হার্টের ৪৭ হাজার টাকার রিং পরাতে খরচ ২ থেকে ৩ লাখ!
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৫
হার্টের ৪৭ হাজার টাকার রিং পরাতে খরচ ২ থেকে ৩ লাখ!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামের একাধিক হাসপাতাল হার্টের রিং স্থাপনে হাতিয়ে নিচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দাম। এক প্রকার রোগীরা হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও চিকিৎসকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কেননা, অপারেশন থিয়েটারে রোগী রেখেই অনেকটা ভয় দেখিয়ে রিং বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রোগীর আত্মীয় স্বজনরা ভেবে চিন্তারও সময় পান না। কোন কোম্পানির কত দামের রিং পরাবেন। তা জানারও সময় পান না। সবকিছু এতটাই সুক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করে বিল ধরিয়ে দেয়। এতে শুধু রোগীর আত্মীয়রা নন, বরং স্বাস্থ্য বিভাগও অসহায় বলে নানা অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের।
হার্টের রিং বসানো এখন স্বাস্থ্য সেবা নয়, নয় চিকিৎসাও। এখন এটি শতভাগ বাণিজ্যে রূপ পেয়ে গেছে। মানুষের অসুস্থতা যত বেশি, বাণিজ্যের সুযোগও তত বেশি। দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে রোগীদের গলা কাটা হয়। কারণ হৃদরোগ নিয়ে মানুষের উচ্চ শঙ্কা কাজ করে। এর চিকিৎসায় রোগীদের ভীতিকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামে একটি শ্রেণি অতি উচ্চমূল্য আদায় করছেন।


জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রামের যে সব হাসপাতালে রিং স্থাপন করা হচ্ছে বেশি। তা হলো-ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড, এভার কেয়ার হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম পার্কভিউ হসপিটাল লিঃ, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল, সিএসসিআর হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ম্যাক্স হাসপাতালসহ আরো একাধিক।


ওদিকে, ভারতে চিকিৎসা সম্পন্ন করে আসা চট্টগ্রামের আব্দুর শুক্কুর ও শাহাজাহান জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে আমাদের দেশে একেকটি রিংয়ের দাম ক্ষেত্র বিশেষে ১০ গুণের বেশি রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলো কোনো ধরনের নিয়ম কানুন মানছে না। এর সাথে রয়েছে ভুল চিকিৎসা ও আরো শত রকমের অভিযোগ।
এরই মাঝে রিংয়ের দাম নিয়ে চরম অসাধুতা চলছে। সাধারণত রোগীরা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। তারা এই সময় চরম উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে থাকা রোগীর দুর্বল অবস্থাকে অনেকে অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ হিসেবে দেখেন।


তথ্য বলছে, এ অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২০১৭ সালে রিংয়ের সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ মূল্য ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। নির্ধারিত মূল্য তালিকা সব হাসপাতালে টানানোর নির্দেশনাও দেয় সংস্থাটি। কিন্তু কেউ মানছেন না এসব নির্দেশও। দেশে যে রিংটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা হলো-অ্যাবোট ল্যাবরেটরিজের উৎপাদিত রিং এক্সিয়েন্স প্রাইম। এটি সর্বাধিক ব্যবহৃত স্টেন্টগুলোর মধ্যে একটি।


তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রিং এর মূল্য কমে হয়েছে ৫৬১ ডলার থেকে ৪২৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে রিংয়ের দাম ৬২ হাজার থেকে ৪৭ হাজারে হয়েছে। দাম কমেছে ১৫ হাজার টাকা। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ মূল্য ৮৪ হাজার ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৫৪ টাকা।


অথচ রোগীদের কাছ থেকে একেকটি রিংয়ের দাম দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। অথচ এসব রিং ২৫ হাজার টাকার বেশি নয়। কিন্তু রিং বসাতে এত দাম কেন? হার্টে ব্যবহৃত রিংয়ের লাগামছাড়া মূল্য কেন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। সাধারণ রোগীরা মনে করেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নীরবতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ফতুর হয়ে যাচ্ছে।


এটি স্বাকীর করে চট্টগ্রাম সেন্টার ফর স্পেশালিষ্ট কেয়ার এন্ড রিসার্স হাসপাতালের এক হার্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, একজন হৃদরোগীর রিং স্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচারের আগে তার রক্তের কয়েক ধরনের পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, সুগার ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা, ইসিজি ও ইকো করতে হয়। কমপক্ষে ১০-১২ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। সব মিলে এ দাম বাড়াতে হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে তা সঠিক।


চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হাসপাতালের এক হার্ট চিকিৎসক জানান, হৃদরোগীদের হার্টে রক্ত সরবরাহকারী ধমনি সংকুচিত হয়ে যায়, রক্তের স্বাভাবিক সরবরাহ থাকে না। তখন রক্ত চলাচলের জন্য হার্টের ভেতর স্টেন্ট বা রিং বসানো হয়। দেশে মাসে গড়ে তিন হাজার ও বছরে ৩৬ হাজার রিং লাগে। এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। প্রকার ও কোম্পানিভেদে এ ‍রিংয়ের দাম ১৭-৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।


প্রসঙ্গত, দেশে মূলত যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানি এবোট ল্যাবরেটরীজ ও বস্টন সাইন্টিফিক এই কোম্পানি দুটির হার্টের রিং আমদানি করা হয়। এসব রিং গুলো হলো স্টেন্ট জায়েন্স প্রাইম, এক্সপেডিশন প্রাইম ও প্রমোস প্রাইমার স্টেন্ট। হার্টের রিং সাধারণত তিন জেনারেশনের হয়ে থাকে। ফার্স্ট জেনারেশন স্টেন্ট হচ্ছে টেক্সাস এবং সাইফাস। এগুলো মূলত দুই হাজার সালের দিকে পাওয়া গেল বর্তমানে আর এগুলো পাওয়া যায় না। সেকেন্ড জেনারেশন এগুলো হচ্ছে মূলত আমেরিকা সহ বাইরের দেশ থেকে ইমপোর্ট করা হয়। থার্ড জেনারেশন এ জেনারেশনের রিংগুলো মূলত ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়।


বিবার্তা/জাহেদ/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com