
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ওমরপুর ঘাট এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আবু সুফিয়ান সিজু নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার নির্যাতনের এই ঘটনার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছে সিজুর পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি। তবে জামায়াত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং গ্রেপ্তার দু’জনের মুক্তির দাবিতে গতকাল শুক্রবার মানববন্ধন করেছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিএনপি নেতা বারিউল ইসলাম তাদের পরিচালিত ‘শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১) বিএনপি নিউজ’ গ্রুপে জানিয়েছেন, চাঁদার টাকা না পেয়ে জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন কর্মী বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে সিজুকে বেধে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই হাত ও পায়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তাকে ‘ছিনতাইকারী’ ট্যাগ দিয়ে মব সৃষ্টি করে আঘাত করা হয়। এমন দৃশ্য দূর থেকে স্থানীয়রা দেখলেও এর প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। পরে তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে গেলে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তবে ওমরপুর ঘাট এলাকার কয়েকজন বলেন, সিজু ছিনতাইকারী দলের সদস্য। তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলা আছে। মোস্তাক নামের একটি ছেলের গলায় চাকু ধরে সিজু শাঁসাচ্ছিল। এ সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাকে ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিজু বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে কুপিয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। আব্দুর রাজ্জাক হুজুর, স্থানীয় এক দোকান মালিক, শরৎনগর গ্রামের আনোয়ার এবং চামা বাজারের ব্যবসায়ী আবু সাঈদের ভাই নূরসহ কয়েকজন এতে জড়িত।
সিজুর বাড়ি বাজিতপুর গ্রামে। তার বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় রাজ্জাক হুজুরসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন তিনি। পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করার পর জামায়াত সমর্থকরা আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে ও ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে মানববন্ধন করেছে। তাদের বিভিন্নভাবে শাঁসানো হচ্ছে। তার ছেলের বাম হাত কেটে ফেলতে হবে। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। সিজুর মা নিলুফা বেগম বলেন, আমার ছেলে চোর-ডাকাত হলেও এভাবে মব সৃষ্টি করে হত্যার চেষ্টা কেউ করতে পারে না। এ জন্য আইন আছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, গত বুধবার রাতে আহত সিজুর বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০–১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন। পরদিন রাজ্জাকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
স্থানীয়দের মানববন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর এজাহারে উল্লেখ করা আসামি ধরা হয়েছে। আদালতে তাদের দোষ প্রমাণ না হলে তারা ছাড়া পাবে। কারা মানববন্ধন করল তা নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথা নেই। তার দাবি, শ্যামপুর ও ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। কোনো অঘটন ঘটার আশঙ্কা নেই।
শিবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়ন সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে শ্যামপুর চামাবাজারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বক্তব্য দেন শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হোদা, অধ্যাপক মো. ইমরান আলী, শরৎনগর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মালেক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, শ্যামপুরের বিভিন্ন জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের কিছু নেতা ও সদস্য দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি করে আসছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় উমরপুর ঘাটে সিজু ডাকাতকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয়রা।
শিবগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মো. সাদিকুল ইসলাম ও সেক্রেটারি মো. বাবুল ইসলাম সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সিজু চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও ডাকাত। চাঁদা না পেয়ে সিজুর ওপর হামলার অভিযোগ হাস্যকর। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে চাঁদাবাজির কোনো সম্পর্ক নেই।
এ ব্যাপারে জামায়াত নেতা দুরুল হোদা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের দলের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে সংবাদ প্রকাশ না করার আহ্বান জানান তিনি। গ্রেপ্তার হওয়া দু’জন তাদের দলের সমর্থক বলে তিনি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী আইন নিজ হাতে তুলে নিয়েছে উল্লেখ করে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
এ ঘটনায় বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]