জীবনের কথা বলে নাটক। সেই জীবনের কথা সমাজে তুলে ধরতে ৩০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন ‘বিবর্তন যশোর’। এসময় নাটকের মাধ্যমে বিবর্তনের শতাধিক কর্মী সমাজের শোষকদের বিরুদ্ধে ও শোষিতদের পক্ষে নানা বার্তা তুলে ধরেছেন।
এছাড়া সমাজের অবক্ষয়ের দিকগুলো তাদের নিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছেন। ফলে দেশে-বিদেশে পেয়েছে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা ও প্রেরণা। কর্মীদের একের প্রতি অন্যের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যুগিয়েছে তাদের নতুন নতুন সৃজনশীল কাজের উৎসাহ।
বিবর্তন যশোরের ৩০ বছর পদার্পণ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। ভারতের ৪টি ও বিবর্তনসহ বাংলাদেশের ৪টি দল এ উৎসবে অংশগ্রহণ করবে।
যশোর শহরের ব্যস্ততম কেশবলাল সড়কে (সঙ্গীতপাড়া) সংগঠনটির কার্যালয়। ভিতরে প্রবেশ করলে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে যেতে হয় শহরের কোলাহলময় পরিবেশ। বকুল আর বিভিন্ন গাছের ছায়ায় ছেয়ে আছে সংগঠনটির ছোট্ট ছিমছাম অঙ্গন। আঙ্গিনায় আছে একটি মুক্ত মঞ্চ। মঞ্চ টি বিবর্তনের কর্মীরা নিজ হাতে তৈরি করেন।
বিবর্তনের প্রতিটি কাজে আছে নাট্যকর্মীদের হাতের ছোঁয়া। বিবর্তনের কর্মীরা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় হাজির হন তাদের প্রাণের সংগঠনে। নাটকের সংলাপ মুখস্থ করতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চলে তাদের নাটকের মহড়া। নিমেষে হারিয়ে যায় সারা দিনের ক্লান্তের ছাপ। মনে হয় নাটকই তাদের প্রাণ।
বিবর্তনের সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু জানান, সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে নাটক- এ শ্লোগানকে ধারণ করে ১৯৮৯ সালের ১২ অক্টোবর বিবর্তন যশোর আত্মপ্রকাশ করে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা, শোষণ, দুর্নীতি, মৌলবাদের আগ্রাসনে দেশ যখন আক্রান্ত, গণতন্ত্র এবং অধিকার আদায়ের দাবিতে চারদিক যখন উত্তপ্ত সেই সময় সৌন্দর্য্য চেতনায় পরিশীলিত একটি সুস্থ সমাজ সংস্কৃতির অঙ্গীকার নিয়েই বিবর্তন তার পথ চলা শুরু করে। বিবর্তন একটি আন্দোলন, একটি সমাজ চেতনা, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের সমাজ সংস্কৃতির অভিব্যক্তি।
বিবর্তনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান রনি জানান, ১৯৮৯ সালে ‘ইতিহাসের পাতা থেকে’ নাটক মঞ্চস্থের মধ্য দিয়ে বিবর্তনের নাট্যচর্চা শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৮৯টি নাটকের (মঞ্চ, পথ ও শিশু) প্রায় চার সহস্রাধিক প্রদর্শনী হয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো, যুদ্ধ, ইতিহাসের পাতা, পাইচো চোরের কেচ্ছা, পুরস্কার, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, মহাবিদ্যা, বিসর্জন, মনের আয়না, বিবাহ প্রস্তাব, রাজা প্রতাপাদিত্য, সিসিফাস, কৈবর্ত গাঁথা, হট্টমালার উপারে, জন্তু ও আলোচিত মাতব্রিং।
মাতব্রিং নাটকটি বিশ্ব অলিম্পিয়াড থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়। তাদের অভিনয় আজ বিদেশের মানুষের হৃদয়েও স্থান করে নিয়েছে। তাইতো তারা বারবার ডাক পেয়েছে দেশের বাইরে থেকে। ভারতের দিল্লি, মুর্শিবাদ, কোলকাতা, নদিয়াসহ পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিবর্তন এ পর্যন্ত ১৫ বার আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করে সুনাম কুড়িয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হয় দেশের বাইরে নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ।
এছাড়া বিবর্তন এ পর্যন্ত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ৪০টি নাট্য উৎসবে এবং শতাধিক পথনাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে।
বিবর্তনের রয়েছে যশোর সরকারি এমএম কলেজে একটি শাখা। সম্প্রতি খোলা হয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। যা শিক্ষার পাশাপাশি কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রসার ঘটিয়ে চলেছে। মাদক মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ি, সুস্থ সংস্কৃতি দিয়ে সমাজের অন্ধকার দূর করি- এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শাখা দুটি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, বিগত দিনে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিলাম বলেই আজ আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। নাট্যচর্চা পরিচালিত হয় টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে। ফলে দীর্ঘ ৩০ বছরের অসংখ্য তরুণ-তরুণী কাজ করেছে এ সংগঠনে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানের যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা ও সন্ত্রাসের পথ থেকে মুক্ত করে তাদের মধ্যে দেশত্ববোধ জাগ্রত করতে বিবর্তন নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাইতো বিবর্তন আশা প্রকাশ করে আগামী দিনে নাট্যচর্চায় আকৃষ্ট করে দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। জয় হোক বিবর্তনের, জয় হোক মানবতার, জয় হোক নাটকের।
বিবার্তা/তুহিন/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]