হামাস এখন অনুশোচনায় ভুগছে: ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৩৪
হামাস এখন অনুশোচনায় ভুগছে: ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার জন্য ‘অনুশোচনায়’ ভুগছে।


২৪ অক্টোবর, মঙ্গলবার গাজা সীমান্তের কাছে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।


হারজি হালেভি বলেন, ‘ইসরায়েল একটি যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে, যা হামাস গোষ্ঠী দ্বারা শুরু হয়েছিল। (হামাস) ইতিমধ্যে এটির জন্য অনুতপ্ত। কৌশলগত কারণে গাজায় আমাদের স্থল অভিযান বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আইডিএফ ও সাউদার্ন কমান্ড স্থল যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে মানসম্পন্ন আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে।’


ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান আরও বলেন, ‘সামরিক বাহিনী স্থল অভিযান শুরু করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা সরকারের সঙ্গে বসে পরবর্তী ধাপের হামলা ও অভিযানের সময় চূড়ান্ত করবো। আমরা আরও বেশি প্রস্তুতির জন্য প্রতিটি মিনিট কাজে লাগাচ্ছি। প্রতি মিনিটে শত্রুর বিরুদ্ধে হামলার তীব্রতা বাড়ানো হচ্ছে, তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে, তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে চলেছি এবং পরবর্তী পর্যায়ের হামলার জন্য আরও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমাদের দেশ, বাড়িঘর ও নাগরিকদের সুরক্ষা যেকোনো উপায়ে আমরা নিশ্চিত করবো।’


গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি নিহতের ঘটনা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান পর নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন হালেভি। তার দাবি, এর ফলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাস্তবতায় মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য খরচ বাড়বে। তার মতে, ‘এই যুদ্ধের একটি লক্ষ্য রয়েছে, হামাস নেতৃত্ব ও এর অধীনে যারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।’


আইডিএফ প্রধান বলেন, ‘হামাসের নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা নিয়ে কারও সন্দেহ প্রকাশ করা উচিত নয়। আমরা আশা করবো, হামাস জিম্মি করা ইসরায়েলি নাগরিকদের সম্মানের সাথে আচরণ করবে। এটি অত্যাবশ্যকীয়। গত ৭ অক্টোবর হামাস যা করেছিল এবং তারপর থেকে যা করে চলেছে, তার জন্য তাদের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে।’


তিনি আরো যোগ করেন, ‘আইডিএফ হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে, গাজার জনগণের সঙ্গে নয়। আইডিএফ চায় গাজার বাসিন্দারা এই যুদ্ধে যতটা সম্ভব অক্ষত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাক। এই কারণেই ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে তারা খাবার, পানি ও ওষুধ পাবে। গাজার প্রতিটি বাসিন্দাকে তাদের জীবনের স্বার্থে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’


তার দাবি, বেসামরিক নাগরিকদের যেখানে জ্বালানি প্রয়োজন, ইসরায়েল তা নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা হামাসকে জ্বালানি দিতে দেব না, যা দিয়ে তারা ইসরায়েলের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।’


মঙ্গলবার বিকেলে ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি রকেট ছুড়েছে হামাস। এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় অবিরাম বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম কয়েকদিন হামাস হাজার হাজার রকেট হামলা চালালেও, গত কয়েকদিনে তা বেশ কমে এসেছে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, এটি মোটেও স্বস্তির কারণ নয়। সম্ভবত এটি হামাসের একটি ইচ্ছাকৃত চক্রান্ত।


আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘আমাদের ঘরে বসে আত্মতৃপ্তি করা উচিত নয়। এটা আমাদের নীরব রাখার জন্য শত্রুর একটি প্রয়াস। হামাসের এখনও উল্লেখযোগ্য রকেট-লঞ্চিং ক্ষমতা রয়েছে।’


ইসরায়েলের সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হামাস দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের লক্ষ্যে অস্ত্রের মজুদ সংরক্ষণের জন্যই রকেট হামলার গতি কমিয়ে দিয়েছে।


অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বড় ধরনের স্থল অভিযান পরিচালনার জন্য ইসরায়েল দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে তাদের সেই অভিযান আসন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আইডিএফ গাজা উপত্যকায় অবিরাম বোমাবর্ষণ করে আসছে।গাজার বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণে পালানোর আহ্বান জানিয়েছে। স্থল আক্রমণ শুরু হলে ইসরায়েলি সেনাদের জন্য অভিযানটি সহজ করার জন্য পুরো উত্তর গাজাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপকভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে আইডিএফ।


ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় হামাসের প্রায় ৪০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন ফিল্ড কমান্ডারকে হত্যা করেছে।


যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজায় স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অর্জনযোগ্য সামরিক লক্ষ্যের অভাব রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, আইডিএফ এখনও স্থল অভিযানের জন্য প্রস্তুত নয়।


গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে অর্ধেকই শিশু।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com