শিরোনাম
কুরবানী: ভোগের নয় ত্যাগের
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২১, ১৪:৩০
কুরবানী: ভোগের নয় ত্যাগের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কুরবানীর ইতিহাস


পবিত্র কোরআন বা হাদীসে কোথাও ‘কুরবানী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। পবিত্র কোরআনে সূরা আল-ইমরানের ১৮৩ নম্বর, সূরা মায়্যিদার ২৭ নম্বর এবং সূরা আহক্বাফের ২৮ নম্বর আয়াতে ‘কুরবান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা মূলধাতু ‘কুরবাতুন’ থেকে উৎপন্ন। ‘কুরবান’ শব্দটি হিব্রু ‘কোরবান’ আর সিরিয়াক ভাষার ‘কুরবানা’ শব্দ দুটির সাথে সম্পর্কিত, যার আরবী অর্থ “কারো নিকটবর্তী হওয়া”। আরবী ‘কুরবান’ শব্দটি বাংলা, ফারসী, উর্দু ও হিন্দীতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে। অনুরূপভাবে, হাদীসেও ‘কুরবানী’ শব্দটি ব্যবহৃত না হয়ে ‘উযহিয়্যাহ’ এবং ‘যাহিয়্যাহ’ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় কুরবানী বলতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক নির্দিষ্ট পশু জবেহ করাকে বোঝায়।


কুরবানী, তথা পশু কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন, যতটা প্রাচীন দ্বীন, ধর্ম ও মানব জাতির ইতিহাস। বর্তমান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) এর পুত্র হাবিল (আঃ) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রথম পশু কুরবানী করেছেন (সূরা-৫: আল-মায়্যিদা; আয়াত-২৭)। কুরবানীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শুধু মুসলমান, ইহুদি, হিন্দু, নাসারা ও জাহেলী যুগের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো না বরং প্রত্যেক নবী-রাসূলের উম্মতের উপর কুরবানীর বিধান ছিলো। মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যতো শরিয়ত নাযিল হয়েছে, প্রত্যেক শরিয়তের মধ্যে কুরবানী করার বিধান জারি ছিলো। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ নিজেই সূরা হজ্জ্বের ৩৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যে সব চতুষ্পদ জন্তু (বাহিমাতুল আনআম) দিয়েছি সেগুলোর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে“।


যুগ-যুগান্তরে সকল ধর্মে পশু কুরবানীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও বর্তমান মুসলিম মিল্লাতের কুরবানী শুরু হয় প্রায় ৪,০০০ বছর আগে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মুসলিমগণের আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কর্তৃক তাঁর প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে কুরবানী করার মধ্য দিয়ে। এ বিষয়ে আল্লাহপাক্ সূরা আস-সাফফাতের ১০২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, “অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহীম তাকে বললোঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে কুরবানী করছি; এখন তোমার অভিমত কি বলো। সে বললোঃ পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন”। নিশ্চয় এটা ছিলো সুস্পষ্ট পরীক্ষা (সূরা-৩৭: আস-সাফফাত; আয়াত-১০৬)। বাস্তবে এর উদ্দেশ্য ছিল পিতা-পুত্রের আনুগত্যের পরীক্ষা নেওয়া। সে পরীক্ষায় পিতা পূর্ণ প্রস্তুতি এবং পুত্র স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ও আনুগত্যের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে আত্মোৎসর্গ ও আত্মসমর্পণের একটি সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর জায়গায় মহান আল্লাহ্ তায়ালা একটি পশু কুরবানীর ব্যবস্থা করেন। তাঁদের এই কীর্তি সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবিস্মরণীয় ও স্থায়ী করা হয়, যা আল্লাহ্ তায়ালা সূরা আস-সাফফাতের ১০৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “আমি তার জন্য এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি”।


