নতুনদের অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দেয়া।



বিবার্তা : বর্তমানে সফটওয়্যার খাতে কী ধরণের সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন?


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : এ খাতে তিনটি সমস্যা রয়েছে। এক. ফান্ডিং, দুই. লোকাল ইন্ডাস্ট্রিকে প্রোটেক্ট করা আর সবশেষে পলিসিগত সমস্যা। আমাদের দেশে অনেক সফটওয়্যার তৈরি হয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক অন্যান্য সফটওয়্যার থেকে এগিয়ে। কিন্তু এই সফটওয়্যারগুলো রেখে দেশের বাইরে থেকে সফটওয়্যার নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে আমাদের দেশীয় সফটওয়্যারগুলো হুমকির সম্মুখীন। এছাড়া আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত সরকারের অনেক কঠিন পলিসি রয়েছে। এটি একটি বড় সমস্যা। আমার কাজ হবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করা।


বিবার্তা : মাত্র দুই বছরের মধ্যে কী এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব?


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : আমার মূল লক্ষ্য একটিই। এই সময়ের মধ্যে আমি অবশ্যই নতুনদের অর্থায়নের বিষয়টি সফল করতে চাই। এটি করতে পারলেই আমি খুশি। আমি আশাবাদী যে, আমি এই কাজটি ২০১৯ সালের মধ্যেই করতে পারব। আমি এটির প্রচলন শুরু করতে চাই। আমি জিতি বা না জিতি আমি চাই, এই বিষয়টি সবার মনে গেঁথে যাক।


বিবার্তা : টিম বিজয় থেকে দুর্জয়ে আসার পেছনের কারণ কী?


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : নির্বাচন উপলক্ষে আমরা ইতোমধ্যে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের পরিকল্পনা সব ভোটারের কাছে তুলে ধরছি। ভোটাররা আমাদের সঙ্গে আছেন। আমাদের বিশ্বাস, টিম বিজয়ী হবে। আমার মনে হয়, যেহেতু ভোটাররা আমাদের পাশে আছেন সেহেতু আমরা বিজয় অর্জন করে ফেলেছি। আমাদের টিম দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের এই গতিকে সামনে রেখে উন্নয়নের ধারায় ঐক্যবদ্ধ স্লোগানে এগিয়ে যাবে টিম দুর্জয়।


বিবার্তা : আপনি তো গত নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন. . .


মোস্তফা রফিকুল ইসলাম : আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে আমি এতো পরে টিম ঘোষণা দিলাম কেন। আমার কনফিডেন্স রয়েছে আমি এখানে এসেছি হারার ভয় নয়, জেতার জন্য। গতবার নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করে হেরেছি। সেই সময় আমি কেন হেরেছি সে বিষয়টি আমি বিশ্লেষণ করেছি। তখনই আমি আমার খুঁতটি ধরতে পেরেছি। তখন থেকেই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে তৈরি করেছি। এর ফলে আমি তরুণদের নিয়ে আমার টিম গঠন করেছি। যারা ইনোভেটিভ কিছু করেছে তাদেরকে নিয়ে আমার এই পথ চলা। আমার একটিই কথা যদি পরাজিত হই পুরো দায়িত্বটি আমার, আর যদি জিতি পুরো কৃতিত্ব আমার প্যানেলের সদস্যদের।


বিবার্তা/উজ্জল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com