শিরোনাম
প্যান্ডামিক, ইনফোডেমিক ও ইকোডেমিক: ত্রিসংকটে করণীয়
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ১৭:১৮
প্যান্ডামিক, ইনফোডেমিক ও ইকোডেমিক: ত্রিসংকটে করণীয়
প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল
প্রিন্ট অ-অ+

রকেট গতিতে দেশ হতে দেশ দেশান্তরে ছুটে চলছে করোনাভাইরাস। এর গতি ও প্রকৃতি বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে সারা বিশ্ব। টার্গেট দৃশ্যত: দূর্বল ইমিউনিটি'র মানুষ। অগোচরেই শেষ করে দিচ্ছে অর্থনীতি। আইএমএফ এর ভাষায় এর দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় মারা যাবে আরো ৫০ কোটি মানুষ। একশো বছর পর পর সৃষ্ট প্যান্ডামিক তিনটি সমান্তরাল ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হয়। কভিড-১৯ ও তার ব্যতিক্রম করেনি।


প্যান্ডামিক থেকে ইনফোমেডিক অতঃপর ইকোডেমিক! আর এই ত্রিসংকটের কারণে বিশ্ববাসীর ওষ্ঠাগত প্রাণ। এই মুহূর্তে বিশ্বে ৩ মিলিয়ন এর অধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার জনের। প্যান্ডামিকের এই মহাবিপদকালে এর থেকে সৃষ্ট হাজারো গুজব, ভুলতথ্যের ছড়াছড়ি এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে চটকদার ভিডিও সহ নানান ফতোয়া-ফিকিরকে এককথায় আমরা ইনফোডেমিক বলতে পারি। আর এই প্যান্ডামিক ও ইনফোডেমিক এর অর্থনৈতিক প্রভাবকে বলি ইকোডেমিক।


মহামারী নিয়ন্ত্রণে একমাত্র সমাধান সোসাল ডিসটেন্স। লকডাউন, হোম-কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এসবের মূল লক্ষ্যই হলো সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে মহামারী সংক্রমণ রোধ করা। সেই ১৭২০ সালের প্লেগ, ১৮২০ সালের কলেরা, ১৯২০ সালের স্পেনিশ ফ্লু, এবং ২০২০ সালের করোনাভাইরাসের মরনছোবল প্রতিটি প্যান্ডামিক নিয়ন্ত্রণে কাজ দিয়েছে এই সোসাল ডিসটেন্স। অথচ কি নিষ্ঠুর নিয়তি! একশো বছর পর পর একবার প্যান্ডামিক আসে৷ তার হাত থেকে বাঁচতে আমরা সেই একশো বছর আগের চিকিৎসা পদ্ধতিই বহাল রাখছি। কিন্ত কেন? প্রশ্নটির উদ্রেগ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। উত্তরও জানা। কারণ, ভ্যাকসিন তৈরিতে সময় লাগে ১২-১৮ মাস। এই সময়ের মধ্যে আপনি তিনবার প্রশান্ত মহাসাগরে স্বল্পমাত্রার পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালাতে পারবেন। ড্রোন দিয়ে কাশেম সুলেমানীকে খুঁজে বের করে সূদুর পেন্টাগন থেকে ইরাকে রিমোট নিয়ন্ত্রণের নির্ভুল নিশানায় তাকে হত্যা করতে পারবেন। মৃত্যু সুনিশ্চিত করে আবার আপনি সবার আগে টুইট বার্তায় মহাবীরের মত বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে এতটুকু দ্বিধা বোধ করেননি, 'এই মাত্র কাশেম সুলেমানীকে ওপারে পাঠিয়ে দিলাম'। করোনাভাইরাসের আক্রমণে হাজারো লাশের মিছিলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আপনি ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ শীথিলে বিন্দু মাত্র সহানুভূতি দেখাননি। দীর্ঘ একমাস প্রতিদিন গড়ে দু’ হাজার করে লাশ চোখের সামনে দেখতে পেয়েও টনক নড়েনি আপনার? সামরিক শক্তির ওপর ভর করে অন্ধ না হলে কি করে পনেরো হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পর গঠন করলেন ভ্যাকসিন টাস্কফোর্স যা কিনা শুরুতেই করার কথা আপনার। প্রযুক্তির সকল ব্যবহার তো সৃষ্টিতে নয়, মানবতা নিধনের অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করেছেন। করবেন কি করে নতুন ভ্যাকসিন তৈরির কাজ? আর এসব কারণেই একশো বছর পরও আমাদেরকে সেই সনাতন পদ্ধতিতেই প্যান্ডামিক মোকাবেলা করতে হচ্ছে।


