উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত
'হাসপাতাল এত দূরে কেন, কাছাকাছি হতে পারে না?'
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ১৫:১৯
'হাসপাতাল এত দূরে কেন, কাছাকাছি হতে পারে না?'
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আহাজারি করতে করতে মা জুলেখা বেগম বলেন, আমার বাবা বলছিল হাসপাতাল এত দূরে কেন? কাছাকাছি হাসপাতাল হতে পারে না? আমাকে তোমরা চিকিৎসা করাতে বিদেশে নিয়ে যাও। আমার বাবা বাঁচতে চাইছিল। কেন আমার বাবা এভাবে চলে গেলো।


জুলেখা বেগম আবদুল্লাহ ছামীমের মা। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণকারী শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের কোমলমতি শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ছামীম (১৩)।


মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে উপজেলার ডিএম খালী চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার প্রয়াত বাবা কালাম উদ্দিন মাঝির কবরের পাশে দাফন করা হয়।


পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালি মাঝিকান্দি এলাকার আবুল কালাম মাঝি ও জুলেখা বেগম দম্পত্তির ছেলে আব্দুল্লাহ ছামীম (১৪)। থাকতেন ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি খালপাড় এলাকায়। ভাই বোনদের মধ্যে সবার ছোট ছামীম। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিল সে। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আগে মাদরাসায় পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে তাকে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে প্রবাসে মারা যান বাবা আবুল কালাম মাঝি। এরপর থেকে মা, বোন ও বড় ভাইয়ের আশ্রয়স্থলে আদর যত্নে বেড়ে উঠছিল ছামীম।


প্রতিদিনের মতো সহপাঠীদের সঙ্গে সোমবার (২১ জুলাই) বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিলেন ছামীম। টিফিনের আরমাত্র ১০ মিনিট বাকি, এরইমধ্যে বিকট শব্দে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। সেই ঘটনায় অন্যান্যদের সঙ্গে গুরুতর আহত হয় ছামীম।


পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে স্বজনদের খবর দিলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ার তাকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে ১১ টার দিকে মৃত্যুবরণ করে ছামীম।


এদিকে ছামীমের মৃত্যুর খবর তার গ্রামে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি ডিএমখালি মাঝিকান্দি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে সকাল ৯টায় চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়। ছামীমের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ছেলের মৃত্যুতে কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন মা জুলেখা বেগমও।


ছামীমের মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে ভীষণ মেধাবী ছিল আমার ভাগ্নে। ওর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। বাবার মৃত্যুর পর ওকে সবাই আগলে রেখেছিলাম, আজ ও আমাদের ছেড়ে বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায়। ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন আজ স্বপ্নই রয়ে গেলো।


এসময় তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বিমান প্রশিক্ষণের জন্য খোলা ময়দান রয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততম এলাকায় যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল, সেই জায়গায় কীভাবে বিমান প্রশিক্ষণের জন্য দেওয়া হলো। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।


এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছি। আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে আমরা সব সময় থাকবো।


বিবার্তা/রোমান/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com