শিরোনাম
দেশ হয়ে উঠবে আগের মতো প্রাণৈশ্বর্যে ভরপুর
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২০, ১৭:২০
দেশ হয়ে উঠবে আগের মতো প্রাণৈশ্বর্যে ভরপুর
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বজয়ের নতুন যাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। তার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা মনন, সৃজনশীলতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজ আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সুপরিচিত। তিনি টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে প্রত্যেকটা সুযোগকে সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই দুঃসময়েও তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আরো বেগবান হয়েছে। বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এই সংক্রমণ থেকে অনেকটা ভালো অবস্থানে আছে।


আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেখন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী।


শনিবার বিবার্তার সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী। দীর্ঘ আলাপে উঠে আসে তার জীবনের আদ্যোপান্ত। তার বেড়ে উঠা, পড়া-শোনা ও ক্যারিয়ার জীবন, বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কার্যক্রম, রাজনৈতিক ভাবনা, জীবন দর্শন, চিন্তা-চেতনা সব কিছু। বিবার্তার পাঠকদের জন্য এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-


বিবার্তা : আপনার জন্ম, বেড়ে উঠা কোথায়?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : আমার জন্ম চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায় পালগিরি গ্রামে এক সম্রান্ত খন্দকার বাড়িতে। আব্বা ফরিদপুর উপজেলায় প্রাইমারি টিচার ট্রেইনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) শিক্ষক ছিলেন। সেই সুবাদে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে সেটেল হয়ে যাই। সেখানে কাটে আমার শৈশবের স্বর্ণালী দিনগুলি। আমি ফরিদপুরে জেলা স্কুলে লেখাপড়া করি। পরে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকা সিদ্দেশ্বরী বয়েস হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং মতিঝিল শহীদ স্মরণিকা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করি। পাশাপাশি মাদরাসাতেও লেখাপড়া করি।


বিবার্তা : আপনি তো দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। কোথায় এবং কোন বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং সৌদি আরবে রিয়াদ ইউনিভার্সিটির অধীনে সমাজবিজ্ঞানে আরবিতে গ্রাজুয়েশন করি। পরে আমেরিকার মেরিল হাস্ট ইউনিভাসিটি থেকে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) সম্পন্ন করি।


আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির ইফতার ও দোয়া মাহফিলেখন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী।


বিবার্তা : বর্তমানে কী কী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছেন?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন বোর্ডের গভর্নর, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান, ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেন্ট্রাল রিলিজিয়াস অ্যাফায়ার্সের সাব কমিটির চেয়ারম্যান, ফরিদপুর দুস্থ ও প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সেক্রেটারি, দ্য হলি কোরআন মিশন ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানহিসেবে কাজ করছি।


এছাড়াও ২৭ বছর ধরে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সম্মানিত জুমা খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। কুমিল্লার তিতাস থানায় আমার নিজের রহমাতুল্লা মিল্ল আল আমিন দরবার শরিফ ও মুসলিম এতিমখানা মাদরাসা আছে। সেটাও পরিচালনা করছি।


বিবার্তা: ক্যারিয়ার জীবনের শুরুটা কীভাবে?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : সৌদি আরবে পড়াশোনা শেষ করে সৌদি আমেরিকান ব্যাংকে সিনিয়রক্রেডিট অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমার পেশাগত জীবন। সেখানে ৭ বছর চাকরি করেছি। কাজ করার পাশাপাশি ধর্ম নিয়ে সুফিয়াজমের উপরে রিসার্চ করেছি।


আওয়ামী লীগের সভাপতি শখ হাসিনার স্বদেশ প্র্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনায়খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী।


বিবার্তা : দ্য হলি কোরআন মিশন ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনার দায়িত্ব বিষয়ে কিছু বলুন।


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : দ্য হলি কোরআন মিশন ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম সারা বিশ্বে রয়েছে। বিশেষ করে ৯/১১ এরপরে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ এ নিয়ে লন্ডন, ইউরোপ, আমেরিকায় মানুষের মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল সে বিষয়গুলো দূর করতে আমি কাজ করেছি। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে যেমন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডন, সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ম বিষয়ে সভা-সেমিনার, আলোচনা সভা, মহাফিলে মানুষকে দাওয়াত দিতাম আর সেখানে বক্তৃতা দিতাম। ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছি। ইসলামের বিভিন্ন দিকে বিষয় নিয়ে ৩৯টি লিখেছি। এর মধ্যে ৩০টি বই বাংলায় এবং ৯টা ইংরেজিতে। বইগুলো সারা বিশ্বে পাওয়া যাচ্ছে।


