যে আমলে মিলবে দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:০৮
যে আমলে মিলবে দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিয়ে জীবনের অনুষঙ্গ। আল্লাহ তায়ালাই জোড়া মিলিয়ে রেখেছেন। প্রয়োজন শুধু খুঁজে নেয়ার, দোয়া করার। বর্তমানে অনেক পরিবার সঠিক সময়ে বিয়ে দিচ্ছে না তরুণ-তরুণীদের। যার কারণে গুনাহে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই।


অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, সন্তান সাবালক হলে বিয়ে না করালে সে যে গুনাহগুলোতে জড়াবে আপনিও তার ভাগিদার হবেন। যার সামর্থ আছে তাকে অবশ্যই বিয়ে করিয়ে দেয়া বাবা-মায়ের কর্তব্য। আবার কেউ কেউ বিয়ে করতে চাইলেও পছন্দ মতো পাত্র কিংবা পাত্রী না পাওয়ায় বিয়ে করতে পারছেন না। তাদের জন্য জরুরি ও কার্যকরী কিছু আমল।


হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রসুল সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা তিন প্রকার মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালার পথে জিহাদকারী, মুকাতাব দাস, যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে। বিয়েতে আগ্রহী লোক, যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। (তিরমিজি: হাদিস, ১৬৫৫) বিয়ে পবিত্র সম্পর্ক। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। বিয়ের আগে কোনো অবৈধ সম্পর্ক গড়ে বিয়ে করা আল্লাহর পছন্দ করেন না। সে জন্য সবসময় গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে।


পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার আমল


আল্লাহ পাকের কাছে কোনও কিছুর অভাব নেই। যে আল্লাহর কাছে চায় তার উপরই আল্লাহ খুশি হোন। তার কল্যাণ যখন হবে তখনই সেটা দান করেন। সৎ মনে আপনি যদি আল্লাহ পাকের কাছে আপনার জীবনের অর্ধেক দিন পূর্ণ করতে চান। বিয়ে করার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে আমল করতে চান তাহলে আল্লাহ পাক অবশ্যই আপনাদের মনের আশা পূরণ করবেন।


এ ক্ষেত্রে আল্লাহর শেখানো দোয়াটাই বেশি বেশি পড়া উচিত। رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا উচ্চারণ: রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউন, ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা। অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে। আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ করুন।’ (সুরা: ফুরকান, আয়াত: ৭৪)


তবে মনে রাখতে হবে, বিয়ে পবিত্র সম্পর্ক। বিয়ের আগে অবাদ মেলামেশা, কথা বলা, দেখা করা, এসব করে এ পবিত্র সম্পর্ককে অপবিত্র করবেন না। অধিকাংশ প্রেমের বিয়ে টিকে না বেশি দিন। কারণ, তাদের এ পবিত্র সম্পর্কটার শুরু অপবিত্রতা দিয়ে।


এজন্য বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে কখনো কালিমা লেপন করবেন না। আর বিয়ে আল্লাহর দেয়া নিয়ামত। এ পবিত্র বিয়ের আগে আপনার কোনও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন অন্যের আমানতের খিয়ানত করা হয়। তাই আপনার বয়স ও প্রয়োজন হলে অবশ্যই বিয়ে করে নিন। তারপরও কোনও খারাপ সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের জীবনে অবৈধ প্রভাব ফেলবেন না।


বিয়ে করা কি ফরজ নাকি সুন্নত


বিয়ে করা আল্লাহর রসুলগণের চিরায়িত নীতি। এ হিসাবে এটি সুন্নাত। তবে, ব্যক্তি বিশেষের অবস্থা অনুযায়ী এটি নানা পর্যায়ে রূপ নেয়। যেমন, সাধারণত বিবাহ সুন্নাত। কোনো ব্যক্তির চারিত্রিক স্খলন বা বড় গুনাহর সম্ভাবনা দেখা দিলে বিয়ে করা ফরজ। যার মধ্যে স্ত্রীর নানাবিধ হক বা অধিকার দেওয়ার মোটেও যোগ্যতা নেই, তার পক্ষে বিবাহ করা নাজায়েজ। ক্ষেত্র বিশেষে বিবাহ ওয়াজিব, নফল ও মুস্তাহাবও হয়ে থাকে। (জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামি ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ)


রসুল সা. আরও বলেছেন, তোমাদের কাছে এমন কোনো ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সঙ্গে (তোমাদের মেয়েদের) বিয়ে দাও। তোমরা যদি তা না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৯৬৭)।


গুনাহ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে সামর্থ্য অর্জনের পাশাপাশি রোজা রাখা। সাহাবি হজরত আব্দুলাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে, আর যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য না রাখে সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা তার কামভাবকে দমন করবে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ২২৪১)


বিয়ে হওয়ার দোয়া বেশি বেশি পড়া


সহজে বিয়ে হওয়ার জন্য বেশি বেশি সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে দোয়া করতে হবে। কোরআনে বর্ণিত বিয়ের জন্য বিশেষ একটি দোয়া রয়েছে। প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে হবে। নামাজের পর ছাড়াও পড়া যাবে। যে কোনো সময়ে যে কোনো জায়গায় পড়া যাবে।


رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا উচ্চারণ: রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউন, ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা। অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে। আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ করুন।’ (সুরা: ফুরকান, আয়াত: ৭৪)


কোরআনের কিছু আয়াতের আমল


সমাজের একটি সমস্যা হলো ক্যারিয়ার গঠনের ধোঁয়াশায় পড়ে যথাসময়ে বিয়ে না করা। এভাবে বয়স বেড়ে যায়, বিবাহ করা কঠিন হয়ে যায়। তখনই হতাশা আর ধোঁয়াশায় জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়ে মানুষ। কোরআনের কয়েকটি আয়াত নিয়মিত পাঠে আল্লাহর ইচ্ছায় এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।


فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ উচ্চারণ: ফাইং তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম। অর্থ: এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারও বন্দেগি নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি। (সুরা: তাওবা, আয়াত: ১২৯)


হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন খুব একাকি ও বিষণ্নতা অনুভব করতেন তখন তিনি এ আয়াতটি বেশি বেশি পাঠ করতেন। দ্রুত বিয়ের ক্ষেত্রে এ আয়াতের আমলটিও করতে পারেন। সুরা কাসাসের ২৪ নম্বর আয়াত- فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ উচ্চারণ: ‘ফাসাক্বা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্বির।’


এ ছাড়াও দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য প্রতিদিন ১১ বার সুরা দোহা পড়া যেতে পারে। সুরা ইয়াসিন ও আল্লাহর ৯৯ নামও খুব কার্যকরী।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com