অন্যদিকে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের ২২ নম্বর অধ্যায়ে হযরত ইসমাইল (আঃ) এর পরিবর্তে যবীহুল্লাহ (আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানীর জন্য প্রস্তুতকৃত) হিসাবে হযরত ইসহাক (আঃ)-এর কথা বলা হয়েছে, যা মুসলমান ব্যতীত আব্রাহামিক অন্য দুটি প্রধান ধর্ম অর্থ্যাৎ ইহুদি ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায় বিশ্বাস করে থাকে। উপরন্তু প্রাক-ইসলামী যুগে অনেক ইসলামী ব্যক্তিত্বও হযরত ইসহাক (আঃ)-কে যবীহুল্লাহ হিসাবে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু পবিত্র কোরআনের সূরা আস-সাফফাতে যবীহুল্লাহ হিসাবে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর নাম উল্লেখ না থাকলেও পবিত্র কোরআনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে বর্তমানে সকল ইসলামী চিন্তাবিদ তো বটেই, অনেক ইহুদী-খ্রীষ্টান পন্ডিতও বিশ্বাস করেন যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ)-ই ছিলেন যবীহুল্লাহ।
কুরবানী: ওয়াজিব না সুন্নত?


কুরবানী বিধেয় হওয়ার বিষয়ে সকল মুসলিম একমত। তবে কুরবানী ‘ওয়াজিব’ না ‘সুন্নত’- এ বিষয়ে দু'টো ভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদ, ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস (রাঃ) প্রমূখ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে। কারণ তাঁদের মতে আল্লাহ্ তায়ালা সূরা আল-কাউসারের ২ নম্বর আয়াতে সুষ্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও পশু কুরবানী করো”। আর আল্লাহর নির্দেশ পালন ওয়াজিব। এছাড়াও মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেনো আমাদের ঈদগাহে না আসে” (ইবনে মাজাহ হাদীস নম্বর ৩১২৩)।


অন্যদিকে অনেক উলামা এবং ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) এর মতে, কুরবানী হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তাঁদের যুক্তি হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করতে চায়, যিলহজ্জ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেনো কুরবানী সম্পন্ন করার আগে তার কোনো চুল ও নখ না কাটে” (সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১৯৭৭)। এ হাদীসে রাসূল (সাঃ) এর ‘যে কুরবানী করতে চায়’ কথা দ্বারা বোঝা যায় যে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। এ ছাড়াও তাঁদের মতে, রাসূল (সাঃ) তাঁর উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করেনি, তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন। তাঁর এ কাজ দ্বারাও বুঝে নেওয়া যায় যে, কুরবানী ওয়াজিব নয়।


তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলমান কুরবানীকে ওয়াজিব হিসাবে বিশ্বাস ও পালন করে থাকে। তাই এ উপস্থাপনার পরবর্তী অংশসমূহে কুরবানী'কে ওয়াজিব হিসাবে গণ্য করেই তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে।


কুরবানী যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য


প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলমান নর-নারী, যাদের কুরবানীর সময়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়, তাদেরকেই কুরবানী করতে হবে। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য (আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫)।


সামর্থ্যবান প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে হবে। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হলো প্রতি বছর কুরবানী দেওয়া” (ইবনে মাজাহ হাদীস নম্বর ৩১২৫)। এ বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর কোনো ভেদ নেই। অতএব, কোনো নারী যদি একাকী বসবাস করেন কিংবা তার সন্তানদের নিয়ে থাকেন, তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে (আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা ৫/৮১)। এমনকি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করাও জায়েজ (তিরমিযী হাদীস নম্বর ১৪৯৫; মুসনাদে আহমদ হাদীস নম্বর ৮৪৩ ও ১২৭৮)। তবে নাবালকের পক্ষ থেকে কুরবানী করা অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়, তবে মুস্তাহাব (যা আমল করলে সওয়াব রয়েছে কিন্তু ছেড়ে দিলে কোনো গুনাহ নেই) (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫)।


কুরবানী করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য, যা পবিত্র কুরআনের সূরা আন’আম এর ১৬২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, “বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকূলের রব আল্লাহরই জন্য”। তাই মাংসের প্রয়োজন পূরণে বা যেকোনো সামাজিক কারনে কুরবানী করলে সে কুরবানী মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না।


