শিরোনাম
বিশ্বশিক্ষা-মানচিত্রে ভিন্ন উচ্চতায় উপনীত হবে
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২১, ২১:০৫
বিশ্বশিক্ষা-মানচিত্রে ভিন্ন উচ্চতায় উপনীত হবে
এএসএম মাকসুদ কামাল
প্রিন্ট অ-অ+

ইউরোপে, মধ্যযুগের দ্বিতীয় পর্বের (১০০০-১৫০০ খ্রি.) পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে ওঠে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় মডেলের পুরোধা হিসেবে বিশ্বময় স্বীকৃতি অর্জন করে। ১২২৫ সালে পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট প্যারিস স্কুলকে ‘ইউনিভার্সিটাস’ হিসেবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় কিংবা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠানের আদল থেকে সর্বজনীন রূপ পেতে থাকে। ক্রমশ ‘ইউনিভার্সিটাস’ রূপান্তরিত হয় ‘ইউনিভার্সিটি’ শব্দে, যার অর্থ — ডিগ্রিপ্রদানে সক্ষম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মধ্যযুগের প্রথম পর্বে (৫০০-১০০০) প্রতিষ্ঠিত বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (১০৮৮), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (১০৯৬) ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (১২০৯ খ্রি.) পোপের আধুনিক ধারণাকে অবলম্বন করে ক্রমশ পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ পরিগ্রহ করে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় পঠন-পাঠন এবং জ্ঞানের লালন ও সৃজনের নব-অধ্যায় রচিত হতে থাকে।


মধ্যযুগে যখন ইউরোপের কোথাও গণতন্ত্র ছিল না তখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতো। অতঃপর পৃথিবীর দেশে দেশে গণতান্ত্রিক বিকাশ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণের প্রত্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিবার্যতা অনুভূত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ-ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৮৫৭) এবং আলিগড় মুসুিলম বিশ্ববিদ্যালয় (১৮৭৫)। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গরদের পর এতদঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির পথ যখন রুদ্ধ হয়ে যায়, অব্যাহত হতাশা ও বঞ্চনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ রাজশক্তির ওপর যখন এতদঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন জনমানসের এই ক্ষোভ উপলব্ধি করে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এতদুদ্দেশ্যে ১৯১২ সালের ২৭ মে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য গঠন করেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি’। খ্যাতিমান ব্যারিস্টার স্যার রবার্ট নাথান এই কমিটির সভাপতি এবং ১২ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সদস্য মনোনীত হন। দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ভাইসরয় লর্ড রিডিং ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট-১৯২০’ ঘোষণা করেন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে গড়ে তোলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, একাডেমিক ও আবাসিক ব্যবস্থাপনা। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন-পরিম্লল সাজানো হয় আবাসিক হল-কে কেন্দ্র করে। এসব কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয়ে থাকে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ । বস্তুত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রাচীন প্যারিস মডেল (অর্থাৎ অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ) এবং আধুনিক প্যারিস মডেলের (ইউরোপ ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়) এক অনবদ্য সংমিশ্রণ।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের বিভিন্ন ফোরামে নেতৃত্ব প্রদান এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন হিসাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নানাভাবে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। শতবর্ষী এই প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দেশ ও জাতির প্রত্যাশা অনেক। সমসাময়িককালে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান অনেকবেশি আলোচিত-সমালোচিত। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলোচনার বিষয় শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি। একথা সত্যি যে, এশিয়ার বহু দেশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৭০-এর দশকেও এগিয়ে ছিল, কিন্তু এখন পিছিয়ে। মালয়েশিয়াসহ এশিয়া এবং আফ্রিকার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসতেন। সময়ের পরিক্রমায় অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পরিকল্পনা মাফিক যে গতিতে অগ্রসর হয়েছে, আমাদের সে-মাত্রায় পরিকল্পনা ও গতি ছিল না। শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ঘাটতিগুলোও আমাদের অজানা নয়। এমতাবস্থায়, শতবর্ষকে সামনে রেখে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত, একাডেমিক ও গবেষণা-অবকাঠামো উন্নয়নের নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি; যাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমশ আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হতে পারে।


