ইসলামে হিজড়াদের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৬
ইসলামে হিজড়াদের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যে ব্যক্তির মাঝে পুরুষ ও মহিলা উভলিঙ্গের আলামত বিদ্যমান থাকে, তাকে হিজড়া বলা হয়। হিজড়া আল্লাহ তাআলারই বান্দা বা বান্দি। তারা আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। তারাও আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব।


তারাও মানুষ। আমাদের মতই মানুষ। তবে যেমন অনেক মানুষের শারীরিক ত্রুটি থাকে। এটিও তাদের তেমনি একটি ত্রুটি। এ ত্রুটির কারণে উক্ত ব্যক্তি মনুষ্যত্ব থেকে বেরিয়ে যায় না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতই তারা আরো বেশি স্নেহ, মমতা ও ভালবাসা পাবার অধিকার রাখে। তাদের ঘৃণা নয় ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে সম্মানের সাথে বাঁচতে দেয়া উচিত।


তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, খারাপ মন্তব্য করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। যেকোনো মুসলমানকে গালি দেয়া যেমন পাপ তাদের গালি দেয়া তার চেয়ে বেশি পাপ। কোন মুসলমানকে তাচ্ছিল্য করা যেমন পাপ তাদেরকে তাচ্ছিল্য করা এর চেয়ে কম পাপ নয় বরং আরো বেশি পাপ। কারণ তাদের এ দুর্বলতার কারণে তাদের ঠাট্টা করা মানে হল আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে ঠাট্টা করা। আল্লাহর সৃষ্টিকে হাসি তামাশার বিষয় বানানো। তাই এটি খুবই গর্হিত গোনাহের কাজ।


মৌলিকভাবে ইসলামে পুরুষ ও নারীকেই গণ্য করে থাকে। আর যারা উভলিঙ্গ হয়ে থাকেন তারাও মূলত হয় নারী হোন বা পুরুষ হয়ে থাকেন। তাই তাদের ব্যাপারে আলাদা কোন বিধান আরোপ করা হয়নি। যে উভলিঙ্গের অধিকারী ব্যক্তির মাঝে যেটি বেশি থাকবে, তিনি সেই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হবেন। তাই তাদের ব্যাপারে আলাদা কোন বিধান আরোপ হবার প্রয়োজনই।


হযরত আলী রা. কে এমন বাচ্চা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যার ছেলে বা মেয়ে হওয়া পরিষ্কার নয়। তখন হযরত আলী রা. বললেন, সে যেভাবে প্রস্রাব করে সে হিসেবে মিরাস (সম্পত্তি) পাবে। (সুনানে বায়হাকি কুবরা ১২৯৪, কানযুল উম্মাল ৩০৪০৩, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ১৯২০৪)
যদি কোন লিঙ্গই না থাকে, শুধু পেশাব করার জন্য স্থান থাকে, তাহলে তাকেও হিজড়া বলা হয়। (বাহরুর রায়েক) পুরুষ ও নারীর আলামত অনুপাতে তার উপর পুরুষ ও নারী হবার হুকুম আরোপিত করা হবে।
যদি পুরুষের আলামত প্রাধান্য পায়, তাহলে তাকে পুরুষ, আর যদি নারীর আলামত প্রাধান্য পায়, তাহলে সে নারী হিসেবে ধর্তব্য হবে। মনে করা হবে যে, তার মাঝে অতিরিক্ত একটি গুণ বিদ্যমান রয়েছে। সেটি হল, পুরুষের জন্য নারীত্বের, আর নারীর জন্য পুরুষত্বের গুণ বিদ্যমান থাকা।
আর যদি যদি পুরুষ ও নারীর কোন আলামতই প্রাধান্য না পায়,তাহলে তাকে ফুক্বাহায়ে কেরাম ‘খুনছায়ে মুশকিল’ বলে উদ্ধৃত করেন। অর্থাৎ এমন হিজড়া যার লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব নয়। (আল মাগনা লি ইবনে কুদামাহ ৭-২০৮) হিজড়ার পুরুষ হবার আলামত হল, দাড়ি উঠা, নারীর সাথে সহবাস করার সক্ষমতা থাকা।
আর নারী হবার আলামত হল, স্তন উঠা, হায়েজ আসা, গর্ভধারণের ক্ষমতা থাকা, দুধ আসা, তার যৌনাঙ্গ দিয়ে সহবাস করা সম্ভব হওয়া ইত্যাদি। (বাদায়েউস সানায়ে ৭-৩২৭)


এ আলামত প্রকাশ পায় বালেগ হবার পর। বালেগ হবার আগে পুরুষ নারী বুঝার আলামত হল, তার পেশাবের রাস্তা। যদি পুরুষালি লিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে পুরুষ, আর যদি নারী লিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে নারী। আর যদি দু’টি দিয়েই পেশাব করে, তাহলে পেশাব আগে যে অঙ্গ দিয়ে বের হয়, সেই অঙ্গ হিসেবে নারী পুরুষ নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ যদি পেশাব প্রথমে পুরুষাঙ্গ দিয়ে বের হয়, তাহলে পুরুষ আর যদি নারী অঙ্গ দিয়ে বের হয়, তাহলে তাকে নারী ধরা হবে।
আর যদি উভয়টা দিয়ে একই সময়ে বের হয়, তাহলে তাকে খুনছায়ে মুশকিল বলবে।
হিজড়াদের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
উপরের আলামত অনুপাতে পুরুষ হলে পুরুষের আর নারী হলে নারীর হুকুম আরোপিত হবে। ছেলে হলে ছেলে হিসেবে আর মেয়ে হলে মেয়ে হিসেবে মিরাস বা বাবার সম্পত্তি পাবে। তবে যদি খুনছায়ে মুশকিল হয়, নারী না পুরুষ বুঝা না যায় তাহলে তার কিছু বিধান রয়েছে ইসলামে।


হিজড়া যদি খুনছায়ে মুশকিল হয় তথা পুরুষ বা নারী নির্ধারণ করা না যায়, তাহলে তার হুকুম কী হবে?
ছেলে এবং মেয়ে হিসেবে মিরাস বা সম্পদের মাঝে যেটি কম হবে সেই অংশ মিরাস হিসেবে পাবে। অর্থাৎ তাকে ছেলে ধরলে যতটুকুু পায়, আর মেয়ে ধরলে যতটুক পায়, এর মাঝে যেটা ধরলে কম পায়, সেই হিসেবে তাকে মিরাস সম্পদ দেয়া হবে। (বাহরুর রায়েক ৮-৫৪৩)



বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com