কুরবানীর সময়


কুরবানী সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে যেমন কুরবানী আদায় হবে না, তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ৯৬৫ ও ৫২২৬ থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুৎবায় বলেছেন, “এ দিনটি আমরা শুরু করবো সালাত দিয়ে। অতঃপর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানী করবো”। আবার সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ৯৮৫-এ বর্ণিত আছে যে, সাহাবী জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী (রাঃ) বলেছেন, “নবী করীম (সাঃ) কুরবানীর দিন সালাত আদায় করলেন, অতঃপর খুৎবা দিলেন, তারপর পশু জবেহ করলেন”। অর্থাৎ ঈদ উল আযহার সালাতের অব্যবহিত পরই কুরবানীর সময় শুরু হয়।


কিন্তু কয়দিনব্যাপী কুরবানী করা যায়, সে বিষয়ে দু’টি ভিন্ন মত রয়েছে। প্রথম মতানুসারে যিলহজ্জ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ এই তিনদিন কুরবানী করা জায়েজ (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩)। এ মতানুসারে, কুরবানীর সময় শুরু হয় ঈদ উল আযহার নামায আদায় ও খুৎবা দেওয়ার অব্যবহিত পরে এবং শেষ হয় যিলহজ্জ্ব মাসের ১২ তারিখে সূর্যাস্তের সাথে সাথে।


অন্যদিকে ইবনুল কায়্যিম (রাঃ) বলেন, হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) বলেছেন, ”কুরবানীর দিন হলো ঈদ উল আযহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন”। অর্থাৎ এ মতানুসারে কুরবানীর সময় শুরু হয় ঈদ উল আযহার নামায আদায় ও খুৎবা দেওয়ার অব্যবহিত পরে এবং শেষ হয় যিলহজ্জ্ব মাসের ১৩ তারিখে সূর্যাস্তের সাথে সাথে। এ মতের পক্ষে কয়েকটি যুক্তি দেখানো হয়েছে। প্রথমতঃ সূরা আল-হজ্জ্ব এর ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, “যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসাবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে”। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, “নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কুরবানীর দিন ও তার পরবর্তী তিনদিন (ফাতহুল বারী ২/৫৬১)।“


দ্বিতীয়তঃ সূরা বাকারা’র ২০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “নির্ধারিত দিনসমূহে আল্লাহকে স্মরণ করো”। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর মতে, এখানে নির্ধারিত দিন বলতে আইয়ামে তাশরীক (মাংস শুকানোর দিন) অর্থ্যাৎ ঈদ উল আযহার পরবর্তী তিনদিন’কে বোঝানো হয়েছে (সহীহ বুখারী, বাবু ফাদলিল আমাল ফী আইয়ামে তাশরীক; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার হাদীস নম্বর ১০৮৭২)। উপরন্তু আইয়ামে তাশরীক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ”আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন কুরবানী করা যায়” (মুসনাদে আহমাদ ৪/৮২)।


তৃতীয়তঃ সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১১৪১ এ বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আইয়ামে তাশরীক পানাহার ও আল্লাহর যিকিরের জন্য”। এছাড়াও সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ১৯৯৮ ও সুনানে আবু দাউদ হাদীস নম্বর ২৪১৮ অনুসারে তাশরীকের দিনসমূহ পানাহারের জন্য বিধায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাশরীকের দিনসমূহে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। যেহেতু আইয়ামে তাশরীকে রোজা রাখা যাবে না বরং তাকবীরে তাশরীক ও পানাহার করতে হবে, তাই এ সময় কুরবানী করা জায়েজ।