ইতোমধ্যে করোনা প্যান্ডামিকের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের আড়াই'শ কোটি মানুষ লকডাউনে রয়েছে। লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রেখে তাদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা। প্যান্ডামিকের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ার প্রাথমিকভাবে শুধু মৃতের সংখ্যা প্রকাশ পায়। অথচ লকডাউনের কারণে এর অর্থনৈতিক ক্ষতি কতটুকু তা তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা যায় না।


নিয়ম হলো লকডাউনের মধ্যেও প্রয়োজনীয় সাপ্লাই-চেইন সচল রাখতে সংশ্লিষ্টদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া। কলকারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রটোকল অনুসরণ করা। কর্মীদের কর্মস্থলে যাতায়াত ও কাজ শেষে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রানজিটের ব্যবস্থা করা। লকডাউনের সকল শর্ত মেনে জরুরি পণ্য পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ যত্ন নেয়া এবং তাদের যাতায়াত অবাধ ও নিরাপদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আর এই পুরো কাজগুলো রাষ্ট্রকেই দ্বায়িত্ব নিয়ে করতে হয়। অন্যথায় অন্যসব পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে। অর্থনীতি দেউলিয়া হতে শুরু করবে। আর এর প্রভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ধ্বংস হতে হতে তা একসময় বৃহৎ শিল্পকে স্থবির করে দিবে। এটাও প্যান্ডামিকের মত একধরনের সংক্রমণ। আর এই সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দাই হলো ইকোডেমিক। যার উৎস মূলত লকডাউন। সম্পুর্ণ অর্থনীতি ধসে পড়ার পূর্বে এই সংক্রমণ বন্ধ করা জরুরি।


নাইন ইলেভেনের পর বিশ্বব্যাপী সুরক্ষার একটি নতুন শিল্প চালু হয়েছিল। এটি মেটাল ডিটেক্টর, সিসিটিভি, সিকিউরিটি অ্যালারম, কুকুর ও নিরাপত্তা প্রহরীদের জন্য একটি প্রটোকল তেরি করেছিল। করোনা পরবর্তী বিশ্বেও অনুরূপ নতুন একটি প্রটোকল এসে যাবে। কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব যা আজীবন ব্যবহার করবে। যেমনঃ অফিস আদালত, কল কারখানা, বাসা-বাড়ি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পূর্বে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। প্রত্যেককে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তিকে হ্যান্ড-স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে কর্মস্থলে প্রবেশ ও প্রস্থান করতে হবে। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা যাবে না। ইত্যাদি আরো কতকি। তবে করোনা পরবর্তী বিশ্বে এগুলো সরকারি আদেশের মাধ্যমে ঘটবে না। মানুষ তার নিজের বেঁচে থাকার স্বার্থেই এমন প্রটোকল বেছে নিবে। প্যান্ডামিক নিয়ন্ত্রণে যেমনি ভ্যাকসিনের প্রয়োজন এবং তা তৈরিতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময়ের দরকার; অনুরুপ অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায়ও দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষায় কভিড-১৯ স্প্রিন্ট দৌড় না হয়ে এবার ম্যারাথন হয়েই বিশ্বে ১২ থেকে ১৮ মাসের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে এলো।


সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই কঠিন যে লকডাউনের চলাকালীন কোনো শিল্প কারখানা খোলা রাখা অত্যাবশ্যক ও কোনটি কম অত্যাবশ্যক। তাই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি। সরকার শুধু হটস্পটগুলি বিবেচনায় নিয়ে তার প্রটোকল সেট করবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা মহামারী প্রতিরোধে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে ভৌগোলিক অঞ্চল বিবেচনা করে লকডাউন শীথিল করবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬২টি জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আর হটস্পট হিসেবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীকে মনে করা হলেও নতুন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর সাথে যুক্ত হবে হয়তো।


