সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষ্মা (টিবি) রোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এখনো দেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষ্মা (টিবি)। প্রতিবছর এ রোগে ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়।

২৭ আগস্ট, রবিবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) সাসাকাওয়া হলে আয়োজিত টিবি প্রাইভেট-পাবলিক মিক্স (পিপিএম) স্টেক হোল্ডারসদের নিয়ে আয়োজিত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ও টিবির প্রোগ্রাম পরিচালক ডা. আফজালুর রহমান এসব তথ্য তুলে ধরেন।

আলোচনায় তিনি বলেন, এসডিজি গোল অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে টিবির মৃত্যুহার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর ২০৩৫ সালের মধ্যে টিবির মৃত্যুহার ৯৫ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে টিবিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে টিবিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এদিকে ২০২৫ সালের ৭৫ শতাংশ মৃত্যুহার কমিয়ে আনা ও ৫০ শতাংশ আক্রান্ত কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণে হাতে আছে আর মাত্র ২ বছর। এই সময়ের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান আলোচকরা।

অনুষ্ঠানে দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে টিবি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার। এদের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার ৫৬১ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হলেও ৬৭ হাজার ৪৩৯ জন শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নেননি। টিবি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পুরুষ ৫৪ শতাংশ। এছাড়া মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ শতাংশ ও শিশু আক্রান্ত হয়েছে ৮ শতাংশ। এছাড়া ৪ হাজার ৫০০ জন রোগী মেডিসিন প্রতিরোধযোগ্য টিবিতে আক্রান্ত আছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, প্রতি বছর ৩ লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। সরকার তাদের বিনামূল্য ওষুধ দেয়। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমেছে। তবে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আরও দূর যেতে হবে। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। যারা প্রশাসনের দায়িত্বে আছেন তাদের বুঝতে হবে স্বাস্থ্যের জন্য, চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের কি প্রয়োজন।

বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকার একটি বড় সফলতা দেখিয়েছে। তবে সকল কৃতিত্বের দাবিদার এককভাবে সরকার নয়। সরকারি, বেসরকারি ও এনজিওগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়ছে। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা পৌঁছাতে পেরেছি। ভারতের নোবেল বিজয়ী অমত্য সেন একবার বলেছিলেন, ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উচিত বাংলাদেশ ঘুরে আসা। বাংলাদেশ কিভাবে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করছে, তা দেখে শেখার রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে চিকিৎসকদের রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। এতে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন হবে। যে বা যারা স্বাস্থ্যখাতের পরিকল্পনা করবেন তাদের এই বিষয়ে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত আমরা যা পেয়েছি তা সম্পূর্ণই প্রাধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব।

বিবার্তা/রিয়াদ/জবা