বাকৃবিতে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৩০
বাকৃবিতে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত
বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

'সুস্থ শহরের জন্য সুস্থ মাটি' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পালিত হলো বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২৫।


বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে দিবসটি পালনের শুরুতে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে । র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আব্দুল জব্বার মোড় হয়ে কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।


সেমিনারে বক্তারা নগর ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাটির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং মাটির সুরক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।


তিনি তার মূল প্রবন্ধে বলেন, পৃথিবীর প্রায় ৩৩ শতাংশ মাটি ইতোমধ্যে তার স্বাভাবিক উর্বরতা, গুণমান বা উৎপাদনশীল ক্ষমতা হারিয়েছে। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ শহর বা নগরে বাস করে। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৩ হাজার ২৩৪ জন মানুষ বাস করছে, এবং শহুরে জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নগরায়নের ফলে পরিবেশের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যার মধ্যে রয়েছে সবুজ স্থান ও জলাভূমির ব্যাপক হ্রাস।


তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাস্তা ও দালান নির্মাণের কারণে মাটির পৃষ্ঠ সীল হয়ে যাওয়ায় জলবদ্ধতা ও বন্যা দেখা দিচ্ছে। শিল্প-কারখানার নির্গমন ও ধূলিকণার ফলে বায়ু দূষণ বাড়ছে এবং ভারী ধাতু দূষণের কারণে সামগ্রিক বাস্তুসংস্থানিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শহুরে মাটিকে পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করার মাধ্যমেই বন্যা, দূষণ, হিট স্ট্রেস এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে টেকসই প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।


সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ড. আবু জোফার মো. মোসলেহ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থী।


এসময় কৃষি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম আহমাদ বলেন, এক চামচ মাটিতে যত ক্ষুদ্রজীব থাকে, তা বিশ্বের মোট মানুষের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায়। আমাদের খাদ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ উপাদানই আসে মাটি থেকে। তাই মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারলে বর্তমান শস্য উৎপাদন কমপক্ষে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।


তিনি আরও জানান, শহরাঞ্চলে উচ্চ ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণের ফলে মাটির ওপর সংকট তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে সয়েল সিলিং, যার কারণে মাটির প্রাকৃতিক কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। এসব পরিবর্তনের ফলেই পরিবেশের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মাটির প্রতি গুরুত্ব বাড়াতে হবে। যথাযথ পরিকল্পনা ও সবুজায়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি শহরকে একটি গ্রীনার শহরে রূপান্তর করা সম্ভব।


অনুষ্ঠানে বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ড. আবু জোফার মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, মাটি সভ্যতার অংশ। মাটি হচ্ছে জীবন। মাটিকে টিকিয়ে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রত নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মাটি আজ হুমকির মধ্যে পড়েছে। মাটিকে দীর্ঘমেয়াদী করার প্রচেষ্টা হিসেবে সারা বিশ্ব দিবসটি পালন করে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে সুস্থ শহরের জন্য সুস্থ মাটি। বাংলাদেশে যে নগরায়ন হচ্ছে, যে বিল্ডিং হচ্ছে এখানে একটি অংশ যেন মাটি থাকে। এটা যদি আমরা না করি তবে আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব হুমকিতে পরবে।


বিবার্তা/আমান/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com