শিরোনাম
কভিড-১৯: সংকটেও সম্ভাবনা
এনইউ অন-লাইন ক্লাসঃ ঊচ্চ-শিক্ষায় সেশন জট নিরসনের মাইলফলক (শেষ পর্ব)
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ১১:২৪
এনইউ অন-লাইন ক্লাসঃ ঊচ্চ-শিক্ষায় সেশন জট নিরসনের মাইলফলক (শেষ পর্ব)
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। দেশের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এদের অধিকাংশই অসচ্ছল পরিবারের সন্তান এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে এদের বসবাস। এই করোনাকালীন তাদের নিকট শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান রাখার প্রত্যয় থেকে অন-লাইন ক্লাস চালুর প্রয়াস। বাংলাদেশতো বটেই এশিয়ার মধ্যে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এত অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য এত বিপুল পরিমাণ (১৭৫০০টি) অন-লাইন ভিডিও লেকচার তৈরির নজির নেই। যেহেতু পুরো প্রক্রিয়ার সাথে আমি সক্রিয় ছিলাম তাই জাতির কাছে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ তুলে ধরতেই এবিষয়ে বিস্তারিত লিখতে আগ্রহ অনুভব করি। এনইউ অন-লাইন ভিডিও ক্লাস তৈরি পদ্ধতি, এর সুবিধাসমূহ, রিসোর্স পার্সন মনোনয়ন প্রক্রিয়া এবং এবিষয়ে বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া জানাবো এ পর্বে। পূর্বের বিস্তারিত জানতে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব দেখুনঃ
http://www.bbarta24.net/opinion/130240; http://www.bbarta24.net/opinion/130930


দেশব্যাপী ৩১টি ডিসিপ্লিনে ২২৬০টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নামকরা কলেজ থেকে ১৪৫৮ জন রিসোর্স পার্সন মনোনয়ন ও তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজে অনেকগুলো সূচক ব্যাবহার করা হয়েছিল। প্রত্যেক বিষয় কো- অর্ডিনেটরের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী নামকরা কলেজ/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের রিসোর্স পার্সন নির্বাচন ও ডিনস কমিটির মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। অন-লাইন ভিডিও ক্লাস সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ ও রিসোর্স পার্সনদের নামে আলাদা আলাদা পত্র প্রেরণ ও সম্মতি গ্রহণ এবং একটি ভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযাগ স্থাপন করা হয়। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো রিসোর্স পার্সনদের জন্য অন-লাইনে ভিডিও লেকচার প্রদান ও আপলোড সংক্রান্ত একটি পূর্ণাজ্ঞ গাইডলাইন প্রস্তত করে তা ম্যানুয়াল আকারে একাধিক ফরমেটে (প্রিন্ট কপি, সফটকপি, ভিডিও) বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের নিকট প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ্য, গাইডলাইনের সাথে রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টেমপ্লেট। বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতে এটি তৈরি করা হয়েছে যা সকল লেকচারের সূচনা স্লাইড হিসেবে অবশ্যই ব্যবহার করতে সম্মানিত রিসোর্স পার্সনদের অনুরোধ করা হয়েছে। এভাবে প্রথম পর্যায়ে ১৩-২৩ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত সময় দিয়ে অন-লাইন ভিডিও লেকচার প্রদান ও প্রেরণে পত্র দিলে প্রায় ২০০০ (দুই হাজার) লেকচারের লিংক জমা পড়ে। আর এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা ১২ হাজারের অধিক। চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ১৭৫০০ ভিডিও লেকচার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারে জমা পড়বে যা সত্যি এক ইতিহাস।


অনেকেই মনে করেন, বর্তমান সরকার যেমনি বছরের শুরুর দিনটাতে প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে প্রায় ৩৮ কোটি নতুন পাঠ্য-পুস্তক তুলে দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে চলেছেন, তেমনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ১৭৫০০ অন-লাইন ভিডিও ক্লাস উচ্চ-শিক্ষায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। যেহেতু দুর্লভ এ লেকচারসমূহ বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউটিউব চ্যানেলে দেখে আত্মস্থ করে তারা পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হবে এবং লেকচারের উল্লেখিত রেফারেন্স সামগ্রী দেখে শিক্ষার্থীরা আরো নিজেকে জ্ঞানে-মানে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে তাই করোনাকালীনতো বটেই, শীঘ্রই যদি তার কারিকুলামে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে আগামী কয়েক বছর এ লেকচারগুলোই তাদের পঠন-পাঠনের একমাত্র সহায়ক উপকরণ হিসেবে থেকে যাবে।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এত অধিক সংখ্যক অন-লাইন ভিডিও ক্লাসের নজির আর দ্বিতীয়টি নেই। তাই এটি নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করবে। এ কাজের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন- অর-রশীদ এবং সংশ্লিষ্টদের সকলকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মনি বিশেষ ধন্যবাদ জানান। পাঠকের সুবিধার জন্য রিসোর্স পার্সন মনোনয়ন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা জরুরি নইলে বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যাবে। সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ হাজারেরও বেশী শিক্ষক রয়েছে। রিসোর্স পার্সন হিসেবে এখানে তাদেরকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে যারা নিজ নিজ বিষয়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ, এবং প্রশিক্ষিত। বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তাদের উচ্চতর ডিগ্রি এবং একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড। অবশ্যই যাদের আইসিটি লিটারেসি খুব ভালো এবং শিক্ষক হিসেবে পাঠদানে পূর্ব সুনাম রয়েছে তেমন শিক্ষকদের স্ব-স্ব কলেজের অধ্যক্ষ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় কো-অর্ডিনেটরের সুপারিশের প্রেক্ষিতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও যোগ্যতার আরো একটি প্যারামিটারকে এখানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তাহলো, শিক্ষকদের পূর্বের অন-লাইন ভিডিও লেকচারের কোয়ালিটি বিবেচনায় নেয়া। এভাবে রিসোর্স পার্সন মনোনয়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ১৩ টি শতবর্ষী কলেজ, ৮টি মডেল কলেজেসহ কলেজসহ কলেজ র‍্যাংকিং-এ এগিয়ে থাকা কলেজের শিক্ষকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।


