শিরোনাম
“ছাত্রলীগের সমাজসেবা সেলকে মানবিক সেল হিসেবে পৌঁছে দিতে চাই”
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৩৩
“ছাত্রলীগের সমাজসেবা সেলকে মানবিক সেল হিসেবে পৌঁছে দিতে চাই”
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এ ছাত্র সংগঠনের জন্ম হয়। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী এ ছাত্র সংগঠনটি জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এ ছাত্র সংগঠন। চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সময়েও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এ ছাত্র সংগঠন। করোনাভাইরাসের শুরু থেকে সংগঠনটি কৃষকের ধান কাটা থেকে শুরু করে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ এবং কর্মহীন মানুষের পাশে খাদ্য বিতরণ, ব্ল্যাড ব্যাংক, জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা, শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া কমানোসহ প্রভৃতি কাজ করেছে। সর্বশেষ সংগঠনটি রবিবার (২৯ নভেম্বর) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সে কাজও শুরু করেছে সংগঠনটি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক শেখ স্বাধীন মো. শাহেদের নেতৃত্বে হচ্ছে এ কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এই ছাত্রনেতা দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি হিসেবে। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতিও।


সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে করোনাকালীন ছাত্রলীগের কার্যক্রম ও তার দায়িত্বে থাকা সমাজসেবা সেল নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বলেছেন তিনি। তার আলাপচারিতার চুম্বক অংশ বিবার্তার পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা : কোন চিন্তাভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য পাশে দাঁড়ালেন?


শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ : করোনাকালীন ছাত্রলীগের যে মানবিক কার্যক্রম এটা হচ্ছে তার একটা ধারাবাহিকতা। করোনার শুরু থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত হারে যাতে বেতনসহ অন্যান্য ফি নেয়া হয় সেই দাবি আমরা জানিয়েছি। এ কার্যক্রম নেয়ার আগে আমরা প্লাজমা ব্যাংক নিয়ে কাজ করেছি। জয় বাংলা অক্সিজেন সার্ভিস নিয়ে কাজ করেছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেতনভাতা কমানোর যে আন্দোলন সেটা আমরা গত অক্টোবর মাস থেকে শুরু করেছি। তারও আগে আমরা শিক্ষার্থীদের মেস ও বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে কাজ করেছি। এটা করেছি চলতি বছরের জুন-জুলাই থেকে। আমরা ওইসময় প্রায় ২ হাজার ২৬৭ টা সমস্যা সমাধান করেছি। তারপর আমাদের কাছে মনে হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বছরের শেষের দিকে এককালীন অনেক বেশি বেতন নিবে এ চিন্তাভাবনা থেকে আমরা প্রথমে ফরিদপুর জেলা থেকে কাজটা শুরু করেছিলাম। এ জেলার বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতনভাতা কমানোর জন্য আমি ডিসির সাথে কথা বলেছি। আর তাকে দরখাস্তও দিয়েছি। এরপর উনি তাৎক্ষণিকভাবে জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেতন অর্ধেক নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। এরপর দেখলাম নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখে এ সংক্রান্ত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো। এরপর এ প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে পুরোদমে কাজ শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় এ বিষয়ে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর আমরা দেশের ৪ জেলার ২৭ টি স্কুল -কলেজের বেতনভাতা কমাতে সক্ষম হয়েছি। এখনো অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছি।


বিবার্তা : আপনার দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সেল নিয়ে সামনের পরিকল্পনা কি?


শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ : বর্তমান কমিটিতে যখন আমি সমাজসেবা সেলের দায়িত্ব নেই তখন আমি একটা কথা বলেছিলাম, সেটা হলো, সমাজসেবা সেলকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সাধারণ মানুষ সমাজসেবা সেলের মাধ্যমে মানবিক সুবিধাটা পাবে। এ সেল নিয়ে আমার স্বপ্ন হচ্ছে, সারাদেশের ছাত্রলীগের প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মী এবং দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে এ সেল মানবিক সেল হিসেবে পৌঁছে যাক।


বিবার্তা : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধীতাকারীদের ব্যাপারে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে আপনার বক্তব্য কি?


শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ : এটা মৌলবাদী, কাঠমোল্লাদের এক ধরণের চালবাজি। এমন নয় যে, ২০২০ সালে এ সময়ে এসে ভাস্কর্য তৈরি হচ্ছে। এর আগেও সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে যুগে যুগে ভাস্কর্য ছিল। বিরোধীতাকারীদের বিরোধিতার কারণ হচ্ছে এসময়ে পদ্মা সেতু সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে, কাজেই তারা এ সেতুর কৃতিত্ব যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না পায়, সেজন্য তারা বিতর্ক সৃষ্টি করে পরিকল্পনার মাধ্যমে এ কাজটি করছে। বহু আকাঙ্খিত পদ্মা সেতু সম্পন্ন হয়ে যাতে জনগণের কাছে না পৌঁছায় সেজন্য তারা মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি করে পদ্মা সেতুর কাজটা ঢাকতে চাচ্ছে। এর আগেও প্রতিক্রিয়াশীল এই কাঠমোল্লারা এ পদ্মা সেতু জোরাতালি দিয়ে হবে বলে নানান গুজব ছড়িয়েছিল।


বিবার্তা : করোনাকালে ছাত্রলীগের সাথে বাকি ছাত্র সংগঠনগুলোর পার্থক্য কোথায় দেখেন?


শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ : এ প্রশ্নটি আমাকে না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের করলে তারাই ভালোই মূল্যায়ন করতে পারবেন। তবে অনেকে আছে, যারা টেলিভিশনে গিয়ে বড় বড় কথা বলে। এই করছি, সেই করছি বলে জাহির করে বেড়ায়। কিছু কিছু ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কাজ না করে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কাঁপাতেও দেখা যায়। করোনাকালে আমার সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের পাশে সুসংগঠিতভাবে প্রত্যেকটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে। মেস ভাড়া সংক্রান্ত আমরা যে অভিনব কার্যক্রম নিয়েছি সেটা সারাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমরা প্রায় অর্ধকোটি টাকা মেস-বাসা মালিকদের সাথে কথা বলে কমানোর ব্যবস্থা করেছি। আমাদের জয় বাংলা সার্ভিস এখনো চলমান রয়েছে৷ করোনার শুরুর দিকে আতঙ্কে যখন কেউ লাশ ছুঁয়ে দেখার সাহস করেনি, তখন ছাত্রলীগই দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেছে। ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় করোনাকালীন যে মানবিক ছাত্রলীগ আত্মপ্রকাশ করেছে সেটা কোনো ছাত্র সংগঠনই করেনি।


বিবার্তা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নির্দেশনা না মেনে আগের মতো বেতনভাতা নিলে এমন অভিযোগ আসলে ছাত্রলীগের ভূমিকা কি হবে?


শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ : আমরা প্রথমত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে সরকারি নির্দেশনা মানার উদাত্ত আহ্বান জানাই। এরপরেও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটা না মানলে আমরা অভিযোগ পেলে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলবো। ইতোমধ্যে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এসেছে। পরে আমরা এসবের সমাধান করেছি। বেসরকারি মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও করোনার বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বেতন ভাতাদি নেয়ার আহ্বান জানাই। এটা নিয়েও আমরা কাজ করছি।


বিবার্তা/রাসেল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com