কুরবানীর পশু


হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন কুরবানী করতে উদ্ব্যত হন, মহান আল্লাহ্ তায়ালা তখন হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর জায়গায় একটি পশু কুরবানীর ব্যবস্থা করেন। তবে পবিত্র কোরআনে কোনো পশুর নাম উল্লেখ না থাকলেও সূরা আস-সাফফাতের ১০৭ নম্বর আয়াতে “মহান প্রাণী” হিসাবে বর্ণিত রয়েছে, যা হলো ‘বাহিমাতুল আন'আম’ অর্থাৎ 'অহিংস্র গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী' (বুক অব জেনেসিসের ২২ অধ্যায়ের ১১-১৩ শ্লোকে পুরুষ ভেড়ার কথা উল্লেখ আছে)। তবে বিভিন্ন হাদীস ও ফতোয়ায় কোরবানীর জন্য জায়েজ বাহিমাতুল আন'আম সম্পর্কে বর্ণনা করা আছে। রাসূল (সাঃ) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্য কোনো পশু কুরবানী করেননি কিংবা অনুমোদনও করেননি। তাই এসব পশু দিয়েই কুরবানী করা সুন্নত (বাদায়েউস সানায়ে ২০৫/৪)।


কুরবানীর পশুর বৈশিষ্ট্য


সুনানে আবু দাঊদ ২৭৯৯ নম্বর হাদীস এবং সুনানে ইবনে মাজাহ ৩১৩৯ নম্বর হাদীস অনুসারে ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স চন্দ্রমাস হিসাবে কমপক্ষে ০১ বছর হতে হবে। তবে সহীহ মুসলিম ১৯৬৩ নম্বর হাদীস অনুসারে নির্দিষ্ট বয়সের পশু পাওয়া না গেলে ০৬ মাসের ভেড়া ও দুম্বা কুরবানী করা যেতে পারে। কিন্তু ছাগলের বয়স ০১ বছরের কম হলে কুরবানী সহীহ হবে না। সুনানে নাসায়ী ৪৩৭৮ নম্বর হাদীস অনুসারে গরু ও মহিষের বয়স চন্দ্রমাস হিসাবে কমপক্ষে ০২ বছর হলে কুরবানীর যোগ্য হবে। কুরবানী সহীহ হতে হলে উটের বয়স চন্দ্রমাস হিসাবে কমপক্ষে ০৫ বছর হতে হবে (ইলাউস সুনান ৭/২৪৫ পৃষ্ঠা; ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৪৮ পৃষ্ঠা)।


আমরা অনেক সময় দাঁতের সংখ্যা দেখে পশু ক্রয় করে থাকি। কিন্তু দাঁতের সংখ্যার সাথে কুরবানীর কোনো সম্পর্ক নেই। গরুর ক্ষেত্রে দুটো স্থায়ী দাঁত থাকলে আমরা কুরবানীর যোগ্য বলে বিবেচনা করি। এর মূল কারণ হলো যে, ০২ বছর বয়স পূর্ণ না হলে কখনোই গরুর দুটো স্থায়ী দাঁত ওঠে না। অর্থ্যাৎ দুটো স্থায়ী দাঁত উঠলে গরুর বয়স ০২ বছর পূর্ণ হয়েছে বলে সুনিশ্চিত হওয়া যায়। বয়স নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্থায়ী দাঁত না উঠলেও বিক্রেতা যদি পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে সাক্ষ্য দেয় এবং পশুর শারীরিক গঠন দেখে যদি তেমনই মনে হয়, তবে বিক্রেতার উপর আস্থা রেখে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ (ফতোয়ায়ে শামী ৫/২২৫ পৃষ্ঠা)।


সুনানে আবু দাউদ হাদীস নম্বর ২৭৯২ ও সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নম্বর ৩১৪৩ অনুসারে কুরবানীর পশু মোটা-তাজা হওয়া উত্তম এবং সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী৷ সহীহ ইবনে খুযাইমা হাদীস নম্বর ২৯১৪-২৯১৫, আবু দাউদ হাদীস নম্বর ২৮০৪ এবং নাসায়ী হাদীস নম্বর ৪৩৭৩-৪৩৭৪ অনুসারে কান কাটা বা ফাড়া ও কানে গোলাকার ছিদ্র করা পশু দিয়ে কুরবানী সহীহ হয় না। এছাড়াও সহীহ ইবনে হিববান হাদীস নম্বর ৫৯১৯, নাসায়ী হাদীস নম্বর ৪৩৭০-৪৩৭১ ও তিরমিযী হাদীস নম্বর ১৪৯৭ অনুসারে চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্থ, অতি অসুস্থ, খোঁড়া ও অতি শীর্ণ পশু দিয়েও কুরবানী জায়েজ হয় না।