প্রতিদিন দুপুর আড়াইটায় করোনামহামারীর বিস্তারিত পরিসংখ্যান নিয়ে টিভি স্ক্রীনে হাজির হচ্ছেন আইইসিডিআর এর কর্মকর্তাগণ। এ যেন পরীক্ষায় পাস ফেলের খবর প্রকাশের মতো। মৃত আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে মনটা ভার হয়ে যায়। আর কমলে কি যে ভালো লাগে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার মতো মানসিক অবস্থা যে গোটা দেশের মানুষের তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


সমস্যা হলো প্যান্ডামিক, ইনফোডেমিক ও ইকোডেমিক এই সংকট তিনটি পরস্পর নির্ভরশীল ও সমান্তরাল। তাই একসাথে এগুলো মোকাবেলা করাও অসম্ভব। তারপরেও যদি একসাথে সবগুলোর মোকাবেলা করা যায় তো খুব ভালো। এজন্য দরকার উত্তম পলিসি, পর্যাপ্ত বরাদ্দ, সঠিক সময় ও আন্তরিক প্রচেষ্টা। নিঃসন্দেহে অর্থনীতি এখন নিম্নমুখী। করোনার কারণে আমদানি-রফতনিতে ধস নেমেছে। প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দেশে টাকা পাঠানো কমে গেছে, বলতে গেলে প্রবাসী আয়েও ধস নেমেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও সমস্যার মধ্যে পড়েছে। পরিবহনসংকট চারদিকে। তাই পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে কৃষি খাতে বোরো ধান কাটার সময় এসেছে। সাধারণত অন্য জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা বোরো ধান কাটতে আসেন। কিন্তু করোনার কারণে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ থাকায় তারা আসবেন কীভাবে? সময়মতো এই কৃষিশ্রমিকেরা খেতে খামারে থাকতে পারবেন কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে।


ইকোডেমিক এর কারণে বাজার অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়। দানা বাঁধে গুজব। ইক্যুটি মার্কেট এসময় আগাম অর্থনীতি বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দেয়। এর আলোকেই ঘোষিত হয় প্রণোদনা প্যাকেজ। ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করাই এ প্যাকেজের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে প্যান্ডামিক থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন যা পর্যায়ক্রমে তিন বছরে বাস্তবায়ন করা হবে। মন্দা মোকাবেলা করে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে এটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সর্বমহলে যা ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছে। বিশ্বের ২১০টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এত দ্রুত সময়ে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান এতটা দূরদর্শীতার পরিচয় দিতে পারেনি। এরুপ আগাম পরিকল্পনার কারণেই ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান গ্লোবাল রিসিশনের মধ্যেও আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেই সময়ের ওই পরিকল্পনাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই করেছিলেন। খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা এবারো মন্তব্য করে বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ প্যান্ডামিক মোকাবেলায় সফল হবে এবং এর ফলে সৃষ্ট ইনফোডেমিককে থোরাই পরোয়া করে অদূর ভবিষ্যতে ইকোডেমিক থেকে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।


তবে লকডাউন যদি সূদুরপ্রসারী হয় এবং করোনাভাইরাসের প্রকোপ যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আসে, তখন চরম মন্দার ভয় থেকেই যাবে। এরুপ অস্বাভাবিক পরিবেশে ঋণখেলাপীদের পক্ষ নিয়ে বিচার বিভাগ, সুশীল সমাজ সবাই সরকারকে অনুরোধ করে বকেয়া মওকুফ কিংবা সময় বাড়াতে। এর ফলে বড় বড় ব্যবসায়ীদের পশ্চাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। ফলে সরকারের ঋণের বোঝা পাহাড়সম হয়। তখন সরকারের একার পক্ষে এ ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যুক্ত করতে হয় একাধিক রাষ্ট্রকে। চাওয়া হয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। গ্লোবাল ইকোনমিক নেটওয়ারকিং ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবেলা করা তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে।


বিশ্বের এক নম্বর ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ দরিদ্র রাষ্ট্রকে সহায়তা প্রদানের কথা। অথচ এই ত্রিসংকটের কারণে তার নিজেরই এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। প্যান্ডামিক মোকাবেলায় দারুন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মত্ত মার্কিন প্রশাসনের স্বাস্থ্যসেবায় নজর দেয়ায় সুযোগ কোথায়? হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ আছে কি-না তা ভাববার সময় কোথায় তার? ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। লাশের মিছিল কিছুতেই থামছে না।এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে।প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা। অথচ এক বছরে পারমাণবিক কর্মসূচিতে তারা যা ব্যয় করে তা দিয়ে ৩ লাখ আইসিইউ বেড, ৩৫ হাজার ভেন্টিলেটর ও ৭৫ হাজার ডাক্তারের বেতন দেয়া সম্ভব।


সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। এই কথাটি মুলধারার গণমাধ্যমে কম করে হলেও প্রতিদিন একশো বার প্রচারিত হয়। কিন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমরা কি দেখলাম? একদিকে ত্রিসংকট উত্তরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপ- দিন রাত বিনিদ্র থেকে জনগণকে রক্ষার চেষ্টা। সামর্থের সবটুকুন দিয়ে ডাক্তার, নার্সদের রোগী বাঁচানোর অন্তহীন প্রচেষ্টা। মিডিয়া, পুলিশ, প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণকে সাবধান করা। সমাজসেবীরা প্রাণতুচ্ছ করে যার যা আছে তাই নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার চিত্র এখন সর্বত্র। অন্যদিকে রাতের অন্ধকারে সিদ্ধান্ত নিয়ে সব পোশাক কারখানার কর্মীদের বাড়ি থেকে ডেকে ঢাকার রাজপথে নামানো। মৃত ব্যক্তির জানাযায় রাজনৈতিক শোডাউন? এগুলো কিসের আলামত? এটা কোন ধরনের হলিস্টিক এ্যাপ্রোচ? মিডিয়ায় ধর্মমন্ত্রীর নির্লজ্জ অপব্যাখ্যা "জানাযায় বাধা দিলে পরিস্থিতি করোনার চেয়েও ভয়াবহ হতো।" তাহলে কিসের এত লকডাউন? কোটি কোটি মানুষকে ঘরে লকডাউনে রেখে প্রশাসনের যারা এরুপ বৃহৎ জনসমাগমের ব্যবস্থা করে দিলো তাদের শুধু প্রত্যাহার নয়। চাই এর অন্তরনিহিত কারণ জানতে। এখানে ত্রিসংকট মোকাবেলায় যে হলিস্টিক এ্যাপ্রোচ দরকার ছিল তা সূদুরপরাহত। কারণ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় পৃথিবীর কোনো মহামারী কোনোকালেই কোনো জাতি, দেশ ও রাষ্ট্র একাকী মোকাবেলা করে সফল হতে পারেনি।


প্যান্ডামিক বলে কয়ে আসে না। এর জন্য মানুষের আগাম কোনো পূর্ব প্রস্তুতিও থাকে না। তবে কভিড-১৯ চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর সমগ্র বিশ্ব কয়েক সপ্তাহ সময় পেয়েছিল। তখন কেউ এর ভয়াবহতা বুঝে উঠতে পারেনি। খোদ যুক্তরাষ্ট্র এটাকে চাইনিজ ভাইরাস বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেই ক্ষান্ত হয়নি ট্রাম্প নিজেই তার টুইটারে অনেক ট্রল করেছে ব্যাপারটাকে নিয়ে। আর এসবের সূত্র ধরেই মিডিয়ায় করোনা ইনফোডেমিক ঘটে যায়। এই ইনফোডেমিকের মাত্রা আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তথ্যের সত্যমিথ্যা যাচাই করা একজন গবেষকের পক্ষেও এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে এখনো প্রতিদিন প্রতিনিয়ত গুজব, তথ্য লুকানো, ভুলতথ্য পরিবেশনা একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। নেপথ্যে কাজ করছে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের মতাদর্শ, দর্শন বা বলয়ের প্রভাব। কেউ বা আবার সামাজিকভাবে যেন হেয় প্রতিপন্ন না হোন সেজন্য করোনা পজিটিভ নিয়েও সবখানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে ভয়াবহভাবে বাড়ছে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। এর ফলে জনমনে বাড়ছে ভয় যা মানসিক স্বাস্থ্যে কঠিন আঘাত হানছে। দূর্বল করে দিচ্ছে আমাদের ইমিউন সিষ্টেমকে। তাই পরিহার করতে হবে গুজব। বাড়াতে হবে সচেতনতা। মানতে হবে সকল স্বাস্থ্যবিধি। অত:পর আটঘাট বেঁধে নামতে হবে ইকোডেমিক মোকাবেলার কঠিন চ্যালেঞ্জে। ভয় নয়। মনে রাখতে হবে জয় মানুষেরই হয়।


লেখক: প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল, ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com