চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫, অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি, চাকরিতে আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স (বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যুরাল) স্থাপনের দাবিসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ আন্দোলন অব্যাহত রাখা ও কর্মসূচি ঘোষণা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখা ও কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এসময় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী আন্দোলনের আহবায়ক শরিফুল হাসান শুভ "যতদিন পর্যন্ত চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বাস্তবায়ন করা না হবে ততদিন পর্যন্ত ভাতের একটি দানাও গ্রহণ করবেন না" শীর্ষক অহিংস প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন এবং আগামীকাল ৬ অক্টোবর রোজ শুক্রবারের কর্মসূচি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করেন।

আগামীকালের কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের আহ্বায়ক জনাব শরিফুল হাসান শুভ, প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন সংগঠনের সদস্য সচিব জনাব মোহাম্মদ রাসেল, বিশেষ বক্তা হিসেবে থাকবেন ঢাবি শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারুল হক সনি এবং সঞ্চালনা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব এ আর খোকন।

এসময় লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত চাকরি প্রার্থীরা বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছে। আপনারা জানেন নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এর পাতা ৩৩ এবং শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে বলা আছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০১১ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতেএ প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি এবং চাকরি শেষে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ স্বাভাবিক চাকরি প্রক্রিয়া ক্ষেত্রে অন্তরায়।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশনে (বিসিএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে (বিজেএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর, সরকারি নার্সিং এ ৩৫ বছর এবং বেসরকারি স্কুল/কলেজে ৩৫ বছর।

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীতকরণ করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি।

বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়স সীমা ৩৫-৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৩৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদশে এবং পাকিস্তানেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রায় সকল প্রকার চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পরীক্ষা বন্ধ ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তার বেশি থাকা সত্ত্বেও করোনা মহামারির কারণে চাকুরিতে আবেদনের বয়সসীমা আরো ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ৭২ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিত ভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য সুপারিশ করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

তাই লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর এবং অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হোক।

চাকরির আবেদন ফি সর্ব্বোচ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে (১ম শ্রেণীতে ২০০ টাকা, ২য় শ্রেণীতে ১৫০ টাকা, ৩য় শ্রেণীতে ১০০ টাকা, ৪র্থ শ্রেণীতে ৫০ টাকা) প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকির উদ্যোগ নিতে হবে। একই তারিখে একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।

লিখিত বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুনরায় দৃষ্টি আর্কষণ করে বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী, আইন অনুষদের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যূরাল নির্মাণসহ দাবির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে স্থান নির্ধারণের জন্য যেন আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ “বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স” এর কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।

বিবার্তা/ছাব্বির/এমজে