
আমাদের রান্নাঘরটা কিন্তু জাদুঘরের থেকে কম কিছু নয়, মশলা থেকে মুরগি সবেতেই রয়েছে হরেক উপকারিতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আদা। চীন ও ভারতের ব্যবহার প্রথম শুরু হলেও আজ সারা বিশ্ব স্বীকার করে মশলা হিসেবে এর উপকারিতা। কিন্তু মসলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও যে বহু উপকারিতা রয়েছে আদার, সে কি আমরা জানি? জেনে নিন...
আদা কিন্তু একটা খুব ভালো অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, আন্টিটিউমার, আন্টিআলসার ও আন্টি ইফেক্টিভ এজেন্ট। এতে রয়েছে ৫০-৭০% কার্বোহাইড্রেট, ৩-৬%ফ্যাট, তারপিন, ফেনলিক যৌগ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফাইবার, ফাইটোস্টেরোল, ইত্যাদি।
আদার উপকার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আমাদের খাদ্যনালী ও পরিপাক অঙ্গগুলির উপর, এতে অদ্ভুত একটা কর্মিনাটিভ এফেক্ট আছে যা লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিঙটার গুলির ওপর কম চাপ তৈরি হতে দেয় ও ডিসপেপ্সিয়া প্রতিরোধ করে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি:
বিয়েবাড়িতে কি মাটন খুব বেশি খাওয়া হয়ে গেছে? ঘুম আসছেনা রাতে, মনে হচ্ছে গলা অব্দি খাবার ভর্তি? এমন সমস্যায় মুশকিল আসান কিন্তু আদা। খুব তাড়াতাড়ি আদা গাটকে প্রটেক্ট করে আবার নরমাল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে। লিকার চা এর সাথে কয়েকটুকরো আদা ফুটিয়ে সেই চা খেয়ে নিন দুবার, ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
ক্ষুধামন্দ :
বর্তমানে প্রত্যেক মানুষই কম বেশি মানসিক সমস্যার শিকার, এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরে আমাদের খিদেতে, বাড়িতে টিনএজার মেয়ে হয়তো প্রায়ই বলে মন খারাপ, খাবো না, তাইতো? ২ চামচ আদার রসে লেবুর রস ও বিটলবণ দিয়ে খাইয়ে দিন, আধঘন্টার মধ্যে খাবার প্রবল ইচ্ছে হবে।
অ্যাসিডিটি :
খাবারে একটু অনিয়ম হলেই কি অ্যাসিডিটি হয়ে যাচ্ছে? ভয় পাচ্ছেন কোনো অনুষ্ঠান বাড়ি যেতে? এর ওষুধ কিন্তু আপনার হাতের সামনেই আছে। রোজ সকালে ৫-৬কুচি আদা, এক চামচ লেবুর রস, এক চামচ মধু ও এক গ্লাস গরম জল খান, অ্যাসিডের সমস্যা আর হবেই না।
এছাড়াও আদা গ্যাস্ট্রিক মোবিলিটি বাড়ায়, কনস্টিপেশান প্রতিরোধ করে, এতে উপস্থিত ভোলাটাইল যৌগগুলি গ্যাস্ট্রিক ইরিটেশন কমায়।
অনেকেরই দেখা যায় একটু কিছু খাওয়ার পরেই ভীষণ পেট ভার হয়ে থাকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত, সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা ও গা বমি ভাবের কারণে দেহে অধিক পরিমাণে ওয়েস্ট গ্যাস তৈরি হয়।
প্রত্যেকদিন খাওয়ার আধ ঘন্টা পর এক চামচ আদা ও লেবুর রস খেয়ে দেখুন, নিমেষে মুক্তি পাবেন এই সমস্যা থেকে। আদা -লেবুর রস আমাদের শরীরে ডাইজেস্টিভ জুস গুলিকে (বাইল, সালাইভা) উদ্দীপ্ত করে খাবার দ্রুত হজম করায়।
বাইরের খাবার খাওয়ার পর পেটের সমস্যায় ভুগছেন? বার বার বাথরুমে যাওয়া সত্যিই কষ্টকর, মুশকিল আসান তো আছেই, এক কাপ জলে এক চামচ আদার রস মিশিয়ে খেয়ে নিন, সারাদিনে এই জল ৪-৫ বার খেলেই উপকার মিলবে। মুক্তি পাবেন পেট ব্যথা থেকেও। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে আদার রস স্টমাকে prostaglandin-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা সেরাম গ্যাস্ট্রিন এর পরিমাণও বাড়ায়। হজমের পক্ষে যা অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন আদার রস খেলে উপকার মেলে আর্থ্রাইটিস এর ব্যাথা থেকেও।
Non alcoholic ফ্যাটি লিভার ডিসিজ এর ক্ষেত্রেও আদার রস বেশ উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে একটানা ১২ সপ্তাহ এই রস সেবনে হেপাটিক স্টিয়াটোসিস, inflammatory মার্কার লেভেল ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর ক্ষেত্রে বেশ কম হয়।
পরিপাক তন্ত্রের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও আদার রসের উপকারিতা লক্ষণীয়। দেখা গেছে প্রত্যেকদিন আদার রস কোলরেক্টাল এপিথেলিয়াম এর প্রলিফেরাশান কমায়।
আদা দেখতে ছোটো হলেও উপকার কিন্তু অগুনতি। তাহলে কাল থেকেই শুরু হয়ে যাক এই কয়েকটা ভালো অভ্যাস।
বিবার্তা/অনামিকা/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]