ডেলিভারি বয় এখন ২৩ হাজার কোটি টাকার মালিক
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৪৩
ডেলিভারি বয় এখন ২৩ হাজার কোটি টাকার মালিক
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রিজওয়ান সজনের বয়স যখন ১৬ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। তিন ভাই–বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাই জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাধে। ভারতীয় নাগরিক সজন সংসার খরচ জোগাতে ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের বই ও স্টেশনারি পণ্য বিক্রি শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে দানিউব নামের কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত তিনি এই ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত আয়ের জন্য ‘ডেলিভারি বয়’ হিসেবেও এখানে–ওখানে দুধ সরবরাহের কাজ করতেন।


রিজওয়ানের বয়স এখন ৫৫। থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর দুবাইয়ে। বর্তমানে তিনি ওই দেশে ভারতীয় ধনীদের মধ্যে অন্যতম একজন। ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়া এই বিলিয়নিয়ার এখন ১৮ হাজার কোটি রুপিমূল্যের ধনসম্পদের মালিক, যা বাংলাদেশের ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমান।


দারিদ্র্যের মধ্যে কাটানো দিনগুলো সম্পর্কে রিজওয়ান সজন বলেন, ‘বিষয়টা কঠিন ছিল, সত্যিই কঠিন। আমার বাবা একটি স্টিল ফ্যাক্টরিতে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। মাসে বেতন পেতেন ৭ হাজার রুপি। তাতে সংসার চালানো ও আমাদের স্কুলের ফি পরিশোধ করা কষ্টকর ছিল। পরিস্থিতি অনেকটা দিন এনে দিন খাওয়ার মতোই। সম্প্রতি গালফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।


কিন্তু রিজওয়ান সজন হাল ছেড়ে দেননি। সত্যিকারার্থেই তিনি লড়াই চালিয়ে যান, কঠোর পরিশ্রম করেন। এর সুফলও তিনি পান। একসময় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। আর্থিক সচ্ছলতা আসে। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৯৩ সালে দুবাইয়ে দানিউব গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যস, এর পরই তরতর করে তার ধনসম্পদ বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালে দানিউব গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার, মানে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা বর্তমান মূল্যে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।


দানিউব গ্রুপের মালিকানায় এখন একটি নির্মাণ উপকরণ কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট ফার্ম ও অবকাঠামো কোম্পানিসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।


রিজওয়ান সজনের আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনে অবশ্য তার চাচা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনিই ১৯৮১ সালে রিজওয়ানের বয়স যখন ১৮ বছর তখন তাকে কুয়েতে চাকরি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই দেশে গিয়ে রিজওয়ান একটি কোম্পানিতে ১৫০ কুয়েতি দিনার মাসিক বেতনে সেলস ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন, যা ভারতের ১৮ হাজার রুপি আর বাংলাদেশের সাড়ে ২৩ হাজার টাকার মতো।


আট বছর কাজ করার পর রিজওয়ান ওই কোম্পানির সেলস ম্যানেজার, অর্থাৎ বিক্রয় ব্যবস্থাপক হন। কিন্তু এরই মধ্যে ১৯৯০ সালে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কুয়েত আক্রমণ করে বসেন। শহরটি বলতে গেলে ধ্বংসই করে দেন সাদ্দাম। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তার পশ্চিমা মিত্ররা সাদ্দাম তথা ইরাক আক্রমণ করে, যা উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রিজওয়ান মুম্বাই ফিরে আসেন এবং চাকরি খুঁজতে শুরু করেন। এরপর তিনি দুবাইয়ে একটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে চাকরি পান। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসায় মধ্যস্থতা করত। একদিন রিজওয়ান চাকরি ছেড়ে নিজেই বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ট্রেডিং কোম্পানি, অর্থাৎ নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেন, গঠন করেন দানিউব গ্রুপ। বর্তমানে এই গ্রুপের মালিক রিজওয়ান সজন এখন দুবাইয়ের শীর্ষস্থানীয় বিলিয়নিয়ার।


বিবার্তা/সউদ/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com