শতবর্ষের গৌরবময় মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি ‘সেন্টেনারি মনুমেন্ট’ স্থাপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও গৌরবময় অর্জনসমূহ তুলে ধরে ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি: মেকিং অ্যান্ড সেপিং অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে দুটি গ্রন্থ রচনার কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক সেমিনার, ‘শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : অর্জন ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, গবেষণা মেলা, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের রচিত কবিতা নিয়ে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ, প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে থিম সং নির্বাচন — শতবর্ষের এসব কর্মসূচির কিছু ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, অন্যগুলোও আগামীতে অনুষ্ঠিত হবে।


ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি যুগোপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ ভৌত-মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ ও অনুমোদনের পর বাস্তবায়িত হবে। প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেননির্মাণ করে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি ধারণ, সৌর শক্তি উৎপাদন, সবুজায়ন বৃদ্ধিকরণ, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, মানসম্পন্ন খেলার মাঠ, ছাত্রীদের স্বতন্ত্র সুইমিংপুল ও খেলার মাঠ, গাড়িপার্কিং সুবিধা, জলাধার সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সুবিধা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ঘাটতি ১৭-লক্ষ বর্গফুট একাডেমিক ফ্লোর-প্লেস বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক সুবিধা সম্বলিত পরিবেশ ও শিক্ষাবান্ধব ভবন তৈরি করা হবে।


শিক্ষা ও গবেষণার মনোন্নয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যুগোপযোগী কিছু পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। গবেষণার সুবিধা বৃদ্ধির জন্য গবেষণাগারসমূহ আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে মেগা-পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন এবং ডিজিটালাইজেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রায় ১১টি জার্নালের ইনডেক্সিং এবং ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর অর্জনের লক্ষ্যে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। শতবর্ষকে সামনে রেখে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা বাড়ানোর জন্য ২৫১টি গবেষণাকর্ম, প্রায় ৫০টি বিভাগ/ইনস্টিটিউটভিত্তিক গ্রন্থ এবং ২৮টি বিশেষ জার্নাল প্রকাশিত হবে। মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ধারা সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অব্যাহত রাখার প্রয়াস আমরা নিচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পৃথিবীর প্রায় তিনশ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে। কিন্তু এসবের বেশিরভাগই ক্রিয়াশীল নয়। মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গবেষণা ও একাডেমিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের কার্যকর সংযুক্তি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গবেষণার সুযোগ ও ব্যাপ্তি সম্প্রসারণের জন্য ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বছরের শেষে একটি বড়ো আকারের গবেষণা মেলাও অনুষ্ঠিত হবে। তরুণ শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ বৃত্তি ২০১৭ সাল থেকে পুনরায় চালু করা হয়েছে। এ বৃত্তি ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তন করেছিল, কিন্তু ২০০৩ সালে তত্কালীন বিএনপি সরকার বৃত্তিটি বন্ধ করে দেয়। এই বৃত্তির আওতায় বর্তমানে প্রায় একশ শিক্ষক উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে আছেন; এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। মানসম্মত, যুগোপযোগী ও জাতীয় প্রয়োজন সম্পর্কিত গবেষণা বৃদ্ধি করার জন্য সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক পিএইচ.ডি কর্মসূচি অনতিবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সম্মানজনক বৃত্তিও প্রদান করা হবে। এভাবে একটি একাডেমিক মাস্টার প্ল্যানও প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।


