
দেরি করে ঘুম থেকে উঠছেন, সকালে খাচ্ছেন না, রাতভর জাগছেন। এতে কী কী ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো ধারণা আছে কী?
অনেকের অভ্যাস সকালে কিছু না খাওয়া, অনেক বাচ্চারা আছে কিছু না খেয়েই স্কুলে চলে যায়, আবার অনেকে আছেন কাজবাজ সেরে দেরি করে সকালের নাস্তা খান। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তাটা মন দিয়ে সারা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্যের খাতিরে কখনই সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রাতরাশ থেকেই প্রথমে শক্তি সরবরাহ হয় মস্তিষ্কে। রাত দশটায় পর খাবার খেলে এবং তা যদি অত্যধিক ক্যালোরিযুক্ত হয় তাহলে অবশ্যই পরদিন সকালে ভালো করে সকালের নাস্তা করুন।
কিন্তু আমাদের দেশের সকলের অভ্যাসই হচ্ছে রাতের খাবারের পর সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সব কাজকর্ম সেরে তারপরই খাওয়া। আর এতেই ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি।
এবার দেখে নিন সকালের সকালের নাস্তা দেরিতে সারলে কি ক্ষতি হয়-
সকালের নাস্তা দেরিতে করে খাওয়ার ফলে রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ রকম দেরি করে খাওয়ায় হরমোনের তারতম্য হয়। প্রেসার জাঁকিয়ে বসে শরীরে। এ থেকে মস্তিষ্কে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন রোগও। গ্যাসট্রিক ডেকে আনে দেরিতে সকালের খাবার খেলে।
বুদ্ধি কমে যায়
সকালের নাস্তা না করলে শরীরে গ্লকোজ লেভেল কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্র কমে যাওয়ার কারণে ব্রেনে পুষ্টির ঘাটতি হতে শুরু করে। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধির ধারও কমতে শুরু করে।
রাগ বাড়তে থাকে
লক্ষ করে দেখবেন যখন পেটে ক্ষিদের আগুন জ্বলতে থাকে, তখন মন মেজাজও কেমন বিগড়ে যায়। তাই তো সকাল সকাল খাবার না খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে মন মেজাজও খারাপ হতে শুরু করে। ফলে কোনো কিছুতেই মন বসতে চায় না। সম্প্রতি ব্রিটেনের একটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে সকালের নাস্তা করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা মনকে একেবারে চাঙ্গা করে তোলে।
হজম ক্ষমতা কমে যায়
খাবার হল জ্বালানি, যাকে কাজে লাগিয়ে শরীর সচল থাকে। সেই কারণেই তো সকাল বেলা কিছু না খেলে শরীরের কাছে নির্দেশ যায় কম কম কাজ করার জন্য। সে সময় হজম কম হতে থাকে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে
সকালে কিছু না খেয়েই যারা দিন শুরু করুন, খুব অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের নানা সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে গ্লকোজ টলারেন্স বেড়ে যায়, যা এক সময়ে গিয়ে ইনসুলিন রেজিটেন্স হওয়ার পথকে প্রশস্ত করে করে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ওজন বৃদ্ধি পায়
অনেকেই ভাবেন কম খেলে ওজন কমে। এই ধরণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। বরং যত কম খাবেন, তত বেশি বেশি করে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। কেন এমনটা হয় জানেন? সকালের নাস্তা না করার কারণে লাঞ্চের সময় আসতে আসতে এতটাই ক্ষিদে পেয়ে যায় যে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হতে হতে এক সময়ে গিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
সারা দিন প্রাণবন্ত ও সুস্থ থাকতে সকালের নাস্তা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্যকর এবং ভারী নাস্তা খেলে মস্তিষ্ক পুরোদিনের জন্য তৈরি হয়ে যায় এবং সারাদিন শক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু সব ভারী খাবারই যে স্বাস্থ্যকর এমনটা কিন্তু নয়।
সকালের নাস্তায় যে ভুলগুলো করবেন না
সকালের নাস্তা নিয়ে যে সাধারন ভুল আমরা করে বসি তা এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সকালে জুস নয়
সকালে উঠে ব্লেন্ডারে ফলের জুস তৈরি করতে যাচ্ছেন? গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে জুসের পরিবর্তে ফল খান এবং সঙ্গে এক গ্লাস পানি। জুস তৈরি করলে ফলের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার নষ্ট হয়ে যায়।
সকালে পরিমাণমতো নাস্তা খান
সকালে একেবারে কম খেয়ে সারাদিন যা খুশি তাই খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। অনেকে ধারণা করেন, দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার পর যা খুশি তাই খেলে ওজন বাড়ে না। কিন্তু গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে সকালের পরিমাণ মতো নাস্তা খাওয়ার।
সকালের চা এক কাপ
সকালে এক কাপ চা বা কফি পান করলে আপনার মেজাজ ভালো থাকবে। কিন্তু সকালে উঠে একাধিক কাপ চা কফি পানের অভ্যাস তৈরি হলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে আবার শরীরে তার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
সকালে বার্গার-স্যান্ডউইচ নয়
চকলেট, প্যানকেক, বার্গার, স্যান্ডউইচের মতো উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার সকালের নাস্তায় এড়িয়ে চলুন। উচ্চ ক্যালরির খাবারের পরিবর্তে শসা, ফল, বাদাম প্রভৃতি খেতে পারেন।
সকালের নাস্তা গুরুত্বহীন ভাবা ঠিক নয়
অনেকেই সকালের নাস্তাকে গুরুত্ব দেন না যা আসলে ঠিক নয়। রাতে খাবার ঠিকমতো খেলেও সকালের নাস্তা গুরুত্বপূর্ণ। সকালের কাজে বের হওয়ার তাড়া থাকলেও সকালের নাস্তা সেরে বের হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সকালে ঠিকমতো নাস্তা না হলে সারাদিন আলস্য ভর করতে পারে।
সকালের নাস্তায় ডিম ভাজা
সকালবেলা চিনিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার চেয়ে ডিমভাজি খাওয়ার পরামর্শ দেন গবেষকেরা। ভাজা ডিমে ট্রাইপটোফ্যান নামের এক ধরনের বিশেষ যৌগের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন গবেষকেরা যা মস্তিষ্কে ভালো অনুভূতির জন্ম দেয়। কলা ও বাদামেও এই যৌগটি রয়েছে। তাই সকালের নাস্তায় এই উপাদানগুলোযুক্ত হলে সারাদিন ভালো কাটতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে ১৬ ঘন্টার বেশি কখনই গ্যাপ দেয়া উচিত নয়। তাই ব্রেকফাস্ট কখনই বাদ দেয়া যাবে না এবং দেরিও করা যাবে না।
সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার কখনই কিছু বাদ দেয়া উচিত নয়। তবে ভালো করে যদি নাস্তা করেন তাহলে লাঞ্চের উপর চাপ অনেকটাই কমে।
বিবার্তা/শারমিন/শাহনাজ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]