কি হবে এসব অন-লাইন ভিডিও ক্লাস লেকচার প্রদান ও আপলোড করে? উত্তরে এক নজরে দেখে নেয়া যাক এর সুবিধাগুলো যেমনঃ ১। করোনাকাল পার হওয়ার পরেও এই ক্লাস লেকচারগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সম্পূরক জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হবে। ২। দক্ষ ও অভিজ্ঞ রিসোর্স পার্সনদের লেকচার পাওয়া যাবে। ৩। যেকোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা যতবার খুশি এই তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করতে পারবে। ৪। বিষয় ভিত্তিক একটি দুর্লভ ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি হবে। ৫। যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ৬। স্ব-স্ব কলেজের শিক্ষকদের লেকচারের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কলেজের রিসোর্স পার্সনদের লেকচার শুনে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। ৭। সর্বোপরি, এই কার্যক্রম ডিজিটাল মানব সম্পদ গঠনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


আর তাইতো এর উদ্বোধনে এসে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, যেকোনো সংকট শুধু সমস্যাকেই নিয়ে আসে না সম্ভাবনার দ্বারও উন্মুক্ত করে দেয়। এই মহামারী পরিস্থিতিতেও আমরা সেই শিক্ষা পেলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালুর জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেটা হয়তো আরো দশবছর পরে নেয়া হতো। কিন্তু সেই উদ্যোগ এখনই নেয়া হল এবং এটিই এখন উচ্চ-শিক্ষার সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালু করতে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো করোনা পরবর্তী সময়েও কাজে আসবে। আমাদেরকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন-লাইন কোর্স অফার করতে হবে। নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি এটিও চালু করতে হবে। কারণ যারা কাজে ঢুকে যাবে তাদেরকেও সুযোগ দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ঢুকেও যেন তারা সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি অন-লাইন ক্লাসে অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে ডিভাইস এবং স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা পায় সে লক্ষে সরকার কাজ করছে মর্মে সকলকে আশ্বস্ত করেন। গত ২৭ আগস্ট ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাস ভিডিও লেকচার কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ মন্তব্য করেন, "এই করোনা মহামারী পরিস্থিতি অন-লাইন শিক্ষা গ্রহণ একটা অপরচুনিটি। এই প্যানডামিক সিচুয়েশন কবে যাবে সেটা আমরা জানি না। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারে। বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম সফল করতে হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিকল্প নেই। কারণ এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যা সমগ্র দেশব্যাপী বিস্তৃত।” সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতির শুরু থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালুর জন্য কলেজগুলোকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও সুসংগঠিতভাবে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালুর জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। এই কার্যক্রমের আওতায় অনলাইনে ১ হাজার ৪৫৮ জন শিক্ষকের ১ হাজার ৪৫৮ টি কোর্সে মোট ১৭ হাজার ৫০০ টি ভিডিও ক্লাস অপলোড করা হবে। ৩১ টি ডিসিপ্লিনের এই অনলাইন ক্লাস গ্রহণ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। একজন শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খুব সহজে এই ভিডিও ক্লাস দেখতে পাবে”।


