অযত্নে ঝোপঝাড়ে ঢেকেছে চবির ঐতিহ্যের ঝুলন্ত সেতু
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৩
অযত্নে ঝোপঝাড়ে ঢেকেছে চবির ঐতিহ্যের ঝুলন্ত সেতু
চবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চারপাশে শ্যাওলা ও জঙ্গল সৃষ্টির পাশাপাশি নড়বড়ে ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে সেতুটি। ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়েছে পুরো সেতু। সেতুটির প্রবেশমুখ ও চারপাশে দেয়া হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। ভেঙে গেছে সেতুটির বেশিরভাগ পাটাতন।


বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত সেতুর বর্তমান চিত্রের কথা৷ শহিদ মিনার থেকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গেলেই চোখে পড়বে এ সেতু।


সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পাশে খালের ওপর ২০০৯ সালে নির্মিত হয় সেতুটি।


দৈর্ঘ্য প্রস্থে রাঙামাটির মতো বৃহৎ না হলেও এটিকে ‘মিনি রাঙামাটি’ বলা যেতে পারে। চবি ক্যাম্পাসে পাহাড়ের রাজ্যে বিশেষ আকর্ষণ হলো এ ঝুলন্ত সেতু।


ব্যতিক্রমী এ স্থাপনাকে ঘিরে সারা দিন চলে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, আড্ডা আর গানের মহড়া। শিক্ষার্থীদের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে প্রশাসনিক ভবন ও কলা অনুষদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই সেতুটি।


যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গৌরব হারিয়েছে এটি। ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুর্ঘটনা এড়াতে দুই পাশে কাঁটাতার বসিয়ে এতে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে।


জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তাজনিত কারণে সেতুটি বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত প্রায় পাঁচ বছরেও সেতুটি সংস্কার করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না করায় ধ্বংস হতে চলেছে নান্দনিক সেতুটি। সেতুটি দ্রুত সংস্কার করার কথা বারবার জানানোর পরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে তারা কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানিয়েছে, তবে বাস্তবে তা দেখা যায়নি।


এ বিষয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ঝুলন্ত সেতুটি আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ওরাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র আমাদের ক্যাম্পাসেই এই সৌন্দর্যমণ্ডিত সেতুটি রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের অবহেলার কারণে সেটা এখন পরিত্যক্ত। তাই আমরা চাই, অনতিবিলম্বে এর সংস্কার করে আমাদের ঐতিহ্যকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু হোসেন বলেন, ঝুলন্ত সেতুটি আমাদের সবার খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিল। এটি বন্ধ থাকায় আমাদের অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়।


এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক নুরুল আজিম শিকদার বলেন, ‘সেতুটি ২০০৯ সালে নির্মিত হয়। এরপর কয়েক বার সংস্কার করা হলেও বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তাই, নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, এই ব্যাপারে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে আবার সংস্কার করে দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হবে।’


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, চবির ঝুলন্ত সেতুটি এখনও বন্ধ আছে। চলাচলে ঝুঁকি থাকায় সেতুটি বন্ধ রয়েছে। এটি মেরামতের বিষয়ে অফিশিয়ালি কোনো নির্দেশনা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটি মেরামত করার জন্য আমরা একটা ইস্টিমেট করেছি। ফান্ড না থাকায় কাজ হচ্ছে না। এটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে করতে হবে৷


বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার করার জন্য কোনো নোটিশ আসেনি। তবে এই ব্যাপারে আলোচনা চলছে। আশা করি অতি দ্রুত এই বিষয়টাতে প্রশাসন নজর দেবে। প্রশাসনের অনুমোদন এলে সকল প্রকার কার্যক্রম চালু হবে।


বিবার্তা/মহসিন/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com