
গাজায় চলমান সংঘাতে একটি নতুন মোড় এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।
এই চুক্তি ২০২৩ সালের সাত অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া দুই বছরের সংঘাতের প্রথম বড় ধরনের উত্তেজনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, হামাসের হাই প্রোফাইল ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তির দাবি নিয়ে আলোচনায় জটিলতা রয়েছে। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকাল থেকে মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রাথমিক প্রবেশ মসৃণ হয়েছে।
চুক্তির আওতায় প্রতিদিন শত শত ট্রাক প্রবেশের কথা রয়েছে, যা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এটি গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলায় সহায়ক, যেখানে বাস্তুচ্যুতি এবং সরবরাহের ঘাটতি তীব্র। ইসরাইলের আংশিক সেনা প্রত্যাহার এই ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে, ত্রাণ সংস্থাগুলো অবিস্ফোরিত গোলাবারুদের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, হামাসকে সোমবার (১৩ অক্টোবর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার (বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটা) মধ্যে ইসরাইলি ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত এবং বাকিরা মৃত।
হামাসের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, যদি ইসরাইল তাদের দাবি করা সাত জন হাই প্রোফাইল ফিলিস্তিনি বন্দীর মধ্যে অন্তত দুজনকে মুক্তি দেয়, তবে তারা আজ রোববারই জিম্মিদের হস্তান্তর শুরু করতে পারে, যা নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে।
এদিকে এএফপির এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, সোমবার সকাল থেকে মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার সন্ধ্যায় বলেছেন, ইসরাইল সমস্ত জিম্মিকে অবিলম্বে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জিম্মি সমন্বয়ক গাল হিরশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পেতাহ তিকভার রাবিন মেডিক্যাল সেন্টারসহ হাসপাতালগুলো চিকিৎসা ও লজিস্টিক সহায়তার জন্য প্রস্তুত।
তবে হামাস মরদেহ ফেরত দেওয়াকে ‘জটিল’ বলে বর্ণনা করেছে। এর জন্য তারা মরদেহের অবস্থান নির্ধারণে অসুবিধা এবং পূর্ববর্তী ইসরাইলি হামলার জন্য দায়ি করেছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই সমস্যা মূলত প্রাথমিক অপহরণের কারণে।
ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া বন্দী আছেন। যাদের বেশিরভাগই হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং এক হাজার ৭২২ জন গাজার বাসিন্দা। যারা ২০২৩ সালের সাত অক্টোবরের পর গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৪ জন শিশু রয়েছে।
ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষ শনিবার থেকে ওফার এবং কেতজিওত জেলে বন্দীদের স্থানান্তর শুরু করেছে। বিচার মন্ত্রণালয় শুক্রবার তালিকা প্রকাশ করলেও তাতে হামাসের দাবি করা মারওয়ান বারঘুতি বা আহমেদ সাদাতের মতো নাম নেই।
আইডিএফ পরিবারগুলোকে উৎসব না করার জন্য সতর্ক করেছে। ফিলিস্তিনি বন্দী কল্যাণ কমিশনের প্রধান রায়েদ আবু আল-হুম্মুস বিবিসিকে বলেছেন, তালিকায় কিছু বন্দীর সাজা যাবজ্জীবন নয়, বরং ৩-৬ মাসের প্রশাসনিক আটক। এটি হামাসের জন্য চুক্তির মূল্য কমিয়ে দিতে পারে।
জিম্মি হস্তান্তরের পর বন্দী মুক্তি শুরু হবে, তবে নির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষণা হয়নি।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিশরের শারম এল-শেখে, ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সহসভাপতিত্বে ২০টির বেশি দেশের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে ইসরাইল ও হামাস অনুপস্থিত থাকলেও ইরানের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, বৈঠকে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ চূড়ান্ত করা, দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী শান্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, ইসরাইলে পূর্ণ প্রত্যাহার এবং গাজার পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হবে।
এই যুদ্ধবিরতি ২০২৩ সালের পর তৃতীয় বড় বিরতি, যা তেল আবিব ও গাজায় উৎসবের সৃষ্টি করেছে। তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং পুনর্গঠন নিয়ে সংশয় রয়েছে।
একজন গাজার বাসিন্দা সিবিএস নিউজকে বলেছেন, এখানে তাঁবুও পাওয়া যায় না। সোমবারের সম্মেলন এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]