
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৩ নং দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মডুবি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (প্রস্তাবিত) দীর্ঘদিন ধরে EIIN কোড না পাওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। প্রতিদিন নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করা এ অঞ্চলের শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি আশার আলো হয়ে উঠেছিল, কিন্তু ইআইআইএন অনুমোদন দীর্ঘদিন ধরে না মেলায় এখন সেই অগ্রযাত্রা থমকে আছে।
প্রান্তিক এই অঞ্চলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে দীর্ঘ কাদাপথ অতিক্রম করা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন যাতায়াতে বড় বাধা সৃষ্টি করে। ফলে দূরবর্তী বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, আশেপাশের তিন থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। তাই নৌকাই এখানকার শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা। দীর্ঘ নদীপথ, স্রোত আর মৌসুমি দুর্ভোগ তাদের শিক্ষাজীবনকে প্রতিদিনই অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অত্যন্ত কমে এসেছে, যা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিকে আরও বাধাগ্রস্ত করছে।
এই পরিস্থিতিতে নিকটবর্তী বিদ্যালয়টি চালু হলে ঝরে পড়া অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষায় ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে অভিভাবকেরা মনে করেন। এলাকার মানুষের আশা ছিল—প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার নিরাপদ ঠিকানা হয়ে উঠবে। কিন্তু EIIN না পাওয়ার কারণে এখন সেই প্রত্যাশা ভেঙে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে পাঠদান চালিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় তারা নিয়মিত শিক্ষার্থী ধরে রাখতে পারছেন না। পরিবারগুলোও সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে দ্বিধার মধ্যে থাকায় একসময় স্কুলমুখী হওয়া শিশুরা আবার শিক্ষার বাইরে চলে যাচ্ছে। অঞ্চলটির স্বাভাবিক শিক্ষাপ্রবাহ এভাবে ব্যাহত হওয়া উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে একদল ব্যক্তি সুপরিকল্পিতভাবে আপত্তি উত্থাপন করেছে। তাদের মতে, এলাকার বাস্তব চিত্র বিবেচনা না করেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এই বিলাঞ্চলের শিক্ষাপ্রবাহ থমকে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মই।
বিদ্যালয়ের বর্তমান সংকটে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত এবং সপ্তম শ্রেণির নাদিয়া আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় তারা পড়াশোনা নিয়ে ভীত ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, বিদ্যালয়টি চালু থাকলে নৌকাযোগে দূরের স্কুলে যেতে হবে না এবং নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তারা বিদ্যালয়টির স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি জানিয়ে ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন রক্ষার আকুতি প্রকাশ করেছে।
EIIN না পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির দিকেও এগোতে পারছে না। এতে শিক্ষকরা আর্থিক সংকটে পড়ছেন এবং পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক পরিবেশ গড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকার উন্নয়ন, শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষার বিস্তারের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিও তাই জোরালো হচ্ছে।
প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলের মানুষ মনে করেন, নদীপথনির্ভর এই অঞ্চলের বাস্তবতা দীর্ঘ নৌযাত্রা, মৌসুমি দুর্ভোগ, নিকটবর্তী স্কুলের অভাব তাদের সন্তানদের শিক্ষার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তারা মনে করেন, এই বিদ্যালয়টি চালু হলে অভিভাবকেরা একটু নিশ্চিন্ত হবেন, শিশুরা প্রতিদিনের যাতায়াতের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে এবং ঝরে পড়া হারও কমবে।
সরেজমিন বাস্তবতা এবং স্থানীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বিদ্যালয়টির EIIN প্রদান প্রক্রিয়া দ্রুত পুনরায় সক্রিয় হবে—এমন প্রত্যাশা এখন পুরো বিলাঞ্চলের মানুষের।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাইনুল ইসলাম জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্কুলটি গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটি মাত্র অভিযোগের কারণে আমরা এখনও ইআইআইএন (EIIN) পাইনি। ইআইআইএন পাওয়া এমপিওভুক্তির পূর্বশর্ত। যদি আমরা এটি পাই, তাহলে এই এলাকার শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং আমাদের শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন থেকে মুক্তি পাবেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো, জহিরুল আলম জানান, যেহেতু একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেহেতু বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিবার্তা/মশিউর/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]