লিবিয়ায় সমুদ্র থেকে ভেসে আসছে লাশ, মৃত্যুর শঙ্কা ২০ হাজার
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৪৫
লিবিয়ায় সমুদ্র থেকে ভেসে আসছে লাশ, মৃত্যুর শঙ্কা ২০ হাজার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের তাণ্ডবে মৃত্যুনগরীতে পরিণত হয়েছে লিবিয়া। বিশেষ করে বন্দরনগরী দেরনার পথে পথে পড়ে আছে মরদেহ। মৃত মানুষ ভেসে আসছে সমুদ্র থেকেও। অনেক পরিবার সমূলে নির্মূল হয়ে গেছে। পচা দেহের গন্ধ আর স্বজন হারানোর আর্তনাদ মিশে ক্রমশ ভারী হচ্ছে লিবিয়ার বাতাস।


এর আগে সাড়ে ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ও ১০ হাজার নিখোঁজের কথা শোনা গেলেও বুধবার স্থানীয় চিকিৎসক ও দাতা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ২০ হাজার হতে পারে।


কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়েছে এমন ঘটনা অসংখ্য। অধিক ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোয় পৌঁছানো কঠিন। ফলে প্রাণহানির সঠিক হিসাব পেতে সময় আরও লাগবে। দেরনা শহরের বাসিন্দা মুস্তাফা সালিম পরিবারের ৩০ জন সদস্যের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।


সালিম জানান, সেই রাতে সবাই ঘুমাচ্ছিল। এমন বিপর্যয় যে আসবে, এর জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউ। আমার পরিবারেরই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।


দেরনা শহরে জন্ম ওয়ালিদ আবদুলাতির। এখন তিনি ত্রিপোলিতে। ওয়ালিদ জানতে পেরেছেন, দেরনায় তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য হয় মারা গেছেন, নয়তো নিখোঁজ। তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবার ১০ জন পর্যন্ত স্বজন হারিয়েছে।


দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের বেসরকারি বিমান চলাচলবিষয়ক মন্ত্রী হিশেম আবু কিওয়াত বলেছেন, সমুদ্র থেকেও প্রতিনিয়ত ভেসে আসছে ডজন ডজন মরদেহ। যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে তা পুনর্গঠনে বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত লাগতে পারে।


লিবিয়ায় এই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাকে ‘নজিরবিহীন বিপর্যয়’ বলছেন আলজাজিরার সাংবাদিক মালিক ত্রেইনা। তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেরনা। সৈকতে লাশ ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এসব লাশের বর্তমান অবস্থা এমনই যে এখন আর তা উদ্ধার করার মতো নয়।


বুধবার দেরনা শহরে যান আনাস নামের এক চিকিৎসক। তিনি বলেন, আমরা সড়কে অসংখ্য মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। বড় বড় যন্ত্র দিয়ে কবর খোঁড়া হচ্ছে। সমাহিত করার আগে লাশগুলো রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে, যেন স্বজনদের কেউ দেখলে তা শনাক্ত করতে পারেন।


মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে দেরনাসহ লিবিয়ার অধিকাংশ নগরে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ধরনের একটি বিপর্যয় মোকাবিলা করার মতো অভিজ্ঞতা লিবিয়ার নেই। দেরনা শহরের মেয়র আকরাম আব্দুল আজিজ জানান, শহরের ২০ শতাংশ এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।


রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত লিবিয়ায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনাও বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার দেশটির পশ্চিমে ত্রিপোলি নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে দেরনা শহরটি পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়। সেখানে আরেকটি সমান্তরাল প্রশাসন কাজ করে। আর এই প্রশাসন কমান্ডার খলিফা হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের প্রধান এবং লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুলহামিদ আল-দাবিবাহ মঙ্গলবার বলেছেন, বন্যা নজিরবিহীন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এছাড়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলের প্রধান মোহাম্মদ আল-মেনফি। দুই সরকারকেই দোষারোপ করছে জনগণ। অনেকে আবার আশা করছেন, এই সংকটও যদি রাজনীতিকদের ঐকমত্য ফেরাতে পারে।


রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়ে পার্বত্য এলাকায় স্থাপিত শহর রক্ষাকারী দুটি বাঁধ। প্রবল পানির তোড়ে ভেসে যায় কয়েক মাইল ধরে থাকা বহুতল ঘরবাড়ি-স্থাপনা। চলতি পথে ভাসিয়ে নেয় হাজার-হাজার মানুষকে। ধ্বংসাবশেষ নিয়ে ফেলে শহরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরে। এই দুর্যোগে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে ত্রিপোলি ও বেনগাজিভিত্তিক উভয় সরকার। এরইমধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি-তুরস্ক-কাতারসহ কয়েকটি দেশ সহায়তায় এগিয়ে গেছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com