সূর্যমুখীতে হাসছে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা
ভোজ্য তেলের ঘাটতি মেটাতে লামায় কৃষি অধিদপ্তরের তৈলবীজ ‘সূর্যমুখী’ চাষের উদ্যোগ
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪৪
ভোজ্য তেলের ঘাটতি মেটাতে লামায় কৃষি অধিদপ্তরের তৈলবীজ ‘সূর্যমুখী’ চাষের উদ্যোগ
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সূর্যমুখী ফুল শুধু দেখতে রূপময় নয়, গুণেও অনন্য। এটি তৈলবীজ জাতীয় অর্থকরী ফসল। তাই বান্দবান জেলার লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি গতিরাম ত্রিপুরা পাড়া গ্রামের প্রিতমা ত্রিপুরা চাষ করেছেন ‘সূর্যমুখীর’। স¤প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তার সূর্যমুখী ক্ষেতটি। উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে সূর্যমুখীর ক্ষেতটির অবস্থান। প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছেন ক্ষেতে। সকাল বেলা পূর্বদিকে তাকিয়ে থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের সাথে সাথে ঘুরতে থাকে এ সূর্যমুখী। দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানান কৃষি বিভাগ।


জানা যায়, প্রথম বারের মত এবছরই উপজেলায় পরীক্ষামূলক সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের প্রণোদনায় ৭টি ইউনিয়নের ৪০ জন কৃষক ৩৩ শতক করে মোট ১৩ একর ২০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। এ চাষে ভালো ফলন হওয়ায় এটিকে নিয়ে কৃষকের মাঝে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। 


বুধবার ( ১৫ ফেব্রুয়ারি) গতিরাম পাড়াস্থ সূর্যমুখী ক্ষেতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা সুর্যমুখী গাছে ফুল ফুটে আছে। ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। সুর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এ সময় গজালিয়া ইউনিয়নের কৃষক মো. মিজান, করই মুরুং, অংছাচিং মার্মা ও তুমরিং মুরুং বলেন- এ বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। সূর্যমুখী চাষে খুব বেশি পরিশ্রম হয় না। শুধু বীজ বপণে একটু শ্রম দিতে হয়। এরপর দেখভাল করলেই চলে। তারা বলেন, প্রতি ৩৩ শতাংশ জমিতে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানান তারা। 


চাষী প্রিতমা ত্রিপুরা জানায়, এবছর আমি লামা কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা নিয়ে ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করি। কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বীজ ও সার ছাড়া ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে আমার ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আগত দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী গাছ ভেঙে ফেলেন। ফুলও ছিড়ে ফেলেন। তাই দর্শনার্থীদের কাছে কৃষকের অনুরোধ, তারা যেন সূর্যমুখী গাছ ও ফুলের কোনো ক্ষতি না করেন। 


এদিকে দর্শনার্থী জিয়াউর রহমান, মো. ইলিয়াছ, বোরহান, সেলিমসহ অনেকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখে ‘আমরা অনেক দূর থেকে সূর্যমুখী ক্ষেতে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সূযমুখীর ফুলে মুগ্ধ হলাম। আমার খুব ভালো লেগেছে। যিনি ক্ষেতটি চাষাবাদ করেছেন, তাকে অনেক ধন্যবাদ। যেন ভবিষ্যতে আরও মানুষকে সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দেন।’ একদিকে তারা আরো জানায়, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার দৃশ্য, অন্যদিকে সূর্যমুখী ফুল তাকিয়ে থাকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। মৌমাছিরা শেষ বিকেলে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সূর্যমুখী ফুল থেকে। তাছাড়া প্রতিদিন দেখা যায় প্রজাপতির মেলা। প্রাকৃতিক এ অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। এখানে আসা দর্শনার্থীরা নির্মল বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। 


গজালিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ বড়ুয়ার হিসেব মতে, ১ হেক্টর জমিতে ২টন বীজ উৎপন্ন হয় এবং প্রতি কেজি বীজ থেকে ৩০০ গ্রাম সূর্যমুখী তেল পওয়া যায়। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবছর প্রায় ১৩ একর জমিতে ১০ হাজার ৬৮৮ কেজি সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ থেকে ৩০০ গ্রাম করে ৩ হাজার ২০৬ কেজি তেল উৎপাদন হতে পারে। এতে করে প্রতিজন কৃষক ৩২ হাজার টাকার তেল বিক্রয় করতে পারবেন। 


এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লমাা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাসহ পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষাবাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাজারে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের তেল কিনতে পাওয়া যায়। যদিও সূর্যমুখী ফুলের তেল বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। ফুল থেকে তেল উৎপাদনের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে মধুও উৎপাদিত হচ্ছে।


এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার বর্মন বলেন, প্রথমবারের মত এ বছর লামা উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তরের প্রণোদনায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক চাষীকে বীজ ও সারও দেয়া হয়। গত ডিসেম্বরের শুরুতে ক্ষেতে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়েছিল। ফসল ঘরে তোলা যাবে এপ্রিলে। চাষীদের চাষ করতে বিশেষ সমস্যা বা তেমন খরচ নেই। একজন চাষি বিঘা প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করে তৈলবীজ সূর্যমুখী চাষ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখীর তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত ও শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাটযুক্ত। এ তেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে স্থানীয়  ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটনোর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা যাবে বলেও মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা। 


বিবার্তা/আরমান/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com