এবার গরুর দুধে পাওয়া গেছে বার্ড ফ্লু ভাইরাস
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:০২
এবার গরুর দুধে পাওয়া গেছে বার্ড ফ্লু ভাইরাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গরুর পাস্তুরিত দুধে বার্ড ফ্লু ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষক দল। একটি গবেষণার সময় নমুনা হিসেবে নেয়া গরুর দুধে ভাইরাসের অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে তারা। এতে এই ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে মানবদেহে ঝুঁকির মাত্রা খুব সামান্য।


যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এপির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।


মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গবাদিপশুর মধ্যে হাইলি প্যাথোজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইপিএআই) বা বার্ড ফ্লু ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসার মধ্য দিয়ে একজন মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তার উপসর্গগুলো মৃদু।


এইচপিএআই-এর এইচ৫এন১ ধরনে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ হাঁস-মুরগি মারা গেলেও আক্রান্ত গরুকে গুরুতর অসুস্থ হতে দেখা যায়নি।


যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন বলেছে, জাতীয় জরিপের সময় তারা আক্রান্ত প্রাণির দুধে ভাইরাস শনাক্ত করেছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এবং প্রক্রিয়াকরণের শেষেও এমন অবস্থা দেখা গেছে।


পাস্তুরিত দুধের নমুনাগুলো নিয়ে একটি কিউপিসিআর পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাস্তুরিতকরণ প্রক্রিয়ার সময় উত্তাপে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। নমুনায় প্যাথোজেনের জেনেটিক উপাদানের অবশিষ্টাংশ শনাক্ত হয়েছে শুধু।


প্যারিসভিত্তিক পাস্তুর ইনস্টিটিউটের পরিবেশ ও সংক্রমণ ঝুঁকি বিভাগের পরিচালক জঁ ক্লদ মানুগুয়েরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন এইচ৫এন১ ভাইরাস স্থানীয় ভাইরাসের সঙ্গে মিশে গেছে এবং তাতে এ ভাইরাসের দ্রুত গতিতে গাভির বাঁট আক্রান্ত করার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।


এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়ালে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই।


ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লিয়ন হাসপাতালের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ব্রুনো লিনা বলেন, গরুর দুধে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি খুব উদ্বেগের নয়। যদিও অন্য কোনো প্রাণীর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ভালো খবর নয়। প্রাণী ও মানুষের নিয়মিত আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। তবে চার-মাস আগের তুলনায় বড় ধরনের মহামারি ঝুঁকি তৈরির মতো বড় ধরনের কোনো মিউটেশন আমরা ভাইরাসটিতে দেখছি না।


এপ্রিলের শুরুর দিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, টেক্সাসের একটি ডেইরি ফার্মে কর্মরত এক ব্যক্তি গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসার পর বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেরে উঠছেন। তার সামান্য উপসর্গ ছিল। একটি গরুর সরাসরি সংস্পর্শে আসার পর তার একটি চোখে সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল।


ফ্রান্সের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ব্রুনো লিনা বলেন, আমরা জানি এ ভাইরাস মানবদেহের সুনির্দিষ্ট দুটি জায়গায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তা হলো চোখে হালকা ধরনের সংক্রমণ এবং ফুসফুসের গভীরতম অংশ পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ। আক্রান্তদের মধ্য যাদের পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ হয়, তাদের অবস্থা গুরুতর হতে দেখা গেছে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ২০ বছরে এইচ৫এন১ ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৯০০ এর মধ্যে যাদের পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ হয়েছে, তাদের অর্ধেকই মারা গেছেন।


জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থাটি বলছে, এইচ৫এন১ বার্ড ফ্লু ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণীর কাঁচা দুধের মধ্যে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। তবে দুধের মধ্যে ভাইরাসটি কতক্ষণ সক্রিয় থাকে তা জানা যায়নি।


১৯৯৬ সালে বার্ড ফ্লু ভাইরাস প্রথম দেখা দেয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোটি কোটি মুরগি মারা গেছে। গত মাসে আমেরিকায় গরু ও ছাগলের মধ্যেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। দেশটির ছয় রাজ্যে ১৩টি গরুর পালে বার্ড ফ্লু পাওয়া যায়।


মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, শুরুতে টেক্সাস ও নিউ মেক্সিকো রাজ্যের ফার্মগুলো থেকে গরুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ওই সব ফার্মে কিছু মৃত পাখিও পাওয়া যায়।


এই মাসের শুরুতে টেক্সাসে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়া এক ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠে। এই ব্যক্তি একটি ডেইরি ফার্ম থেকে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হন।


এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রোগ্রামের প্রধান ওয়েনকিং ঝাং বলেন, টেক্সাসে একটি গরু থেকে প্রথমবারের মতো কোনো মানুষ বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হলো। পাখি থেকে গরু, গরু থেকে গরু এবং গরু থেকে পাখির মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ থেকে বোঝা যায় যে, ভাইরাসটির বিষয়ে আমরা আগে যা বুঝেছিলাম তার থেকে ভিন্নভাবে সংক্রমিত হচ্ছে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত প্রাণীর দুধের মধ্যে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাস্তুরিত দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যসহ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।


তবে পাস্তুরিত দুধে এ ভাইরাস কণার উপস্থিতি পাওয়া গেলেও এ দুধ পান করার কারণে ঝুঁকির মাত্রা প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞ লিনা বলেন, পাস্তুরিত করা হলে ভাইরাসটির উপস্থিতিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব না হলেও এটি ধ্বংস হয়ে যায়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com