করোনাভাইরাসের কারণে চলা লকডাউনের মধ্যে গত জুলাইয়ে তিন কাশ্মীরি শ্রমিককে হত্যার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ভারতশাসিত কাশ্মীরে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর অন্যায় নির্যাতন ও বেআইনি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বা বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে নিরীহ কাশ্মীরিদের হত্যার কথা স্বীকারের ঘটনা বেশ বিরল।
শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত ১৮ জুলাই সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা শোপিয়ানের আমশিপোরা গ্রামে অজ্ঞাত তিন ‘বিদ্রোহীকে’ হত্যা করেছে। এখন তদন্তে দেখা গেছে, তারা রাজৌরি জেলার বাসিন্দা ছিলেন, যাদের সাজানো বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বিবৃতিতে বলেন, সেনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে আমশিপোরা অভিযানের বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে যাতে মনে হয়েছে, অভিযানের সময় সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইনের (এএফএসপিএ) অধীনে প্রয়োগ করা ক্ষমতা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তদন্তে সংগৃহীত প্রাথমিক প্রমাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, আমশিপোরা অভিযানে নিহত তিন অপ্রমাণিত সন্ত্রাসী হলেন ইমতিয়াজ আহমেদ, আবরার আহমেদ ও মোহাম্মদ ইবরার। তারা রাজৌরি থেকে ফিরছিলেন। তাদের ডিএনএ প্রতিবেদন আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সন্ত্রাস বা এ সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে তাদের যোগসূত্রের বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।
এর আগে পুলিশের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছিল, ওই অভিযানে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এ ঘটনার কিছুদিন পরে নিহত তিন ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই তাদের শনাক্ত করেন স্বজনেরা এবং বেআইনি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেন।
এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালের মে মাসে মাচিল এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারতীয় সেনারা সাজানো বন্দুকযুদ্ধে তিন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছেন, কাশ্মীর পুলিশের তদন্তে এ তথ্য বেরিয়ে আসার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে উপত্যকায়। সেনারা পুরস্কারের লোভে ওই তিন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ‘সশস্ত্র বিদ্রোহী’র ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছিলো।
মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা আর্থিক সুবিধা ও মেডেলের জন্য বেসামরিক লোকদের হত্যা করে অনেক সময় ‘বিদ্রোহী’ বলে চালিয়ে দেয়।
বিবার্তা/এসএ