উল্লেখ করা আবশ্যক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো আর্থিক দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী ও সচ্ছল। এটি পরিচলন ও সঞ্চালনের জন্য যে বাৎসরিক বরাদ্দের প্রয়োজন তা নিজেদের অর্থেই সংকুলান করা হয়ে থাকে। কখনো সরকারের কাছ থেকে বাজেটের একটি টাকাও নেয়া হয়না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর প্রণোদনা দিয়ে থাকে। যেমন ৩১ টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অসামান্য অবদানের জন্য প্রতি বিষয়ের সেরা তিন জনকে মেধা বৃত্তি প্রদান, কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়নে মডেল কলেজ প্রতিযোগিতা, কলেজ র‍্যাংকিং, কলেজ মনিটরিং, শতবর্ষী কলেজ নিয়ে আলাদা প্রজেক্ট ও গবেষণা অনুদান প্রদান, ভাইস চ্যান্সেলর’স এ্যাওয়ার্ড, দেশব্যাপী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ নানান সৃজনশীল কাজে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার অধিভুক্ত কলেজ, কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মাঝে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এছাড়া এ আপদকালীন সময়ে স্নাতক সম্মান প্রোগ্রাম চালু রয়েছে এমন প্রতিটি কলেজে একটি করে ডিজিটাল স্টুডিও তৈরি করে দেবার অঙ্গীকার করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কথাগুলো প্রাসঙ্গিক। তাই আলোচনা করলাম।
শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু অন-লাইন ভিডিও লেকচার প্রদান করলেই হবে না। তারা যেনো সেগুলো বার বার ভালো করে দেখে-শুনে-বুঝে পাঠ করে তার চিন্তার প্রসার ঘটাতে পারে এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সুবিধার কথাও চিন্তা করে রেখেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও সরকার ইতোমধ্যে এ দাবি কার্যকরে সাড়া প্রদান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে নামমাত্র মূল্যে সরকার ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সুবিধা প্রদান শুরু করছে।


আফসোস! আমরা শুধু মনে ধরে রাখি আনুষ্ঠানিকতার অংশটুকু। যেটুকু আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয় সেটুকু ঘিরেই সীমাবদ্ধ থাকে আমাদের চিন্তা-ভাবনা। অথচ একবারও কি আমরা ভেবে দেখি যে, শ্রেণীকক্ষে পড়াতে অভ্যস্ত একজন শিক্ষক সহসাই অন-লাইনে ভিডিও লেকচার প্রদানে কতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন? কত শত বাঁধা তাকে মোকাবেলা করতে হয়? আমরা কেউ তা মনেও করিনা। নানান রকমের প্রযুক্তি সীমাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করে এই করোনাকালীন জীবন বাজি রেখে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একজন শিক্ষক যে ভিডিও লেকচারটি তৈরি ও উপস্থাপনা করছেন তার সেই লেকচারটি তৈরির পিছনে কি পরিমাণ শ্রম, মেধা এবং সময় ব্যয় করতে হয়েছে আমরা কি কখনো তা উপলব্ধিতে নিই? প্যাডাগোজী তৈরি কালে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। কতটা সহজবোধ্য করে ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীটিকে বুঝানো যায় সে চেষ্টায় তাকে সজাগ থাকতে হয় সর্বদা। কখনো কখনো আবার নিজের ছোট্ট থাকার ঘরটিকে বানিয়ে ফেলতে হয়েছে পুরো স্টুডিও। লেকচারটি ফুটিয়ে তোলার প্রয়াসে তাকে জোগাড় করতে হয়েছে ল্যাপটপ, কিনতে হয়েছে ব্যান্ডউইথ, শব্দ ভালো শোনাতে সংগ্রহ করতে হয়েছে উন্নতমানের মাইক্রোফোন, শিখতে হয়েছে অন-লাইনে লেকচার প্রদানের প্রটোকল, ভালো করে কব্জা করতে হয়েছে জুম কিংবা গুগল ক্লাস সফটওয়্যারটির নানা খুঁটিনাটি বিষয়। চূড়ান্ত রেকর্ডিং এর পূর্বে নিতে হয়েছে একাধিক বার প্রস্তুতি। কখনো কখনো হয়তো ভিডিও রেকর্ডিং এর কাজে সহায়তা নিতে হয়েছে হোম-কোয়ারেন্টিনে থাকা ক্ষুদে আইসিটি মাস্টার হিসেবে খ্যাত পরিবারের আদরের সন্তানটির। মোদ্দা কথা, অন-লাইনে প্রতিটি লেকচারের ভিডিও ধারণের পূর্বে একজন শিক্ষকের যে পরিমাণ আবেগ অনুভূতি ও অভিব্যক্তির উদয় হয় তার মূল্য অনেক। আমরা যেনো শিক্ষকের সেই পবিত্র আবেগকে মূল্য দিই। সময় নিয়ে তাদের আবেগমিশ্রিত এই লেকচারগুলো যেনো অনুসরন করি। উল্লেখ করতে চাই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সাত বছরের সেশন জট দূর করতে বর্তমান প্রশাসন ২০১৫ সালে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিল এবং ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে শতভাগ সেশন জট দূর করতে সমর্থ হয়েছিল। করোনাকালীন এই ১৭ হাজার ৫ শত ভিডিও লেকচার যেন সেই ক্রাশ প্রোগ্রামেরই ডিজিটাল ভার্সন। এটিই পারে সেশনজটের মতো ভয়াবহ অভিশাপ থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে। খুলে দিতে পারে উচ্চ-শিক্ষায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার।


লেখক: প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল
ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
Email: [email protected]


বিবার্তা/জহির


>>এনইউ অন-লাইন ক্লাসঃ উচ্চ-শিক্ষায় নতুন সম্ভাবনা (দ্বিতীয় পর্ব)


>>মৌলিক অধিকারে সমতা কতদূরে? (প্রথম পর্ব)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com