ভাগের কুরবানী


সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ৫৫৫৩ অনুসারে ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এ তিন প্রকার পশু দ্বারা কেবল একজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা যায়৷ অন্যদিকে সুনানে আবু দাউদ হাদীস নম্বর ২৮০৮ ও সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নম্বর ৩১৩২ অনুসারে উট, গরু ও মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত যেকোন সংখ্যক ব্যক্তি শরীক হতে পারবে।


কুরবানীর অর্থের উৎস


পবিত্র কুরআনের সূরা আল-মুমিনুন এর ৫১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা হালাল বা পবিত্র বস্তু হতে আহার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ্ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না” (সহীহ মুসলীম হাদীস নম্বর ২২৩৬)। এছাড়াও হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “বৈধভাবে উপার্জিত জীবিকার ইবাদত ছাড়া কোন প্রকার ইবাদত আল্লাহর নিকট উঠানো হয় না” (সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ৬৯৯৩; সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১০১৪)। এতদ্ভিন্ন সূরা মায়্যিদা’র ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ্ তো মুত্তাকী (পরহেযগার ও সংযমী)দের কুরবানীই কবুল করে থাকেন”। কাজেই কুরবানী হতে হবে হালাল উপায়ে অর্জিত অর্থে। এমনকি কোনো একজন ভাগীদারের উপার্জনও যদি হারাম হয়, তাহলে কোনো ভাগীদারের কুরবানী’ই সহীহ হবেনা (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ২৬/৩০৮ পৃষ্ঠা; ফতোয়ায়ে হক্কানিয়া ৬/৪৮১ পৃষ্ঠা; কিফয়াতুল মুফতী ৮/২০৫ পৃষ্ঠা)।


কুরবানীর পশু জবাই করার নিয়ম


নিজের কুরবানীর পশু নিজেই কুরবানী করা উত্তম। এমনকি মেয়েরাও নিজের কুরবানীর পশু নিজে কুরবানী করতে পারেন (ফাতহুল বারী, ১০/১৯)। তবে কুরবানীর পশু যবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করাও জায়েজ আছে (সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১২১৮)।


কুরবানীর সময় কুরবানীর পশুর সাথে সদয় আচরণ করতে হবে। কুরবানীর পশুর সামনে ছুরি ধার দেওয়া এবং এক পশুর সামনে অন্য পশু কুরবানী করা বা কুরবানী করার জন্য টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না (ইবনু মাজাহ হাদীস নম্বর ৩১৭২)। সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১৯৫৫ এ বর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী পশুকে অধিক কষ্ট না দিয়ে তীক্ষ্ণ ধারালো ছুরি দিয়ে সুন্দরভাবে যত দ্রুত সম্ভব কুরবানী সম্পন্ন করতে হবে। উট কুরবানীর সময় দন্ডায়মান রেখে কুরবানী করতে হবে (সূরা-২২: হজ্জ; আয়াত-৩৬)। অন্য পশুর ক্ষেত্রে কিবলামুখী করে শয়ন করিয়ে কুরবানী করতে হবে (ইবনু মাজাহ হাদীস নম্বর ২/১০৪৩)। সর্বোপরি সূরা আন’আম এর ১১৮ আয়াত অনুসারে অবশ্যই আল্লাহ’র নামে কুরবানী করতে হবে।


রাসূল (সাঃ) নিজের হাতে পশু কুরবানী করতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরবানী করার জন্য তাঁর কাছ থেকে ধারালো ছুরি নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে কুরবানী করলেন এবং বললেন, “ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মাদের উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন” (সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১৯৬৭; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস নম্বর ৫৯১৫; আবু দাউদ হাদীস নম্বর ২৭৯২)।