বুদ্ধির মুক্তি ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা গৌরবময় ও দৃষ্টান্তমূলক। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সৃষ্ট চিন্তা-চেতনাকে বহুলাংশে গ্রহণ করেছিলেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁর এই গর্বিত শিক্ষার্থীর প্রাজ্ঞ ধ্যান-ধারণাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় জীবনাকাঙ্ক্ষার রূপায়ণ ও উন্নয়নে ক্রমাগত ভূমিকা রেখে চলেছে। বলা প্রয়োজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকার ১৯৬১ সালে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স’ জারি করেছিল, যা ‘কালাকানুন’ হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা অর্জনের পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ অর্ডিন্যান্স বাতিল করেন এবং ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩’ জারি করেন। ফলে এ-বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুসৃত হয়, এবং চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হয়। ভারতবিভাগের পরবর্তী পর্যায়ের নিপীড়নবিরোধী সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল অগণতান্ত্রিক আচরণ, অপসংস্কৃতি এবং সামরিক-স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। এ-সকল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘স্বাধীনতা পদক’-এ সম্মানিত করা হয়।


বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬১টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র, ১৪২টি অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯টি আবাসিক হল এবং ৪টি হোস্টেল রয়েছে। এ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৬,১৫০ জন এবং পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষক। এ বিশ্ববিদ্যালয় বিগত একশ বছরে প্রায় ৩৩ লক্ষ শিক্ষার্থীকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি দিয়েছে। প্রায় ১৮০৮ জন গবেষক পিএইচ.ডি ডিগ্রি, এবং প্রায় ১৭৭০জন গবেষক এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেছে। জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির চাকা সচল রাখতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুভূমিক সম্প্রসারণ হয়েছে অনেক, এখন প্রয়োজন উল্লম্বিক সম্প্রসারণ তথা মানোন্নয়ন। এই উন্নয়নের সঙ্গে রাষ্ট্রের উন্নয়নেরও একটি ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। কারণ একটি দেশে কয়টি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় আছে তা ঐ দেশের উন্নতি ও মর্যাদার অনিবার্য মানদ্ল হিসেবেই বিশ্বময় বিবেচিত হয়।


যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলেছেন, ‘শিক্ষাই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের মূল শক্তি।’ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ম্যালকম গিলস্ উচ্চশিক্ষার অবদান সম্বন্ধে বলেছেন, ‘মানবেতিহাসে ইতঃপূর্বে কোনো জাতি তার সম্পদ ও দারিদ্র্যের জন্য উচ্চশিক্ষার মানের ওপর এমনভাবে নির্ভরশীল ছিল না।’ অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার অবদানের অন্যতম উদাহরণ ব্রাজিল এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি। প্রয়োজন-নির্ভর উচ্চশিক্ষার হার ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছিল ৪০%, অন্যদিকে ব্রাজিলে ৮%। ফলত দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলের মাথাপিছু জিডিপির ব্যবধান প্রায় দশ হাজার মার্কিন ডলার। কোরিয়ায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রয়োজন-ভিত্তিক নবজ্ঞান সৃজন, বাজারজাতকরণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে। বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতা, পঠন-পাঠন-গবেষণামানের বিসৃ্ততি এবং প্রয়োজন-নির্ভর তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষা আমাদের দেশে এখনও প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেনি। জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতাকে ভিত্তি করে প্রণীত ভৌত ও একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বশিক্ষা-মানচিত্রে ভিন্ন উচ্চতায় উপনীত হবে; এই আমাদের প্রত্যয়। এ লক্ষ্যে আমাদের গর্বিত প্রাক্তনী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদার সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনও সামগ্রিক সহযোগিতা প্রদান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রাক্তনীদেরও রয়েছে আন্তরিক সহযোগিতা। সময়ের দাবি পূরণে তাদের আরো অগ্রণি ভূমিকা থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।


চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উন্মেষলগ্নে এবং জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশের/প্রবৃদ্ধির এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার পাশাপাশি মানববিদ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে আগামীর শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় আরো সৃজনমুখী অবদান রাখবে — বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিক প্রতিষ্ঠার এ-দিবসে এটিই আমাদের ঐকান্তিক অঙ্গীকার।


লেখক: উপউপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com