জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনুভূতিতে আঘাত না করার আহ্বান উপাচার্যের
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:১৮
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনুভূতিতে আঘাত না করার আহ্বান উপাচার্যের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনুভূতিতে আঘাত না করার আহ্বান জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘মহান জাতীয় সংসদের প্রতিজন সদস্য আমাদের ভীষণ প্রিয়, অভিভাবকতুল্য এবং সম্মানীয়। সুতরাং বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, পাহাড়ি, হাওর, বাঁওর প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে সংগ্রামমুখর শিক্ষার্থী, যারা অভিভাবককে একসঙ্গে আর্থিক সহায়তা করে এবং নিজে পড়াশোনা করে। তাদের আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত না করার জন্য আমি উদত্ত আহ্বান জানাই।’


আজ শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে গাজীপুরের বাহাদুরপুরস্থ রোভার পল্লীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ‘পিকনিক ও মিলন মেলা-২০২৩’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন উপাচার্য। গতকাল বৃহস্পতিবার মহান জাতীয় সংসদে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এই আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।


দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মানচিত্রসম একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত পরিবারের নানারূপ সেন্টিমেন্ট জড়িত। আমাদের ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থী। সেই শিক্ষার্থীদের ঘিরে যে পরিবার- তা আমাদের নিজস্ব পরিবার। প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমরা। তাদের জীবন-সংগ্রাম সম্পর্কে আমরা খুব ভালো ধারণা রাখি। ওই সংসদ সদস্য গতকালকে যে কথা বলেছেন সে বিষয়ে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই- শিক্ষার বৈষম্য, শিক্ষায় তারতম্য, সমাজের সেই কাঠামোগত বিষয়, যেটি অগণতান্ত্রিক এবং সামরিক সরকারের সময়কালে শ্রেণি-বৈষম্য প্রকট হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের সময়ে যে অর্থনৈতিক দুর্নীতি হয়েছে তার ফলে দেশে ক্রমাগত শ্রেণি-বৈষম্য সমাজ আরও বেশি ক্রম-বিকশিত হয়েছে। আজকের শিক্ষায় যে বৈষম্য- সেটি সামরিক শাসন, অগণতান্ত্রিক শাসনের সময়কালে সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তনের ফল। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শিক্ষার পরিপূর্ণ অধিকার না পাওয়ার সঙ্গে আপনাদের শাসনামলের স্পষ্ট যোগাযোগ আছে।’


সংসদের মতো পবিত্র জায়গায় তথ্য-উপাত্ত জেনে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘মহান জাতীয় সংসদে যখন কথা বলবেন সকল বিষয় মাথায় রেখে তথ্য-উপাত্তকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কথা বলবেন। কেননা, এর সঙ্গে আমাদের গভীর আবেগ এবং সেন্টিমেন্ট জড়িত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- যেটি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অবশ্যপাঠ্য করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেই প্রতিষ্ঠান যেটি ২০২৩ এ আইসিটি এবং সফ্ট স্কিল অবশ্যপাঠ্য করতে যাচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেই প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চহারে বেতন-ভাতাদি না নিয়ে যথেষ্ট সল্প খরচে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের অবারিত সুযোগ সৃষ্টির অনন্য প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।’


আমাদের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে আঘাত করা সমীচীন নয় জানিয়ে উপাচার্য আরও বলেন, ‘এমন কোনো কথা বলা উচিত নয় যেটি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে আঘাত করে। যখন মহান সংসদে দাঁড়িয়ে আপনারা আমার ছাত্রের আয় নিয়ে প্রশ্ন করেন, এটি তার মেন্টাল হেলথকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। আমার শিক্ষার্থীরা সততার সঙ্গে আয় করে। ওরা নিষ্ঠার সঙ্গে আয় করে, দুর্নীতি করে না।’


কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আপনারা যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত। তাদের বড় পরিচয় আপনারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য। আমি জানি আপনাদের পাওয়া-না পাওয়ার যন্ত্রণা থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর যে বৃহৎ পরিবার এই পরিবারগুলোকে আপনাদের শ্রম, নিষ্ঠা আর সততার মধ্য দিয়ে যদি গড়ে তোলা যায় তাহলে বাংলাদেশে আমূল পরিবর্তন নিশ্চিত হবে। আমাদের হাত দিয়ে ওদের জীবনে আলো ধরাতে চাই। এখানে আমরা কোনো সংক্ষিপ্ত পথ বেঁছে নেইনি। আমরা শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং উৎকর্ষতার পথ বেঁছে নিয়েছি। এর মধ্য দিয়েই অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবো। আসুন দুর্নীতিমুক্ত সৎ, নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা এবং উৎকৃষ্টতায় ভরপুর এক অনন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলি, যা হবে আমাদের মর্যাদার প্রতীক।’


দিনব্যাপী আয়োজিত এ মিলন মেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পিকনিকে র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।


বিবার্তা/জেএইচ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com