বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে না পারা: ড. সামাদ
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪৪
বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে না পারা: ড. সামাদ
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে এসেছিলেন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে এবং জনতার মাঝে ভাষণও দিয়েছিলেন। ভাষণের তিনি বলেছিলেন- ‘বাংলার মানুষ যেন ভালো ভাত-কাপড় পায়। এটিই ছিল আমার জীবনের সাধনা।’ সেই সাধনায় তিনি ব্রতী থাকলেও আমরা তাঁকে বেশিদিন বাঁচাতে পারিনি। এটি বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। আমরা তাঁকে রক্ষা করতে পারিনি।


১০ জানুয়ারি, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।


আলোচনায় অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমরা এখানে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেখছি। আর কিছুদিন পরে অনেককে আমরা দেখতে পাব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ৯ম শ্রেণির ছাত্র। গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরণে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ছিল রাইফেল, স্ট্যানগান। সার্বিকভাবে এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের চেহারা। ওই সময় রাজাকারদের সহায়তায় গ্রামের গরু-ছাগল, মহিলাদের ধরে নিয়ে যেত পাক বাহিনীরা। হঠাৎ করে আক্রমণ করে বসত তারা, সেই স্মৃতি আমার চোখে এখনও ভাসে। যারা জীবন বাজি রেখে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এ দেশকে স্বাধীন করেছে তাদেরকে অভিবাদন জানান তিনি।


বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে ড. সামাদ বলেন, ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছিলেন পরোপকারী। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করেছেন। বঙ্গবন্ধু ৪৭ সালের পয়লা ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১১মার্চ ভাষা আন্দোলনের জন্য হরতাল পালন করেন। এটিই ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্ব। ২১ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত ওই দিনটি বাংলা ভাষার দাবি হিসেবে পালিত হতো। অনেক জ্ঞানপাপী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যাচার এদেশে চালিয়েছে। কিন্তু তাঁর লেখা তিনটি বই যথাক্রমে: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন বের হওয়ার পর এবং তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার সম্পাদনায় ১৪ খণ্ডের 'সিক্রেট ডকুমেন্ট', ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট '৪৮ থেকে ’৭১ বের হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে জানতে পারি। বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলন, ৬৪ সালের দাঙ্গা বিরোধী আন্দোলন, ৪৩ সালে কলকাতায় থাকতে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, সেসময় জীবন বাজি রেখে বঙ্গবন্ধু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে ফেলার সঙ্কা ছিল। পরবর্তীতে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব এবং কারাগার- সবমিলিয়ে ৭০ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।



তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণার পর ’৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচীতে মিনওয়ালি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। যেটি ছিল সবচয়ে উষ্ণ অঞ্চল। সেই কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে তাঁর পক্ষের একজন আইনজীবী ছিলেন, যার নাম এ কে ব্রোহী। বিচারালয়ে বঙ্গবন্ধুকে হাজির করা হয়েছিল সেকথাগুলো বঙ্গবন্ধু রবার্ট ফ্রস্টকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- ‘সরকারের তরফ থেকে গোড়া এক উকিল দিয়েছিল। কিন্তু আমি যখন দেখলাম, অবস্থাটা এমনই যে, যুক্তির কোনো দাম নেই; দেখলাম, এ হচ্ছে বিচারের এক প্রহসন মাত্র। তখন আমি কোর্টে নিজে দাঁড়িয়ে বললাম, জনাব বিচারপতি, দয়া করে আমাকে সমর্থনকারী উকিল সাহেবদের যেতে বলুন। আপনারা বিলক্ষণ জানেন, এ হচ্ছে এক গোপন বিচার। আমি বেসামরিক লোক। আমি সামরিক কোনো লোক নই। আর এরা করছে কোর্ট মার্শাল। ইয়াহিয়া খান কেবল যে প্রেসিডেন্ট, তা-ই নয়। তিনি প্রধান সামরিক শাসকও। এ বিচারের রায়কে অনুমোদনের কর্তা তিনি। এই আদালতকে গঠন করেছেন তিনি।’ কাজেই এই বিচার বঙ্গবন্ধু মানেন না। একজন মানুষ জীবনের সমস্ত মায়া তুচ্ছ করে কতটা সাহসী হলে সেই একা কারাগারে থেকে এই ধরণের প্রতিবাদ করতে পারেন, এটি আমাদের সকলের ভাববার বিষয়।


ড. সামাদ আরও বলেন, সে সময় কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখাশোনা করার জন্য রেজা খান (ছদ্মনাম আনোয়ার খান) নামের যে ব্যক্তি ছিলেন, পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নির্যাতনের চিত্র একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন। এসময় অধ্যাপক সামাদ আতাউস সামাদের বইয়ের রেফারেন্স দেন। তারপর আমরা বঙ্গবন্ধুকে আজকের দিনে (১০ জানুয়ারি) ফিরে পেলাম। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে প্রথম এসেছিলেন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে। তিনি জনতার মাঝে ভাষণও দিয়েছিলেন। সেদিন ভাষণের শেষে তিনি বলেছিলেন- ‘বাংলার মানুষ যেন ভালো ভাত-কাপড় পায়। এটিই ছিল আমার জীবনের সাধনা।’ সেই সাধনায় তিনি ব্রতী থাকলেও আমরা তাঁকে বেশিদিন বাঁচাতে পারিনি। এটি হল বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। আমরা তাঁকে রক্ষা করতে পারিনি।


তাঁরই সুযোগ্য দুই কন্যা আজ বাংলাদেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছেন।


আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। এছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল (বিচ্ছু জালাল), ভাস্কর রাশা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য, বীর উত্তম খালেদ মোশাররফের ছোটবোন রীনা মোশাররফ ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লি. এর চেয়ারম্যান হাসান রহমানসহ প্রমুখ।


মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আল মামুন।


বিবার্তা/সাইদুল/রোমেল


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com