ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে হলছাড়া করার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া তার পক্ষে কথা বলায় আরেক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার আহসান উল্লাহ অলি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি লালন শাহ হলের ২৩২ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। তাকে হলে থেকে বের করার প্রতিবাদ করায় একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাফিজ ইকবালকেও ধাওয়া দিয়ে হলছাড়া করা হয়।
জানা যায়, হলে সকল প্রকার অনৈতিক কাজ বন্ধ করতে গণরুম বন্ধ সহ কয়েকটি বিষয়ে নোটিশ দেয় হল প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে, রবিবার রাত ১০টার দিকে গণরুমের বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেন অলি। আলোচনার এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন সহ-সমন্বয়ক হাসানুল বান্না। এসময় গণরুমের পক্ষে ও আন্দোলন নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে অলির সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় শিক্ষার্থীদের। ‘১৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ইবিতে তেমন কোনো আন্দোলনই হয়নি’ অলির এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা।
এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অলিকে মারধর করে ধাওয়া করলে তিনি হল সংলগ্ন পকেট গেইট দিয়ে পালিয়ে যান। পরে অলির পক্ষে কথা বলতে আসলে নাফিজ ইকবালকেও ধাওয়া দিয়ে হলছাড়া করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অলি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন তবে আন্দোলনে কয়েকদিন থাকার কারণে হলেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু হলে আসার পর থেকেই সমন্বয়কদের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে মন্তব্যকারী আহসানুল্লাহ অলি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে পরে ২ আগস্ট শিক্ষকরা একাত্মতা প্রকাশ করলে পুনরায় আন্দোলন বেগবান হয়। আমি এই কথা বলায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা আমার বক্তব্য ভুল বুঝে আমার ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে আমাকে মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় ক্যাম্পাস ছাড়া আরেক শিক্ষার্থী নাফিজ ইকবাল বলেন, ‘আমার বিভাগের বড় ভাইয়ের সাথে ঘটনাটি ঘটার পর আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। এসময় তারা আমাকেও ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। একটা সিটের জন্য বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম মিছিল মিটিংয়ে অংশ নেয়া লেগেছে। তাই বলে সবাই তো আর মন থেকে ছাত্রলীগ করেনি।’
এ বিষয়ে আলোচনায় উপস্থিত থাকা ইবির সহ-সমন্বয়ক হাসানুল বান্না অলি বলেন, সে বলেছে, ‘আমরা কোনো সমন্বয়ক মানি না।’ সে সমন্বয়ক ও ছাত্র আন্দোলন নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করে। আন্দোলনকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য আমাদের প্রচণ্ড আঘাত করেছে। হলের শিক্ষার্থীরাও এটি মেনে নিতে পারে নাই। কারণ, যারা পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবির সামনে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন চলমান রেখেছিল। তাদেরকে সে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ফলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার ওপর চড়াও হয়।’
এবিষয়ে সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ‘অলি আগে ছাত্রলীগকর্মী ছিল, সে শিক্ষার্থীদের সামনে আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সে হল ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রশাসন শূন্য ক্যাম্পাসকে আমরা শান্তিপূর্ণ রাখতে চেষ্টা করছি। কিন্তু একটি গ্রুপ ছাত্রলীগের ‘বি’ টিম হয়ে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা এগুলোকে কোনভাবেই বরদাস্ত করব না।’
লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘রাতে ছাত্রদের মধ্যেও একটি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। এটি নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
বিবার্তা/জায়িম/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]