বিবার্তা : যতদূর জানি আপনি ২০০৮-২০০৯ সাল মেয়াদে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে এলেন কীভাবে?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : ২০০৯ সালে নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপা বললেন, আপনি লন্ডন থেকে দেশে আসেন। আপনার মতো লোক আমাদের দলে দরকার আছে। আপার কথা মতো আমি চলে আসি। পরে তিনি ধর্মীয় বিষয়গুলো দেখার জন্য আমাকে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য করলেন। এরপর শুরু করে দেই দলের হয়ে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে দুটা নির্বাচনে আপার সাথে সাথে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য দিয়েছি। তখনই আপা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামূলক কমিটির সদস্য বানিয়ে দিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শকে বুকে ধারণ করে আপার দিকনির্দেশনায় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। বিশেষ করে দেশের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশের প্রত্যেকটা জেলায় গিয়ে গিয়ে বিশাল জনসমাবেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরি। ইসলামের শান্তি ও ন্যায্যতার পক্ষে সারা পৃথিবীতে ৪৮টা দেশ ও ৭টা উপমহাদেশে ভ্রমণ করেছি।


বিবার্তা : আপনি বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশনে কাজ করছেন। এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শগুলো যেমন, ক্ষুধা, দারিদ্র, জঙ্গি, মাদক, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়গুলো সারাদেশে সভা-সমাবেশে মানুষকে জানানো। তৎকালীন বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশনের যে মহাপরিচালক (ডিজি) ছিলেন উনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। আমরা পাশে থেকে সহযোগিতা করেছি যাতে সরকারের কোনো রকম বদনাম না হয়। ইসলামি ফাউন্ডেশনে কাজ হলো দেশের মানুষের শান্তির জন্য কাজ করা। এখনও একইভাবে কাজ করে যাচ্ছি।


আওয়ামী লীগের সভাপতি শখ হাসিনার স্বদেশ প্র্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনায় বক্তব্য রাখেনখন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী।


বিবার্তা : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ দুর্যোগকালে দুস্থ মানুষদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহায়তায় এবং আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুস্থ মানুষের জন্য কুমিল্লার তিতাসে, ফরিদপুরে রিলিফ, করোনা ভাইরাস মহামারি ঠেকাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এন্টিসেপটিক সামগ্রী, হ্যান্ড ওয়াশসহ প্রায় সব সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছি। এছাড়াও রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় মাস্ক, গ্লাবস দিয়েছি।


বিবার্তা : দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মতামত কেমন?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : কারোনা সংক্রমণের ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জনগণের জীবন ও জীবিকা সুনিশ্চিত করতে নিঃস্বার্থভাবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। করোনা সংকটের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেই বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এই সংক্রমণ থেকে অনেকটা ভালো অবস্থানে আছে। আশা করছি তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ শিগগিরই আগের রূপে ফিরে আসবে।


বিবার্তা : একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র নায়কের নেতৃত্বেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : দেখুন, বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রপরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তখন এই দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে বাস্তবায়ন করেছেন বহুমুখী উদ্যোগ। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি তার অগাধ প্রেম ও ভালবাসারই তার রাজনীতির অনুপ্রেরণা। আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন সফল রাষ্ট্র নেতা। তিনি যে কোনো কঠিন পরিস্থিতে চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন। জ্বালাও-পোড়াও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বাধা অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী।


বিবার্তা : আগামীর বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখতে চান?


খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী : আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধশালী একটা সোনার বাংলা। করোনাকালীন এই মাহাদুর্যোগের অবসান ঘটিয়ে দেশ হয়ে উঠবে আগের মতো প্রাণৈশ্বর্যে ভরপুর। মেহনতি কৃষক, কল-কারখানার শ্রমজীবী মানুষ, অবহেলিত নারী সমাজ, গ্রাম-শহরের গরিব-মধ্যবিত্ত, সৃজনশীল বাংলার তরুণ ও ছাত্রসমাজ দেখতে পাবে মুক্তির পথের নতুন দিশা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে জাতি দেখবে নতুন দিনের নতুন সূর্য।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com