এশিয়ার চরম দরিদ্রের সংখ্যা সাড়ে ১৫ কোটি: এডিবি
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪৮
এশিয়ার চরম দরিদ্রের সংখ্যা সাড়ে ১৫ কোটি: এডিবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বর্তমানে এশিয়ার স্বল্পোন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন অন্তত ১৫ কোটি ৫২ লাখ মনুষ। ২০২০ সালের করোনা মহামারি এবং তার প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর শুরু হওয়া মূল্যস্ফীতি এশিয়ায় চরম দারিদ্রের শিকার লোকজনের সংখ্যা বাড়িয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ।


বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিশ্বের বৃহত্তম আঞ্চলিক ঋণদাতা সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে সেই প্রতিবেদনটি।


এডিবির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনার কারণে ২০২২ সালে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। তবে করোনা না হলেও অঞ্চলটিতে ওই বছর আট কোটি ৭২ লাখ মানুষ চরম গরিব থাকত।


২০২১ সালে এডিবির এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালে এশিয়ায় আগের অনুমানের তুলনায় অতিরিক্ত ৭ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৮ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে।


এরও আগে ২০১৭ সালে চরম দারিদ্র‌্য সম্পর্কিত একটি সংজ্ঞা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী, কারো দৈনিক জীবনযাত্রার ব্যয় যদি ২ দশমিক ১৫ ডলারের (২৩৪ টাকা) কম হয়, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি চরম দারিদ্র্যের শিকার।


প্রতিবেদনটির প্রকাশ উপলক্ষে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল এডিবি। সংস্থাটির শীর্ষ অর্থনীতিবিদ অ্যালবার্ট পার্ক সেই সংবাবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


এডিবি প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ায় দরিদ্র হ্রাসের ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় ৩ দশমিক ৬৫ থেকে ৬ দশমিক ৮৫ এর বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলবার্ট পার্ক জানান, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল করোনা মহামারি থেকে ক্রমাগতভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে থাকায় দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।


এই অর্থনীতিবিদের মতে, মহামারির ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। এই পরিস্থিতিতে জনজীবনে দারিদ্র উচ্চহারে বাড়তে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত বিভিন্ন তৎপরতার পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে।


সংবাদ সম্মেলনে পার্ক বলেন, এশিয়ার দেশগুলোর এখন উচিত দরিদ্র লোকজনের জন্য সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলোতে বিনিয়োগ এবং মনযোগ উভয়ই বৃদ্ধি করা। দারিদ্র্যকে যদি ঠেকানো না যায়, সেক্ষেত্রে কোনো প্রবৃদ্ধিই টেকসই হবে না।


এডিবির হিসেব অনুযায়ী অবশ্য করোনা মহামারির প্রথম বছরের তুলনায় দ্বিতীয় বছরে দরিদ্রের সংখ্যা খানিকটা হ্রাস পেয়েছে। সংস্থাটির ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালে মহামারি শুরু হওয়ার পর এশিয়ায় চরম দরিদ্র লোকজনের সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় বেড়েছিল ৮ কোটি।


কিন্তু ২০২২ সালে চরম দরিদ্রদের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি সংখ্যক কমলেও উন্নয়নশীল এশিয়ার জন্য তা তেমন স্বস্তিকর হয়নি। কারণ বিশ্বের বৃহত্তম এই মহাদেশের দেশে দেশে গত বছর থেকে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম।


প্রতিবেদনে এডিবি জানিয়েছে, প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র লোকজনের দৈনিক উপার্জনের একটি বড় অংশই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে। এ কারণে চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতি মৌলিক খাতগুলোতে ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে থাকছে না। পুরুষদের তুলনায় নারীদের ভোগান্তি এক্ষেত্রে আরও বেশি। কারণ এশিয়ার অনেক দেশে পুরুষ কর্মীদের তুলনায় নারী কর্মীদের কম বেতন দেয়া হয়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com