আমাদের প্রচলিত কথায় আমরা ‘অমুকের নামে’, ‘আমার নামে’ কুরবানী- এ জাতীয় কথা বলে থাকি। এর পরিবর্তে ‘অমুকের পক্ষ থেকে’, ‘আমার পক্ষ থেকে’ কুরবানী বলাটাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে উত্তম।


কুরবানীর মাংস বিতরণ


আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা হজ্জ্ব এর ২৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, “অতঃপর তোমরা তা হতে আহার করো এবং অভাবগ্রস্ত দুঃস্থদেরকে আহার করাও”। এছাড়াও আল্লাহ্ তায়ালা একই সূরার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “তোমরা আহার করো, যেসব অভাবগ্রস্ত চায় না, তাদের আহার করাও এবং যেসব অভাবগ্রস্ত চায় তাদেরও আহার করাও”। পবিত্র কোরআনের উপরোক্ত দু’আয়াতে কুরবানীর মাংসের কত অংশ নিজে আহার করা যাবে এবং কত অংশ অভাবগ্রস্ত দুঃস্থদেরকে আহার করানো যাবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর কুরবানীর মাংস বন্টন সম্পর্কে বলেন যে, তিনি একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সুবিধাবঞ্চিতদের দিতেন। এছাড়াও ইমাম আহমাদ, শাফেঈ (রহঃ) সহ বহু আলেম কুরবানীর মাংস তিনভাগ করাকে মুস্তাহাব (যে কাজের আমলে পুণ্য আছে, কিন্তু আমল না করলে পাপ নেই) বলেছেন (সুবুলস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম ৪/১৮৮ পৃষ্ঠা)। তবে কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসাবে কুরবানীর মাংস দেওয়া জায়েজ নয় (সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ১৭১৬; সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১৩১৭)।


কুরবানীর মাংস সংরক্ষণ


সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ৫৫৬৯ ও সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ১৯৭৪ এ বর্ণিত আছে, “সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে লোক কুরবানী করেছে, সে যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কুরবানীর মাংস কিছু থেকে যায়। পরবর্তী বছর আসলে, সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তেমন করব, যেমন গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি বললেনঃ তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ, কারণ গত বছর মানুষের মধ্যে ছিল অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাতে সহযোগিতা করো”। উপরন্তু তিরমিযী হাদীস নম্বর ১৫১০ অনুসারে, কুরবানীর মাংস যতদিন ইচ্ছে ততদিন, এমনকি এক যিলহজ্জ্ব থেকে আরেক যিলহজ্জ্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।


কুরবানীর পশুর চামড়া


কুরবানীর পশুর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে, তবে বিক্রয়লব্ধ অর্থ সদকা করতে হবে (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১; কাযীখান ৩/৩৫৪)। আল্লামা সারাখসী স্বীয় 'আল মাসবুত' গ্রন্থের ১২শ খণ্ডে বলেছেন, "কুরবানীকারী যদি কুরবানীর চামড়া দিয়ে গৃহের কোনো আসবাবপত্র খরিদ করে তবে তাতে আপত্তি নেই।" তিনি আরো বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন যে, এমন আসবাবপত্র খরিদ করা চাই যা টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, যেমন চালনি বা ব্যাগ ইত্যাদি। লবণ, সিরকা বা ইত্যাকার ক্ষণস্থায়ী জিনিস চামড়ার বিনিময়ে খরিদ করা উচিৎ নয়। চামড়া বিক্রি করে নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হলে সে সম্পর্কেও ইমাম সারখসী বলেছেন যে, 'তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।'


