কাশ্মীর সীমান্তে পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। শুক্রবার রাতে দুই দেশই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরস্পরের দিকে গোলাবর্ষণ করেছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের ছোঁড়া গোলার আঘাতে দুই শিশু ও এক নারীসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি ভারতীয় গোলার আঘাতে কাশ্মিরের এক তরুণ নিহত ও তিন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাতে কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণাঘাটি গ্রামে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেবেন্দার জানান, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে আরো অনেকের আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। এছাড়াও মানকোট, বালাকোট ও নওশেরা এলাকাতেও গোলাবর্ষণ হয়েছে বলে জানায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
বালাকোট এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তান। আর নওশেরা এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু হয় বিকেল চারটার কিছু পরে। তবে পার্শ্ববর্তী উরি এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু হয় বেলা বারোটার দিকে। এসব গোলাবর্ষণে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। এছাড়া অনেকেই এসব এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আরো ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে ওই খবরে। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এসব হামলার কড়া এবং কার্যকর জবাব দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরের কোটলি জেলার ডেপুটি কমিশনার ড. ওমর আজম জানিয়েছেন, শুক্রবার ভারতীয় বাহিনীর ‘নির্বিচার গোলাবর্ষণে’ এক তরুণ নিহত ও অপর তিনজন আহত হয়েছে।
পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত থাকলেও বিকেল থেকে কোটলি জেলার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
তিনি জানান, কোটলির নাকিয়াল বাজারে ভারতীয় গোলাবর্ষণে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ১৯ বছর বয়সী তরুণ মোহাম্মদ সুধীর। জেলার তত্ত্ব পানি এবং গোই সেক্টরে আহত হয়েছেন আরো তিন ব্যক্তি।
এছাড়া ঝিলাম উপত্যকা জেলার ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, শুক্রবার মধ্যরাতে পান্ডু সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীর তীব্র গোলাবর্ষণে কমপক্ষে আটটি বাড়ি ও একটি দোকান মাটির সাথে মিশে গেছে। তবে এসব বাড়ির বাসিন্দারা আগেই নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ায় খালি এসব বাড়িতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পান্ডু সেক্টরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আবারো ওই এলাকায় তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। এছাড়া সামাহানি ও বিম্বার জেলা থেকেও দুই দেশের মধ্যে মর্টার এবং কামানের গোলাবিনিময়ের খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম।
সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে লাগাতার পাক গোলাবর্ষণে মারা গেলেন তিন সাধারণ নাগরিক। মৃতদের একজন গৃহবধূ রুবানা কোসার (২৪)। পাক গোলার আঘাতে মৃত তার পাঁচ বছরের ছেলে ফাজান এবং নয় মাসের কন্যাসন্তান শবনমও। এছাড়া পাক গোলাবর্ষণে গুরুতর আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন সাধারণ নাগরিক।
পাকিস্তানি সেনা ভারতীয় গ্রাম লক্ষ্য করেই আক্রমণ চালাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। গুলির পাশাপাশি মর্টার বোমা এবং হাউইতজার ১০৫ মিমি গোলাও ছোঁড়া হচ্ছে গ্রাম লক্ষ্য করে, এমনটাই জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। পাকিস্তানি গোলাবর্ষণের জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনারাও।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুঞ্চ ও রাজৌরিতে নিয়ন্ত্রণরেখার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরতে নিষেধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত এক বছর ধরে পাক সেনার তরফে সংঘর্ষবিরতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালে ঘটেছে মোট ২৯৩৬টি সংঘর্ষবিরতির ঘটনা, যা গত ১৫ বছরে সর্বোচ্চ। গত এক সপ্তাহ ধরে তার তীব্রতা বেড়েই চলেছে, এমনটাই জানা যাচ্ছে সেনা এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সূত্রে। সূত্র: আনন্দবাজার, ডন
বিবার্তা/মাইকেল/আকবর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]