ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ব্লাড সুগার পরীক্ষা নিয়ে আরএমও'র ব্যাবসা!
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:২৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ব্লাড সুগার পরীক্ষা নিয়ে আরএমও'র ব্যাবসা!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে সরকারি কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়া ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা করা হয়। আর এই পরীক্ষার টাকা গত ৩ বছর ধরে একাই হজম করছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নুরুস শামস। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। 


হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, গত ৪ বছর যাবত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরু্রি বিভাগে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়। কোন প্রকার রশিদ ছাড়াই ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা করেন হাসপাতালের জরুরী বিভাগের স্টাফ নার্সরা। রশিদ না দিলেও এই পরীক্ষার জন্যে প্রতি রোগী থেকে নেওয়া হয় ৬০ টাকা করে। প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০টি ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা করা হয় ডিজিটাল স্ট্রিপের মাধ্যমে। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর আগে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা চালু করেন। এছাড়াও জরুরী বিভাগে ইসিজি করা হয়। যেন ইসিজি ও ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষার পর রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। সে সময় লভাংশের ওই টাকা দিয়ে কিট ক্রয় ও  ইমার্জেন্সি অজ্ঞাত বা অসহায় রোগীদের চিকিৎসা জন্য বাকি টাকা খরচ করা হতো। এই সেবা চালুর পর জরুরী বিভাগের অনেক চিকিৎসকে বিভিন্ন জায়গা বদলী ও পদায়ন করা হয়। এই বদলীর পর জরুরী বিভাগের ব্লাড সুগার পরীক্ষার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নূরুস শামস্।


সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে রানা নূরুস শামস গত প্রায় ২৬ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছেন। 


গত ৩ বছর যাবত ডা. রানা নূরুস শামস্ জরুরি বিভাগের ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষার টাকা নিজের কাছে জমা রাখেন। তিনি এখন পর্যন্ত ওই টাকার হিসেব হাসপাতালের কাউকে দেননি। এই টাকা কে নিচ্ছে এবং কোথায় জমা হচ্ছে স্বয়ং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক তা জানেন না। প্রায়ই ৩ বছর যাবত ওই টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছে ডা. রানা নূরুস শামস্। প্রতিদিন গড়ে ৮০টি ব্লাড সুগার পরীক্ষায় ৬০টাকা করে মোট ২৪০০টাকা আসে। এক মাসে আয় হয় ৭২ হাজার টাকা। গত ৩ বছরে ডাক্তার রানা নূরুস শামস ২৫ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা জরুরী বিভাগের ব্লাড সুগার পরীক্ষার জন্যে নিয়েছেন। যার একটি টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। 


সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে সিনিয়র স্টাফ নার্স সাদ্দাম মিয়াকে মুঠোফোন মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করলে রোগীদের কাছ থেকে ব্লাড সুগার (RBS) টাকা রিসিটের মাধ্যমে নেওয়া হয় কি না? তখন উনি বলেন ডা. রানা স্যার জানেন উনার সাথে কথা বলেন'-এ কথা বলে ফোন কেটে দেন সাদ্দাম মিয়া। 


হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ইমারজেন্সি বিভাগের হাপাতালের টাকা প্রতি মাসে আমার কাছে জমা হয়। রিসিট ছাড়া কোন টাকা আমার কাছে জমা হয় না। 
 
এ বিষয়ে মুঠোফোনে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রানা নূরুস শামস্ এর জানতে চাইলে বলেন, এই টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়। কোন খাতে ব্যবহার করার হয় জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নের জবাব জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন। 


ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামানের কাছে ইমারর্জেন্সি বিভাগের ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষার রিসিটের মাধ্যমে নেওয়া হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি রোগীদের কাছ থেকে রিসিটের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয় না। আমি জানি হাসপাতালে স্ট্রিপ নেই এ স্ট্রিপগুলো ডা.রানা দেন এবং স্ট্রীপের টাকা রেখে বাকি টাকাটা হাসপাতালের রাজস্ব তহবিলে জমা দেওয়ার কথা। প্রতি মাসে কত টাকা জমা দিচ্ছে এমন প্রশ্ন করলে? উনি বলেন, আমি তা জানি না অ্যাকাউন্টেট (হিসাব রক্ষক) বলতে পারবে। এখন থেকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।


বিবার্তা/আকঞ্জি/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com