
বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা নীতিতে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে আরব আমিরাত সরকার। ভিজিট ভিসা, আনস্কিলড লেবার ভিসা ও পার্টনার ভিসা প্রদানে কঠির শর্ত জুড়ে দিয়েছে দেশটি। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশিদের স্রোত কমেছে।
সাম্প্রতিক রেমিট্যান্স প্রেরণে শীর্ষে রয়েছে আরব আমিরাত। কিন্তু এ ভিসানীতি অব্যাহত থাকলে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
মূলত দীর্ঘদিন ধরেই ভিসার মেয়াদ শেষেও অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন সময় আনা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আরব আমিরাতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে। এ প্রবণতা ঠেকাতে কঠোর হলো দেশটি। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসায় ব্যাপক কড়াকড়ি করেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি ভিসা প্রাপ্তিরা।
এদিকে স্কিল ভিসার ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম কঠোরতা। সত্যায়িত গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো বাংলাদেশিকে ভিসা দেয়া হচ্ছে না। যারা সার্টিফিকেট দিচ্ছেন তাদের সার্টিফিকেটগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সত্যায়ন করার পর, মূল সার্টিফিকেট পুনরায় বাংলাদেশ দূতাবাস বা কন্সূলেটে সত্যায়ন করতে হয়। এরপর আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়নের পর মিলবে চাকরির ভিসা।
প্রবাসী কমিউনিটির নেতা ইসমাইল গনি চৌধুরী বলেছেন, আমিরাতে নতুনভাবে যে ভিসানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে, এর ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন কড়াকড়ি চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বে। দুবাইতে আগে একটি লাইসেন্সে ৩/৪ জনের পার্টনার ভিসা করার সুযোগ ছিল। এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লাইসেন্স করতে প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাও দেখাতে হবে। স্কিলড ভিসা যারা করতে পারতেছে তারা করতেছে সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে। যারা পারতেছে না তাদের জন্য একটি সুযোগ ছিল এটা হল যে লাইসেন্সটার জন্য পার্টনার ভিসা।
দুবাই হাবিবুর রহমান টাইপিং এর স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান জানান, যেকোনো ধরনের লাইসেন্সে পার্টনার ভিসা দুজনকে দেয়া হতো। সেটা এখন কমিয়ে একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে।
আজমান মানামা টাইপিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন সুমন জানান, স্কিলড ভিসার ক্ষেত্রেও জুড়ে দেয়া হয়েছে কঠিন শর্ত। গ্র্যাজুয়েশন সার্কিট ছাড়া কোন বাংলাদেশিকে ভিসা দেয়া হচ্ছে না। সার্টিফিকেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ দূতাবাসে সত্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে তাকে প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা দেখাতে হবে।
এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য ভিজিট ভিসা অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করলে ৮০ শতাংশ আবেদন রিজেক্ট হচ্ছে। কেউ কেউ ভিজিট পাওয়ার পর দুবাই ঢোকার চেষ্টা করলেও তাদের অনেককেই নানা কারণ দেখিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে শ্রম বাজারে ব্যাপকভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
দুবাই নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেনের কাছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন , আরব আমিরাতে ভিজিট ভিসায় আসা সহজ না। এখন থেকে যারা আমিরাতে আসবেন তাদেরকে ভিজিট ভিসা পেয়ে এয়ারপোর্টে ৩ হাজার দেরহাম বা সমপরিমাণ ডলার পাশাপাশি আসা-যাওয়ার টিকেট সঙ্গে রাখতে হবে। ভিজিট ভিসায় এসে যার কাছে অবস্থান করবেন তার পরিচয় পর্ব এয়ারপোর্টে শো করতে হবে। তবে তিনি প্রবেশ করতে পারবেন। অন্যথায় এসব কাগজপত্র দেখাতে অপারগতা হলে এয়ারপোর্ট থেকে দেশে ফেরত যেতে হবে।
তিনি বলেন, যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করার লক্ষ্যে ভিজিট ভিসায় আমিরাতে আসেন তারা আমিরাতে এসে ব্যবসায়ী লাইসেন্স বানিয়ে ঐ লাইসেন্সের উপর ভিসার আবেদন করলে আগে কমপক্ষে ৩টি ভিসা পাওয়া যেত। এখন সে ক্ষেত্রে ২টি কমিয়ে ১টি করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, অনেক বাংলাদেশি এই দেশে ভিজিট ভিসায় এসে ইনভেস্টর ভিসা লাগিয়ে নিম্নমানের কাজ করে।
যেমন: রাস্তার পাশে বসে শাকসবজি বিক্রি করা, মাছ মুরগি,পান সুপারি ,পুরাতন কাপড়-চোপড়, ডাস্টবিন থেকে অ্যালুমিনিয়ামের ডিব্বা কুড়িয়ে বিক্রি করা। নানা রকম বেমানান কাজ করে যা এদেশের প্রশাসনের নজরে পড়ে। যা এই দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এই ক্ষেত্রে ইনভেস্টর ভিসার সম্মানার্থে ইনভেস্টর ভিসা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই এইসব অপরাধ কার্যক্রম থেকে ফিরে আসা উচিত। তবে সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশিদের ভিসা খোলার ক্ষেত্রে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]