শান্তির পক্ষে থাকার শপথ ভেঙে যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির ঘোষণা জাপানের
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৯:৫৫
শান্তির পক্ষে থাকার শপথ ভেঙে যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির ঘোষণা জাপানের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যেকোন ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকর উপায় হিসেবে যুদ্ধ বা সহিংসতার বিরোধিতা করে আসছে জাপান। তবে সস্প্রতি সেই শান্তিবাদী নীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় এশিয়ার এই দেশটি। ইতোমধ্যে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াতে শুরু করেছে টোকিও। এবার নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না জাপান। রীতিমতো সারা বিশ্বে বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে মারণাস্ত্র রফতানির উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছে।


তাদের ঐতিহ্যবাহী শান্তিবাদী নীতি থেকে সরে আসার সবশেষ পদক্ষেপ হিসেবে জাপানের মন্ত্রিসভা যুক্তরাজ্য এবং ইতালির সঙ্গে নির্মিতব্য নতুন যুদ্ধবিমান রফতানির অনুমোদন দিয়েছে।


মন্ত্রিসভা অস্ত্র রফতানির নিয়মনীতি সহজ করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে জাপান যে দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছে এবং যেখানে কোনো চলমান সংঘাত নেই সেসব দেশের কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমতি দেয়া যায়।


জাপান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিটি যুদ্ধবিমান রপ্তানির জন্য মন্ত্রিসভার আলাদা অনুমোদন লাগবে।


আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির কথা উল্লেখ করে জাপান ২০২৭ সালের মধ্যে সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে।


২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাপান একটি যুক্তরাজ্য-ইতালি সহযোগিতা প্রকল্পে যোগ দেয়, যাকে বলা হয় ‘টেম্পেস্ট’। যৌথ উদ্যোগের এই নতুন যুদ্ধবিমানে পাইলটদের সহায়তা করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উন্নত সেন্সর ব্যবহার করা হবে।


২০৩৫ সালের মধ্যে জেটগুলো প্রস্তুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এটিই হবে পশ্চিমের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে টোকিওর প্রথম প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উন্নয়ন অংশীদারত্ব।


জাপানের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিমান রপ্তানির এই প্রস্তাব পাসের পদক্ষেপটি এমন সময় এলো, যেখানে আগামী এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার। এই সফরে তিনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে টোকিওর জোট এবং প্রতিরক্ষা অংশীদারত্বে আরও সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য তাঁর দেশের প্রস্তুতির ওপর জোর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।


এর আগে প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বলেছিলেন, ভবিষ্যতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশীদার হিসেবে টোকিওর বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে তৃতীয় দেশে যুদ্ধবিমান রপ্তানির অনুমতি দেওয়া ‘প্রয়োজনীয়’।


জাপান সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনাটি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে, আমাদের দেশের প্রতিরক্ষার সঙ্গে আপস করা হবে না।


তবে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মিনোরু কিহারা স্পষ্ট করে বলেছেন, জাপান এখনো যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘কঠোর প্রক্রিয়ার’ মধ্য দিয়ে ‘একটি শান্তিবাদী জাতির মৌলিক দর্শন’-এর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার পর মার্কিন-অধিকৃত জাপানকে একটি শর্ত মেনে সেটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করা হয় যে, দেশটি আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যুদ্ধ এবং সমরশক্তির ব্যবহার পরিহার করবে। জাপানের সংবিধান আনুষ্ঠানিক সামরিক বাহিনীকে স্বীকৃতি দেয় না। সামরিক শক্তিকে আত্মরক্ষার ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।


জাপানের সংবিধানে অস্ত্র রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাও ছিল। তবে ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অধীনে প্রথমবারের মতো সেই বিধান শিথিল করা হয়।


২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাপান বিদেশি লাইসেন্সের অধীনে তৈরি করা মারণাস্ত্র বিক্রির অনুমতি দেয়ার জন্য বিধিবিধানগুলো আরো শিথিল করেছে। এতে লাইসেন্সধারী দেশে অস্ত্র রফতানির অনুমতি দেয়া হয়।


এই বিধির শিথিল টোকিওর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার পথ প্রশস্ত করে। প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা সবচেয়ে উন্নত অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com