নফসে আম্মারা (কুপ্রবৃত্তি)’র কুরবানী


ঈদ উল আযহার কুরবানী কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতা বা মাংস ভোগের জন্য নয়। এটি একটি মহান ইবাদত, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা হজ্জ্ব এর ৩৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহর নিকট তাদের মাংস এবং রক্ত পৌঁছায় না বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া”। যিনি তাকওয়ার (আল্লাহ-ভীতি) জন্য কুরবানী করেন, পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তার কুরবানী মহান আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায় (তিরমিযী শরীফ হাদিস নম্বর ১৪৯৩)। পশু কুরবানীর মধ্যে রয়েছে ত্যাগের মহীমা শিক্ষার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কুরবানীর হাকিকত (বাস্তব বা সত্য) শিক্ষা হলো নিজের ভিতরে যে পশু লুকিয়ে আছে তা বিসর্জন দেওয়া। পশু কুরবানী নিজের 'নফসে আম্মারা' (কুপ্রবৃত্তি) অর্থ্যাৎ মিথ্যা-পাপ-পঙ্কিলতা, ইন্দ্রিয় কামনা-বাসনার জৈবিক আবিলতা, পরচর্চা-পরনিন্দা-পরশ্রীকাতরতা, কৃপণতা-স্বার্থপরতা, অহমিকা-দাম্ভিকতা, খুন-ধর্ষন-রাহাজানি, জুলুম-হানাহানি, শোষণ-নির্যাতন-নিপীড়ন, অবিচার-অনাচার-অত্যাচার, হিংসা-বিদ্বেষ-বিভেদ, ক্রোধ-ঘৃণা, লোভ-লালসা ইত্যাদি কুরবানী করার প্রতীক।


আমার আবেদন, এতক্ষণ কুরবানী নিয়ে আমি আমার নিজস্ব কোনো মতামত দেইনি বরং কুরবানী সংক্রান্তে শরিয়তের কিছু বিধান উপস্থাপন করেছি মাত্র। কোন বিষয়ে একাধিক মত থাকলে, আমি সেটাও উপস্থাপন করেছি। তবে অনেকেই ভিন্ন মাযহাব এর অনুসারী হওয়ার কারণে এখানে উপস্থাপিত সব মতের সাথে সহমত নাও হতে পারেন। তদুপরি আমি যেহেতু ইসলামী চিন্তাবিদ বা গবেষক নই, তাই তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই ও সন্নিবেশনে সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও, আমার এ উপস্থাপনায় ভুল-ভ্রান্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। সে কারণে এ উপস্থাপনার মধ্যে যেকোনো ধরণের ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত এবং সে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।


উপস্থাপনার এ অংশে সবার প্রতি একটি অনুরোধ জানাবো। সে অনুরোধে সাড়া দেওয়া বা না দেওয়া সম্পূর্ণ আপনার নিজস্ব নিয়ত। কুরবানী সংক্রান্তে শরিয়তের বিধানাবলী আলোচনা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক বছর নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, কেউ যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কুরবানীর মাংস কিছু থেকে যায়। এ সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন যে, সে বছর কিছু মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র লক্ষ্য করে মহানবী (সাঃ) কুরবানীর মাংস সংরক্ষণের উপর এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। করোনা অতিমারীর কারণে আমাদের দেশেও এ বছর কিছু মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র মোকাবেলা করছে। তাই মহানবী (সাঃ)-এর অনুসারী হিসাবে এ বছর মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ না করার বিষয়টি বিবেচনা করা যায়।


তাই আমার অনুরোধ, যদিও ফ্রিজে মাংস সংরক্ষন শরিয়ত পরিপন্থী নয়, তথাপি মানবিক দিক বিবেচনা করে, আসুন, এ বছর আমরা কুরবানীর মাংস নিজেরা আহার করি, আত্মীয়-স্বজনদের আহার করাই এবং বাকি মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ না করে তৃতীয় দিন সকালের পূর্বেই দরিদ্রদের আহার করাই।মহান আল্লাহ্ তায়ালা সবাইকে ইখলাসের (ভক্তিপূর্ণ ইবাদত) সাথে কুরবানীর নিয়তে পশুর গলায় ছুরি চালানোমাত্র সকল রিয়া (লৌকিকতার গুনাহ) থেকে মুক্ত করে তাঁর নৈকট্য অর্জনের তৌফিক দান করুন। সবাইকে ঈদ মোবারক।


লেখক: চৌধুরী মনজুরুল কবির, এ্যাডিশনাল ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com