মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা, লুটপাট ও বসতবাড়ি ভাংচুর
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ২১:৫১
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা, লুটপাট ও বসতবাড়ি ভাংচুর
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমানের পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট ও বসতবাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩১ মে বুধবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী পরিবারটি এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করছেন।


আজ দুপুরে একই বিষয়ে উপজেলার পৌর শহরের নুনীয়াগাড়ী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমানের ভাংচুর হওয়া বসতবাড়ির ধংসস্তুপের সামনে পরিবারের লোকজন সংবাদ সম্মেলন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির মেয়ে শ্যামলী আক্তার সাংবাদিকেদের বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে পলাশবাড়ীর পৌর মেয়র ঘোড়াঘাট রোড হতে এস এম হাইস্কুলের প্রাচীরের পাশ দিয়ে চান প্রফেসরের বাড়ির দিকের রাস্তাটি প্রশস্তের কথা বলে ১নং খতিয়ান ভুক্ত সরকারি রাস্তার জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পৌর কতৃপক্ষ এবং পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বরত সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ১নং খতিয়ান ভুক্ত রাস্তার দুইধারের ঘোড়াঘাট রোড হতে এস এম হাইস্কুলের প্রাচীরের পাশ পর্যন্ত জমি পরিমাপ করে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি পলাশবাড়ী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেরাব হোসেন জনি, সহকারী প্রকৌশলী মো. মর্তুজা এলাহী, পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বরত সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল ও পৌর মেয়র গোলাম সারোয়ারসহ মোট ৪ জনের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি সার্ভে রিপোর্ট জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেন মেয়র। পৌরসভার সার্ভে রিপোটের উপর ভিত্তি করে চলতি বছরের ৫ মে ১৫ জন অবৈধ দখলদারের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন পলাশবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী ডি এম মোমিনুল হক।


সার্ভে রিপোর্টে ওই ইউনিয়ন ভূমি সহকারীর পাঠানো অবৈধ দখলদারের তালিকা ধরে ২০২৩ সালে ২৪ মে প্রশাসকের নির্দেশে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ( এনডিসি ) জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে ১নং খতিয়ান ভুক্ত সরকারি রাস্তার জমিতে থাকা ১৫ অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদে একটি অভিযান পরিচালিত হয়। উচ্ছেদ অভিযানে সার্ভে রিপোট অনুযায়ী ১নং খতিয়ানভুক্ত সরকারি রাস্তার জায়গায় যে অংশটি ছিল, শুধুমাত্র সেই অংশটিই ভাঙার পর উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত হয়। অভিযান পরিচালনা শেষে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল মিয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটিকে অবশিষ্ট যে ঘরগুলো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- তা মেরামত করে বাসযোগ্য করতে বলে অভিযান স্থান ত্যাগ করেন বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারটির।



সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শ্যামলী আক্তারের ছেলে লিয়ন ইসলাম বলেন, ২৮ মে মঙ্গলবার রাতে তার মা শ্যামলী আক্তার বিশেষ কাজে ঢাকায় যায়। এই খবর পেয়ে পর দিন ২৯ মে সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে মাহামুদুল ও মিঠুর নেতৃত্বে শতাধিক লোকের একটি দল সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের ফুলের দোকানের ভিতরে ঢুকে আমাকে মারধর করে বের করে দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ির দেয়াল বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে থাকে। এমতাবস্থায় আমার খালামনি সাহানুরসহ অন্যরা বাঁধা দিতে আসলে তাদেরকেসহ বাড়িতে থাকা অন্য সবাইকে মারধর করে জোরপূর্বক টেনে হিচড়ে পাশ্ববর্তী একটি স্কুলের ঘরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। পরে আমাদের সবার মোবাইলগুলো ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। আমাদের আটক রাখা অবস্থায় পৌর মেয়র গোলাম সরোয়ার বিপ্লবের নেতৃত্বে একটি বুলডোজার এনে মুহূর্তেই আমাদের বসতবাড়িসহ সকল স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়। লিয়ন আরও বলেন ,ভাংচুর শেষে আমাদের মোবাইল ফেরত দিলেও ভাংচুর করার সময় আমার বোন লিয়া ভাঙার সময় ভিডিও করার কারণে তার মোবাইল মেয়র নিয়ে যায়। মেয়রকে কল দিলে তিনি মোবাইলটি পরে দিবে বলে জানায়। তবে এ বিষয়ে জানতে পলাশবাড়ী পৌর মেয়রের কাছে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


এদিকে মেয়রের পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতবাড়ি ভাংচুরে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের কোন প্রকার নির্দেশনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান নয়ন বিবার্তাকে বলেন, এরকম কোন নির্দেশনার ব্যাপারে আমার জানা নেই। এটি মেয়র কেন ভেঙেছে তিনি বলতে পারবেন।


এ বিষয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) জুয়েল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমার কাছে জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র ১নং খতিয়ান রাস্তার জমি থেকে যেটুকু অবৈধ স্থাপনা ভাঙার অনুমতি ছিল সেটুকু ভাঙার পর অভিযান সমাপ্ত করেছি ।


অভিযোগের বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা বিবার্তাকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অভিযোগের বিষয় আমার জানা নেই। তবে যদি করে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।


উল্লেখ্য, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ওই পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সংবাদ সম্মেলনে পরিবারটি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের ক্ষতিপুরণসহ অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।


বিবার্তা/আনোয়ার/রোমেল/এনএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com