
মনের বোবা কান্নায় চোখে জল আসে না৷ সব কিছু থমকে গেছে। সারা বিশ্ব আজ লড়াই করছে ক্ষুদ্র একটা ভাইরাসের সাথে৷ তার ক্ষমতার কাছে এখনো পরাজিত মানুষ। বিধাতার কাছে সার্বক্ষণিক একটাই চাওয়া, 'এ বিপদ থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করো।'
একসাথে সব দেশ আজ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। গ্লোবাল ভিলেজ শব্দটা আগামীতে কতটা অর্থবহ হবে তা এখন প্রশ্ন হয়ে রইল। এ মুহুর্তে ভারী ভারী কথাতে অনেক বেশি শংকিত হয় মায়ের মন। বিদেশে থাকা সন্তানদের নিয়ে এত উদ্বিগ্নতা এভাবে জীবনে আসবে তা ছিল কল্পনাতীত। ঘুমহীন রাতে অপেক্ষার প্রহর কাটছে শুধু সন্তানকে কাছে পাওয়ার আকুলতা নিয়ে।
সব বাবা মা ই চায় সন্তানের জন্য একটা সাজানো পৃথিবী ও সুন্দর জীবন। সে জন্য সন্তানকে উচ্চ শিক্ষা দিতে ছেলে মেয়েকে বিদেশে পাঠায়। সাধারণত উন্নত বিশ্বে পড়ালেখার সিস্টেমে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে না। আর তাদের জীবন যাত্রাতে অনিশ্চিয়তার নেই বললে চলে। তাই কোভিট১৯ শুরু হবার পরেও বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে বিদেশে রয়ে গেছে পড়া লেখার কারণে। তাদের যুক্তির কাছে বাবা মায়ের আবেগ টিকেনি। ক্লাস পরীক্ষা কারণে তারাও বাবা মায়ের কথা শুনে দেশে ফিরে আসেনি।
কিন্তু কোভিড১৯ আবেগ, যুক্তিকে মিথ্যে করে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্বের নামে বাহ্যত আলাদা করে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। করোনাভাইরাসের জীবাণু শরীরের মাধ্যমে বহন করে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যায়। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্ধ হয়ে যায় সব দেশের বিমান চলাচল। ফলে এক দেশের সাথে আরেক দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় চাইলেও সন্তান বা মা বাবা কেউ কারো কাছে যাওয়া অসম্ভব। অনলাইনেই যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। একজন মা, একজন পিতার কাছে কোভিড ১৯ আপদকালীন সময়ে একটাই ভাবনা, 'আবার কবে সন্তানকে নিজ হাতে ছুঁয়ে দেখব।' বিদেশের একা জীবনে ছেলে মেয়েরা কি করে পার করছে তাদের ঘর বন্দি জীবন। সব কিছু লকডাউন। শরীর খারাপ করলে ছেলে বা মেয়েটাকে কে দেখবে এ সব চিন্তায় করলে স্থির থাকা অসম্ভব হয়। তাই প্রবাসে থাকা ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই মা বাবার।
বিদেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি কোন কালে। আর এ মহামারীর কালে কিছু প্রত্যাশা করা হবে অহেতুক। তবে এ মুহুর্তে তারা যদি অন্তত দেশের শিক্ষার্থী ছেলে মেয়েরা কে কোথায় আছে সে তথ্য সংগ্রহ করে রাখত। তা হয়ত একটা স্বস্তির জায়গা হতো৷
সন্তানকে ফোন কল করে না পেলে ভয়ে অস্থির হয় মা বাবা। বিদেশের খবরে কোভিড ১৯ এর পরিস্থিতির অবনতি দেখে কান্না পায়৷ শুধু মনে হয়, 'কেন বাচ্চাটাকে জোর করে নিয়ে এলাম না।' একধরনের অসহায়ত্ব সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতি আর নিয়তি হাতে এখন সব কিছু। ছেলেমেয়েগুলো এ মহামারীর কালে যেন ভালো থাকে এ প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই৷ বিধাতার কাছে একটাই চাওয়া, 'এ বিপদ দূর করে আমার সন্তানকে তুমি ভালো রাখো প্রভু।'
লেখক - কলাম লেখক
বিবার্তা/এনকে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]